পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
অর্থনীতিসংশ্লিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক এবং কিছু ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এক দশকের মধ্যে এবারই ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষেত্রে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ডুয়িং বিজনেস প্রতিবেদন অনুযায়ী, এতে ৮ ধাপ অগ্রগতি হয়েছে আগের তুলনায়। এর অর্থ হলো : ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ ও সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ডুয়িং বিজনেস র্যাংকিং যে ১০টি সূচকের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়, তার অন্তত পাঁচটি সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে। এগুলো হলো : ব্যবসা শুরুর প্রক্রিয়া, ভবন বা অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি, বিদ্যুৎ সংযোগ, ঋণপ্রাপ্তি ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সূরক্ষা। পিছিয়ে থাকা পাঁচ সুচকের মধ্যে কর প্রদান, বৈদেশিক বাণিজ্য ও চুক্তি বাস্তবায়ন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ব্যবসা সহজ হলে বিনিয়োগ বাড়ে। বিনিয়োগ বাড়লে উৎপাদন, রফতানি ও কর্মসংস্থান বাড়ে। অর্থনীতি স্ফিত ও শক্তিশালী হয়। জনজীবনে আর সুফল প্রতিফলিত হয়। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে। অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল অনেক দিন ধরেই বলে আসছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে গভীর আগ্রহ প্রদর্শন করছে। উল্লেখ্য, সম্প্রতিককালে চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, সউদী আরব প্রভৃতি দেশে আরো বিনিয়োগে উদ্যোগী হয়েছে। এটা এই জন্য যে, এখানে সহজে ব্যবসা গড়ে তোলা যায়। এছাড়া বিনিয়োগের নিশ্চিত নিরাপত্তা আছে এবং মুনাফা স্বদেশে নিয়ে যাওয়া যায় সহজে। বাংলাদেশ শতাধিক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছে, যেখানে বিদেশী বিনিয়োগকে বিশেষভাবে স্বাগত জানানো হয়েছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশীদের বিনিয়োগ আগ্রহ বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী প্রায়ই বলেন, দেশের অর্থনীতি ভালোমতোই এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব মন্দায় বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার হলেও বাংলাদেশে মন্দার কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়েনি। এটাও কারো অজানা নেই। চীন-যুক্তরাষ্ট্র, চীন-ভারত বাণিজ্য যুদ্ধে বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে, যদি আমরা প্রাপ্ত সুযোগ কাজে লাগাতে পারি। এছাড়া বিভিন্ন বন্ডে বিনিয়োগ এক্ষেত্রে নতুন অধ্যায় যোজনা করতে পারে।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প আমাদের অর্থনীতিতে বড় রকমের অবদান রাখতে পারে। এতদিন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ওপর যথেষ্ট নজর দেয়া হয়নি। ইদানিং হচ্ছে। এটা আশার কথা। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান গত পরশু এক অনুষ্ঠানে যথার্থই বলেছেন, দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি এও বলেছেন, এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে অনুকূল পরিবেশ জরুরি, যা তৈরির জন্য সরকার কাজ করছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পাদ্যোক্তাদের একই ছাতার নীচে আনার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, এ ব্যাপারে বিসিকে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হবে। দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বিকাশের অনুকূল অবস্থা ও পরিবেশ বিদ্যমান রয়েছে। এখানে জনশিক্তর অভাব নেই, জায়গার ঘাটতি নেই এবং পুঁজি এবং যন্ত্রপাতিও খুব বেশি লাগে