Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিষ্ক্রিয় ২০ দলীয় জোট

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট কার্যত অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। দীর্ঘদিন যাবৎ এ জোটের পক্ষ থেকে ঐক্যবদ্ধ কোন কর্মসূচি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। জোটের শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন যাবৎ কারাবন্দি। তার মুক্তির লক্ষে বিএনপি মানববন্ধন বা হল রুমের ভেতরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করলেও ২০ দলীয় জোটের ঐক্যবদ্ধ কোনো কর্মসূচি ঘোষিত হয়নি। তবে এসব কর্মসূচিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অনেকেই উপস্থিত হয়েছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বেশ কয়েকটি কারণে ২০ দলীয় জোটের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে ২০ দলকে সাইড লাইনে রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন এবং তাকে প্রাধান্য দেয়া। মূলত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মধ্য দিয়ে ২০ দলের সঙ্গে বিএনপির বাঁধন নড়বড়ে হওয়া শুরু হয়। যা প্রকাশ্যে আসে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় জোটের আসন বণ্টন নিয়ে। তখন বিএনপি এই সমস্যা কৌশলে সামাল দিলেও নির্বাচনে ভরাডুবির পর দূরত্ব আরও বাড়তে থাকে। জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) পদত্যাগের মধ্য দিয়ে জোটের অভ্যন্তরীণ সঙ্কট প্রকাশ্যে রূপ নেয়।

জোটের শরিকদের অভিযোগ বিএনপি ঐক্যফ্রন্টকে গুরুত্ব দিয়ে ২০ দলীয় জোটকে ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় করেছে। আর এই অভিমান থেকে বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ জোট ত্যাগ করেছেন। এরপর ২০ জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ গঠন করেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে না অভিযোগ তুলে তিনি ২৭ জুন আলাদা ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’র ঘোষণা দেন। তার মঞ্চে জোটের শরিক জামায়াত, কল্যাণ পার্টি, জাগপাসহ ছোট কয়েকটি দলও যুক্ত হয়। এতে করে ২০ দলীয় জোটের অভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্ব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠে। অনেকের মতে এর মাধ্যমে জোটের ভেতর আরেকটি জোটের তৈরি হলো। অর্থাৎ মুক্তি মঞ্চের মাধ্যমে ২০ দলীয় জোট ভাঙনের প্রাথমিক ক্ষেত্র তৈরি হলো।

বর্তমানে জোটের বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন না শরিক দলের শীর্ষ নেতারা। পাঠাচ্ছেন তৃতীয় ও চতুর্থ সারির নেতাদের। এমনকি জোট ঘোষিত কর্মসূচিতেও তাদের দেখা যাচ্ছে না। সর্বশেষ গত ১৫ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবে জোটের এক অনুষ্ঠানে কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিমসহ শীর্ষ নেতারা ছিলেন অনুপস্থিত। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে জোট আরেক দফা ভাঙনের কবলে পড়বে বলেও আশঙ্কা অনেকের।

জামায়াত ইস্যুতে বিএনপি এখনো কৌশলে অগ্রসর হতে চাচ্ছে। তবে এতে করে ২০ দলীয় জোটের সাথে তাদের দূরত্ব আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঐক্যফ্রন্টকে ঘিরে বিএনপি আরও কিছু বাম ঘরানার রাজনৈতিক দলের সাথে বৃহত্তর জোট গঠন করতে চাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীকে আগের মতই সাইড লাইনে বসিয়ে রেখে বিএনপি অগ্রসর হতে চায়। তবে জামায়াতও তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ২০ দলীয় জোটে সক্রিয় থাকতে চায়। এ জন্য তারা এখন জোটের অন্যতম নেতা অলি আহমদের নেতৃত্বে জাতীয় মুক্তি মঞ্চে সক্রিয় রয়েছে। যেদিন জোটের বৈঠক চলছিল সেদিন বিকালেই জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন অলি আহমদ। সেখানে সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিমসহ জামায়াতের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। জোটের বৈঠকের দিন অলির সংবাদ সম্মেলন নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তোলেন। জোটকে চ্যালেঞ্জ করেই তিনি এসব করছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

এ ব্যাপারে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ২০ দলীয় জোটের ঐক্য অটুট আছে, থাকবে। আমাদের জোটগত আন্দোলন কর্মসূচি খুব শিগগিরই ঘোষণা করা হবে। সে কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে ২০ দলীয় জোট আবার সক্রিয় হবে।
২০ দলের শরিকদের অভিযোগ, জোটের নিষ্ক্রিয়তার জন্য বিএনপিই দায়ী। বিএনপি ২০ দলকে গুরুত্ব না দিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এ কারণে গত নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও ২০ দলকে মেনে নিতে পারছে না। বিশেষ করে ২০ দলের অন্যতম শরিক জামায়াতকে নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের আপত্তি শুরু থেকে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, আমরা ২০ দলে ছিলাম, আছি এবং থাকব। ২০ দলের ভেতর থেকেই জাতীয় মুক্তি মঞ্চের রাজনৈতিক কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাব।



 

Show all comments
  • দীনমজুর কহে ১৯ অক্টোবর, ২০১৯, ৯:৫৪ এএম says : 0
    ডান* বাম* ইসলাম*সেই আদর্শ যদি তাল গোল পাকিয়ে যায় তাহলে শক্তভিত গড়ে উঠেনা।যেমন তেল পানি কখনোই একাকার হয়না।তাই সাচ্ছা জাতীয়তাবাদ, ধর্মনির্পেখখতাবাদ ,সমাজতন্ত্র, গনতন্ত, এবং ইসলামী সমাজ ব্যাবস্থা একাকার হওয়া খুবই দুঃসাদ্য।তাই ২০দলীয় জোটে টানপোড়েন দেখা দিয়েছে।তাই জামাতকে তালাক দিয়ে ঐক্যের ডাকের কথা বলা হচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