পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব বাড়ছে। ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে শুরুতে বিএনপির মধ্যে যে আবেগ-উচ্ছ্বাস ছিল তা এখন আর নেই। শুধু তাই নয়, ঐক্যফ্রন্টের বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর মুখে এখন বিরূপ মন্তব্যও শোনা যায়। ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর বিএনপির যে সব গুরুত্বপূর্ণ নেতা বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকতেন তারা এখন আর যাচ্ছে না। দলের কম গুরুত্বপূর্ণ কাউকে পাঠিয়ে শুধুমাত্র ফ্রন্টের কর্মসূচিতে দলটি হাজিরা দিচ্ছে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের ভূমিকা নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রশাসনের সহায়তায় আগের দিন রাতেই ব্যালটে সিল মেরে বাক্র ভর্তি করা হলেও এ বিষয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেননি ড. কামাল হোসেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এমনটি মনে করেন। তবে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী মনে করেন কামাল হোসেন ইচ্ছা করেই ভোট ডাকাতির এমন বড় একটি ইস্যুতে জোরালো আন্দোলন গড়ে উঠুক এটা তিনি চাননি। নির্বাচনের পর পর নানান তালবাহানা করে তিনি এ ইস্যুটি নিয়ে রাজপথে যাননি। আর এ সুযোগে সরকার এত বড় জঘন্যতম একটি জালিয়াতির নির্বাচন করেও নিজেদের অবস্থান অনেকটাই স্থিতিশীল করে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, বিএনপি চেয়ারপার্সনের মুক্তির বিষয়েও ড. কামাল হোসেন কোন কথা বলছেন না। বিভিন্ন আলোচনা সভায় কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধুর কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেললেও জিয়াউর রহমানের কথা একটি বারও বলেন না। এমনকি খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা তিনি উচ্চারণ করেন না। এ বিষয়ে পাশে বসে থাকা কেউ তাকে মনে করিয়ে দিলে ড. কামাল তখন বলেন হ্যাঁ এ বিষয়ে তো আমরা সকলে একমত। তার মুক্তি তো আমরা সবাই চাই। ড. কামালের এমন দায়সারা গোছের বক্তব্যে বিএনপির নেতাকর্মীদের মনে ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম দিচ্ছে। সম্প্রতি ঐক্যফ্রন্টের এক বৈঠক শেষে ঘোষণা করা হলো ড. কামালের নেতৃত্বে ফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা অসুস্থ খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করবেন। সে অনুযায়ী তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করে অনুমতিও আদায় করেন। কিন্তু দু’একদিন পরে জানা গেল ড. কামাল হোসেন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন না। তিনি তার চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাবেন। এটি বিএনপির নেতাকর্মীদের খুব আহত এবং ক্ষুব্ধ করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির এক সভাপতি বলেন, ড. কামাল হোসেন সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে আগ্রহী নন তার কর্মকান্ডে এমনটি এখন মনে হচ্ছে। বিএনপির সাথে একটি ঐক্যের নাটক করে ভিতরে ভিতরে তিনি সরকারকে স্থিতিশীল হতে সহায়তা করছেন। ড. কামাল হোসেন তো এর আগে বিভিন্ন সরকারের নানা কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে অনেক মামলা করেছেন। তাহলে এবার সরকার এত বড় একটি জালিয়াতি করলো, আগের দিন রাতে ভোট ডাকাতি করলো যা ইতিহাসে বিরল, কই এ নিয়ে তো তিনি কোন মামলা করলেন না। প্রথম প্রথম অনেক তোড়জোড় দেখিয়ে পরে ধীরে ধীরে তিনি চুপ হয়ে গেলেন। আসলে ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে কতটুকু অগ্রসর হওয়া যাবে এ বিষয়ে বিএনপির এখনো ভাল করে ভাবা উচিত।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অর্থাৎ ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে নির্বাচনী জোট ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ গঠন করে বিএনপি। কিছুদিনের মধ্যেই সে জোটে যোগ দেন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম। এ ছাড়াও এ জোটে যোগ দেয় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এবং বিকল্প ধারার একাংশ।
নির্বাচন সামনে রেখে গঠিত এই জোটের কাজকর্ম যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য ‘স্টিয়ারিং কমিটি’ ও ‘লিয়াজোঁ কমিটি’ নামে দুটি কমিটি তখন গঠন করা হয়। স্টিয়ারিং কমিটিতে প্রতিটি দলের তিনজন শীর্ষ নেতা এবং লিয়াজোঁ কমিটিতে প্রতিটি দলের চারজন মধ্যম সারির নেতা অন্তর্ভুক্ত হন। স্টিয়ারিং কমিটিতে বিএনপির তিন প্রতিনিধি ছিলেন- দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। আর লিয়াজোঁ কমিটিতে ছিলেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, মো. শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী এবং হাবিবুর রহমান হাবিব। এছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঢাকা মহানগরের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আবদুস সালাম।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যাত্রার শুরুতে বিএনপির এই আট শীর্ষ নেতা জোটের গুরুত্বপ‚র্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। রাজধানীর বিজয়নগরের কালভার্ড রোডে প্রিতম-জামান টাওয়ারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থাপনের আগে বেইলি রোডে ড. কামাল হোসেনের বাসা, মতিঝিল চেম্বার, উত্তরায় আ স ম আবদুর রব ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার বাসায় অনুষ্ঠিত জোটের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকগুলোতে নিয়মিত যেতেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
আর কালভার্ড রোডে ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থাপনের পর সেখানে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভা, সংবাদ সম্মেলন, যৌথসভাসহ জোটের সবধরনের অনুষ্ঠানে লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য বরকত উল্লা বুলু, মো. শাহজাহান, মনিরুল হক চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবিব এবং সমন্বয় কমিটির প্রধান আবদুস সালামকে নিয়মিত দেখা যেত। মাঝে মাঝে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু এবং যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালও যেতেন সেখানে।
বিএনপির দলীয় সূত্রমতে, এসব শীর্ষ নেতার মধ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া কেউ আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রয়োজনীয়তা উপলব্দি করেন না। জোটের কোনো অনুষ্ঠানে তাদের দেখা যায় না। এর মধ্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সকল কর্মকান্ড থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন।
তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া যে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন তার আলোকে বৃহত্তর ঐক্যের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ জন্য তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। শুধু তাই নয় দলের অন্যদেরও সম্পৃক্ত রাখার চেষ্টা করছেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে জোটের স্টিয়ারিং কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেন। কিন্তু কিছু দিন পর তারাও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কর্মকান্ড থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন। তাই এখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মিটিংয়ে দলের যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে বিএনপির প্রতিনিধি হিসেবে পাঠানো হয়। আর মহাসচিবের অনুরোধে এই মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করছেন দলটির স্থায়ী কমিটির নতুন সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো খবর জানি না। সুতরাং ফ্রন্ট নিয়ে কোনো বক্তব্য আমি দিতে পরব না।
গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিষয়টি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেখছেন। এ ফ্রন্টের ব্যাপারে আমার কিছু বলার নাই।
বরকত উল্লা বুলু বলেন, আমি এখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যাই না। বিএনপির প্রতিনিধি হিসেবে কে যায়, তাও জানি না। মহাসচিব যাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, সে হয়তো যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।