নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্পোর্টস ডেস্ক : এবারের কোপা আমেরিকায় স্বাগতিক দর্শকদের প্রত্যাশা শতভাগ পূর্ণ হলো গতকালই। ম্যাচের শুরু থেকেই এদিন লিওনেল মেসিকে পেয়ে তেমন উচ্ছাসই দেখালেন তারা। ম্যাচময় আলো ছড়িয়েছেন ফুটবল জাদুকর। চিরচেনা সেই রক্ষণ চেরা পাস দিয়ে গোল করালেন, নিজে গোল করে ছুঁলেন রেকর্ড। সর্বপরি ভেনিজুয়েলাকে ৪-১ গোলে হারিয়ে প্রত্যাশামত সেমি-ফাইনালেও পৌঁছে গেল তার দল আর্জেন্টিনা। জোড়া গোল করেন গঞ্জালো হিগুয়েন, অন্যটি এরিক লামেলা। শুধু স্কোর বোর্ড দেখেই যদি ভাবেন দলের স্ট্রাইকারাই ম্যাচের নায়ক, তাহলে ভুল করবেন। নিশ্চিত কয়েককটি গোল বাঁচিয়ে ম্যাচের আসল নায়ক আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরো। পুরো টুর্নামেন্টে যে নামটি গ্যালারি থেকে স্বাগতিক দর্শকরা সবচেয়ে বেশিবার উচ্চারণ করেছে সেই মেসিই শেষ চারে তাদের প্রতিপক্ষ।
কোয়ার্টার ফাইনালের দিনের অপর ম্যাচটি হয়েছে আরো একতরফা। এখানেও লাতিনদের প্রতাপ। টানা ২২ ম্যাচ অপরাজিত থাকা মেক্সিকোকে ৭-০ গোলের লজ্জা উপহার দিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন চিলি। কোপায় তো বটেই বিশ্বকাপেও এমন ব্যবধানে এর আগে কখনো হারেনি তারা।
এরপরও ফুটবল প্রেমীদের বিশেষ নজয় ছিল ফক্সবারোর জিলেট স্টেডিয়ামের দিকে। বেসবল, রাগবির দেশে ফুটবলকে যারা সকার নামে চেনে তারা গ্যালারিতে এতদিন ভিড় জমিয়েছেন তো বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়কে চর্ম-চোখে দেখার জন্যে। গতকাল প্রথমবারের মত তাকে একাদশে পেয়ে দর্শকদের উল্লাসও ছিল বাধভাঙা। ৫ বারের বর্ষসেরা হতাশ করেননি তাদের। প্রথম ছোঁয়াতেই তার সেই চিরচেনা ড্রিবলিংয়ে কয়েকজন ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে ক্রস করেছিলেন, তবে তা সহজেই বিপদ মুক্ত করেন ভেনিজুয়েলা গোলরক্ষক। এরপর আলো ছড়িয়েছেন ম্যাচময়।
ডাগ আউটে বসেও কি কারিশমা কম দেখাচ্ছেন কোচ জেরার্ডো মার্টিনো। আগের ম্যাচের জয়ের অন্যতম নায়ক এজেকুয়েল লাভেজ্জিকে তো এদিন মাঠেই নামালেন না, ছিলেন সেদিন দলে সুযোগ না পাওয়া হিগুইন। একাদশে ফিরেই নাপোলি তারকা কোচের আস্থার প্রতিদান দিলেন মাত্র ৮ মিনিটে। মেসির ডিফেন্স চেরা ভাসানো পাস থেকে এক শৈল্পিক টোকায় বল পাঠিয়ে দেন জালে। প্রথমার্ধে করা দলের দ্বিতীয় গোলটিতে অবশ্য তার একক অবদান। গোলটি প্রতিপক্ষের চোখের সামনে থেকে চুরি করে করা বললেও ভুল হবে না। রক্ষণের দেয়া-নেওয়ার মধ্যে হঠাৎ বলের দখল নেন হিগুইন। এরপর গোল রক্ষকে কাটিয়ে আর্জেন্টিনার হয়ে ২৯তম গোলটি করেন আয়েশি ভঙ্গিমায়। ঠিক এর পরেই আর্জেন্টিনা শিবিরে নেমে আসে দশ মিনিটের ছোট্ট অথচ ভয়ঙ্কর ঝড়। আর সেটাকে চীনের প্রাচীরের মত দৃড়তার সাথে প্রতিরোধ করেন গোলরক্ষক রোমেরো। হাভিয়ের মাচেরানোর ভুলে বিপজ্জনক জায়গায় বল চলে যায় প্রতিপক্ষের দখলে। ডি বক্সের ঠিক বাইরে থেকে রনদোনের শট নিশ্চিত গোল হওয়া থেকে ডান দিকে ঝাপিয়ে পড়ে ঠেকান রোমেরো। মিনিট চারে পর আবারো গোলবঞ্চিত হন রনদোন। কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে হেড করে রোমেরোকে পরাস্থ করলেও বল পোস্টে বাধা পেয়ে ফিরে আসে। দু’মিনট বাদে ফ্রাঙ্ক মার্টিনেজের শট আরেক খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে দিক পাল্টে জালে ঢুকছিল, কিন্তু লাফিয়ে উঠে বল ঠেলে ক্রসবারের উপর দিয়ে পাঠিয়ে দেন রোমেরো। এরও দুই মিনিট পর রোমেরোরই ভুলে পেনাল্টির খাড়ায় পড়ে আর্জেন্টিনা। নায়ক যখন খলনায়ক হওয়ার অপেক্ষায়, তখনই তিনি দেখা দিলেন সেরা ভূমিকায়। লুইস সেইহাসের পানেনকা শট জাগায় দাঁড়িয়েই কোলে টেনে নেন ম্যানচেস্টার গোলকিপার।