না। এখাতের সম্ভবনা কাজে লাগাতে পারলে বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন-রফতানি যেমন বাড়বে তেমনি বিপুল সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান হবে। সরকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে বিরাজমান অন্তরায়গুলো দ্রুত নিরসনের পদক্ষেপ নেবে, সঙ্গতকারণেই আমরা সেটা প্রত্যাশা করি। এধরনের আরো ইতিবাচক দিক ও সম্ভাবনার দিগন্ত অর্থনীতিতে রয়েছে। সেই সঙ্গে কিছু নেতিবাচক দিক বা সংকট এবং আশংকাও প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। একথা সকলেরই জানা, আমাদের অর্থনীতির প্রধান দুটি স্তম্ভ হলো : গার্মেন্ট পণ্য রফতানির আয় এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। এ দুটি ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। গার্মেন্ট কারখানাগুলোর অবস্থা মোটেই ভালো হয়। গত ৭ মাসে ৫৯টি ছোট-মাঝারি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় ২৬ হাজার কর্মী বেকার হয়ে পড়েছে। এ থেকেই বুঝা যায়, গার্মেন্ট শিল্প একটা কঠিন সময় পার করছে। ওদিকে জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাজারে ধস নেমেছে। মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ ও মালয়েশিয়ার বাজার তো অনেকদিন ধরেই সংকোচনের মধ্যে রয়েছে, এখন সউদী আরবসহ নানা দেশ থেকে প্রবাসী কর্মীরা দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছে। এতে ভবিষ্যতে রফতানি ও রেমিট্যান্স আরো কমার আশংকা রয়েছে। সরকার ২ শতাংশ প্রনোদণা দেয়ায় বৈধপথে রেমিট্যান্স বাড়লেও আগামীতে এধারা বহাল থাকবে কিনা, সেটাই প্রশ্ন।
অর্থনীতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হলে নেতিবাচক যেসব দিক লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তা দূর করার পদক্ষেপ নিতে হবে। আর ইতিবাচক দিকগুলো আরো শক্তিশালী করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই গার্মেন্ট পণ্য রফতানি এবং প্রবাসীদের পাঠানো আয় বাড়ানোর দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। গার্মেন্ট শিল্প ও রফতানির যে অবস্থা তা উদ্বেগজনক। শিল্পোর দুরবস্থা রফতানির ওপর বৈরি প্রভাব ফেলে এবং কর্মসংস্থান ও আয় কমায়। কাজেই, শিল্পের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আবশ্যকতা প্রশ্নাতীত। এদিকে সরকার ও বিজিএমইএকে যৌথভাবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যদিকে প্রবাসীদের পাঠানো আয় আরো বাড়াতে হলে রফতানি বাড়াতে এবং বৈধপথে সেই আয় যাতে দেশে আসতে পারে, তার ব্যবস্থা সহজ ও মসৃণ করতে হবে। যেসব দেশে বাংলাদেশী জনশক্তি আমদানি হয় তাদের অধিকাংশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ধর্মীয় ও ঐতিহ্যগত। ওই সব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ও যোগাযোগ আরো ঘনিষ্ঠ করতে হবে। রাজনৈতিক ও আন্তরিক আস্থার সম্পর্ক গড়ে উঠলে বন্ধ ও প্রায়বন্ধ শ্রমবাজারগুলো খুলে যাওয়া খুবই সম্ভব। এদিকে দৃষ্টি দিতে হবে এবং সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা যেভাবে এবং যাকে দিয়ে সম্ভবপর, সেভাবে ও তাকে দিয়েই করতে হবে। আমরা আশা করতে চাই, সরকার জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থেই জনশক্তি রফতানি বাড়ানোর প্রয়োজনীয় কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করবে। উন্নয়নের স্বার্থে এবং জনগণের জীবন-মান বৃদ্ধির তাকিদে অর্থনীতির বিকাশ দ্রুতায়িত করার বিকল্প নেই।
অর্থনীতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হলে নেতিবাচক যেসব দিক লক্ষ করা যাচ্ছে, তা দূর করার পদক্ষেপ নিতে হবে। আর ইতিবাচক দিকগুলো আরো শক্তিশালী করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই গার্মেন্ট পণ্য রফতানি এবং প্রবাসীদের পাঠানো আয় বাড়ানোর দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।