পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ভারত কুশিয়ারা নদী খননের সঙ্গে ফেনী নদীর পানি ভাগাভাগির শর্ত জুড়ে দিয়েছে বলে গতকাল দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শর্তে রাজী না হওয়ায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বাধার মুখে আটকে আছে সিলেটের আপার সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের কাজ। দীর্ঘ পনের বছরেও এই প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। এর আগে ভারত ফেনী নদীর পানির সাথে তিস্তা নদীর পানি ভাগাভাগিকে শর্ত হিসেবে জুড়ে দিয়েছিল। ওই সময় তিস্তার পানি ভাগাভাগি চুক্তির বিনিময়ে ভারত ত্রিপুরা রাজ্যের জন্য ফেনী নদী থেকে প্রায় দুই কিউসেক পানি চায়। বাংলাদেশ ভারতের এমন প্রস্তাবে সম্মতি দেয়ার পরও তিস্তা চুক্তি আটকে দেয় ভারত। যৌথ নদী কমিশন সূত্রের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়েছে, ভারতের পানি আগ্রাসনের অংশ হিসেবে ফেনী নদীর পানির বিষয়টি এবার কুশিয়ারার সাথে জুড়ে দেয়া হলো। এদিকে বিএসএফের বাধার কারণে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রতিবছরই আপার সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের কাজের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। সেই সাথে বাড়ছে প্রকল্পের ব্যয়। দেশের পানি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারত চাতুরির মাধ্যমে কুশিয়ারা নদী খনন প্রকল্প আটকে দিয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে কুশিয়ারা নদীতে ভাঙন প্রতিরোধ কাজ করতে না পারায় প্রতিবছরই এই নদী ভাঙছে। এতে মূল্যবান ভূমি হারাচ্ছে বাংলাদেশ।
নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের সাথে সুসম্পর্ক থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। বাস্তবতা এ সম্পর্কটি কেবল একতরফা সম্পর্কে পর্যবসিত হয়েছে। ভারত তার সব রকম দাবি আদায় করে নিলেও বাংলাদেশ তার ন্যায্য দাবির কোনটিই আজ পর্যন্ত আদায় করতে পারেনি। অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে ভারতের আচরণ স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, তা মানবাধিকার লংঘনের পর্যায়ে চলে গেছে। ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশে এক প্রকার মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়ে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনে নোনা পানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের নদ-নদী, খাল-বিল মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে। ভূ-উপরিস্থ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে উজান থেকে বর্ষায় বাড়তি পানি ছেড়ে দেবার কারণে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিচ্ছে। ভারতের এই একতরফা পানি নীতির কারণে বাংলাদেশ আজ কঠিন সমস্যার মুখোমুখি। দু’দেশের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা করেও তিস্তা চুক্তি করা যায়নি। এখন পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতীয় বাধা বা প্রতিবন্ধকতার কারণে বিকল্প গঙ্গাবাঁধও তৈরি করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে বাংলাদেশের সাথে কোন কথাবার্তা না বলেই ভারত একতরফাভাবে তাদের দেশে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ভারত তার সবকিছু বুঝে নিয়ে আমাদের ন্যায্য প্রাপ্যগুলোর ব্যাপারে চুপ করে বসে আছে। এ ব্যাপারে তার কোনোই আগ্রহ ও সদিচ্ছা নেই। আলোচ্য কুশিয়ারার ক্ষেত্রেও অনুরূপ মানসিকতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ট্রানজিট সুবিধা থেকে শুরু করে যত সুবিধা ভারত চেয়েছে তার সবই সরকার দিয়ে দিয়েছে। বিনিময়ে জাতীয় স্বার্থের বিবেচনায় কোনো কিছুই আনতে পারেনি। এটি সত্যিই অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত। একথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না, পানি পাবার জন্য প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হতে হলেও তা হতে হবে। ভারতের সাথে যৌথ নদীর পানির ন্যায্যহিস্যা আদায়ের ব্যর্থতায় বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। প্রাকৃতিক পরিবেশ, ভূমি গঠন থেকে শুরু করে মানুষের জীবনধারায় নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটতে পারে। তাই পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে সর্বনাশের শামিল। আমরা আশা করব, সরকার দেশের এ পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে তিস্তাচুক্তিসহ অভিন্ন নদ-নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নেবে। এক্ষেত্র কোনো ধরনের টালবাহানা ও কালক্ষেপণ গ্রহণযোগ্য হবে না। সুরমা ও কুশিয়ারা প্রকল্পের কাজে ভারতের বাধা দেয়ার বিষয়টি কোনোভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারের উচিত ভারতের অযাচিত বাধা দূরীকরণে উদ্যোগ নেয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।