দ্বিতীয়ার্ধের ১৫ মিনিটে আসে মেসির সেই রেকর্ড ছোঁয়া গোল। নিকোলাস গাইতানের সাথে ওয়ান টু ওয়ান পাসে খেলে সহজেই বল জালে পাঠান বার্সেলোনা তারকা। এই গোল দিয়েই তিনি ছুয়ে ফেলেন গ্যাব্রিয়েল বাতিস্ততাকে। ৫৪ গোল নিয়ে এতদিন আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন ‘বাতিগোল’ খ্যাত বাতিস্তুতা। আসর শুরুর আগে তার চেয়ে ৪ গোলে পিছিয়ে ছিলেন ফুটবল জাদুকর। পানামার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করার পর গতকাল বসলেন ‘গাবিগোলের’ পাশে। দুজনেরই গোল সংখ্যা এখন ৫৪। মেসিকে অবশ্য এতকিছু তেমনটা স্পর্শ করে না। দিনশেষে নিজেকে বিজয়ী দেখেই তিনি খুশি, “এতে আমি খুশি এবং ‘বাতিগোলের’ পাশে বসতে পারাটা দারুণ, কিন্তু আমার কাছে ম্যাচের ফলটাই আসল।”
৭০তম মিনিটে আবারো রনদোনের হেডার বারে লাগে, তবে এবার তা আর ফিরে আসেনি। গড়িয়ে ঠিকই ঢুকে পড়ে আর্জেন্টিনার জালে। আর্জেন্টিনা সমর্থকদের এই গোল হজম হওয়ার আগেই মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মাথায় ব্যবধান ৪-১ গোড়ে দেন বদলি খেলোয়াড় এরিক লামেলা, বলের যোগানদাতা মেসি। এ নিয়ে আসরের চার ম্যাচে ১৪টি গোল করল আর্জেন্টিনা। এ থেকেই বোঝা যায় জাতীয় দলের হয়ে শিরোপা বন্ধাত্ব ঘোচাতে কতটা মরিয়া মেসিরা-হিগুইনরা। এজন্য এখনো দুটি বাধা পেরুতে হবে আকাশী নীলদের।
মার্টিনো অবশ্য এই জয় নিয়ে এখন ভাবছেন না। তার ভাবনায় এখন শুধুই সেমি-ফাইনাল, “এখন আমাদের যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচের (বুধবার) দিকে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন এবং তাদেরকে কোন সুযোগ না দেওয়ার চেস্টা করব।” অপরদিকে হারের পরও খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে খুশি ভেনিজুয়েলা কোচ দুদামেল। এছাড়া আর্জেন্টিনাকেও প্রশংসায় ভাসিয়ে তিনি বলেন,“যোগ্য দল হিসেবে বিশ্বের সেরা দলের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিলাম আমরা। এমন দলের বিপক্ষে ভুল করা পাপ। এটা করলে তারা ক্ষমা করবে না এবং তা মেনে নিতে হবে।”
সান্তা ক্লারায় দিনের আরেক ম্যাচটি ছিল ভার্গাসময়। ১৩ মিনিটে হ্যাটট্রিক করার পর ৭০তম মিনিটে ব্যক্তিগত চতুর্থ গোল করেন এডুয়ার্ডো ভার্গাস। এক ম্যাচেই ছুঁয়ে ফেললেন আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা মেসিকে। গোল চারটি মায়ের নামে উৎসর্গ করেন ভার্গাস। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন,“এই ণৈপুণ্যে আমি খুশি। এই ম্যাচটা আমি আমার মা ও পরিবারকে উৎসর্গ করছি।” এছাড়া জোড়া গোল করেন এডসন পুচে, গোলউ-উৎসবে যোগ দেন অলিক্সিস সানচেজও। লজ্জাজনক এই হারের পর ভক্তদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন মেক্সিকো কোচ হুয়ান কার্লোস ওসোরিও,“আমি গোটা দলের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইছি। আজ মাঠে যা হলো, তা রীতিমত লজ্জার।” শেষ চারে চিলির প্রতিপক্ষ কলম্বিয়া।
আর্জেন্টিনা ৪ : ১ ভেনিজুয়েলা
চিলি ৭ : ০ মেক্সিকো
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।