Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতকে মোকাবেলায় প্রস্তুত বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০১৯, ৯:৩২ পিএম

২০২২ কাতার বিশ্বকাপ বাছাইয়ের অ্যাওয়ে ম্যাচে ভারতকে মোকাবেলায় প্রস্তুত বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। দক্ষিণ এশিয়া ফুটবলের পরাশক্তি, ফিফা র‌্যাঙ্কিং ও পরিসংখ্যানে এগিয়ে থাকা ভারতের বিপক্ষে মঙ্গলবার মাঠে নামছে লাল-সবুজরা। কোলকাতার সল্টলেকের বিবেকানন্দ যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু হবে ম্যাচটি। স্টার স্পোর্টস-২ ও বাংলা টিভি খেলা সরাসরি সম্প্রচার করবে।

ভারতের বিপক্ষে খেলার চারদিন আগেই কোলকাতায় গেছেন জামাল ভূঁইয়া, সোহেল রানারা। টানা তিনদিন যুব ভারতীয় ক্রীড়াঙ্গনের দুই নম্বর মাঠে অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ দল। সোমবার সন্ধ্যায় ম্যাচের মূল ভেন্যুতে অনুশীলনে ঘাম ঝড়িয়েছে লাল-সবুজের ফুটবলাররা। এর আগে দুপুরে সল্টলেকের নবোটেল হোটেলে আয়োজিত ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ভারত বধের নানা পরিকল্পনার কথা জানান বাংলাদেশ দলের ব্রিটিশ কোচ জেমি ডে। তবে তিনি জানান, তার দল প্রতিপক্ষ ভারতকে সমীহই করছে। জেমি বলেন,‘ আমি নিশ্চিত এ ম্যাচে ভারতই ফেভারিট। সাম্প্রতিক সময়ে তারা দারুণ ফুটবল খেলছে। কাতারের সঙ্গে ড্র’ই তার প্রমাণ। তাছাড়া নিজেদের মাঠে ৮৫ হাজার দর্শকের সামনে খেলবে ওরা। সবকিছু মিলিয়ে ওদের বিপক্ষে আমরাই আন্ডারডগ।’

তবে ম্যাচটি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভুইয়া। তার কথায়, ‘আমরা নই, খেলায় ওরাই থাকবে চাপে। আর এ সুযোগটাই কাজে লাগাতে চাই আমি।’ জামাল আরো বলেন, ‘ভারতের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রি খুব উঁচু মানের খেলোয়াড়। সে আমাদের জন্য বড়সড় একটা বিপদ। পুরো ভারতীয় দলের রিমোট কন্ট্রোলই সুনিলের হাতে, সঙ্গে উইঙ্গার উদান্ত সিংয়ের গতি ও গোলরক্ষক গুরপ্রিত সিং সাধুর দৃঢ়তা- ম্যাচের ভাগ্য বদলে দিতে পারে। এদের নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’ তিনি যোগ করেন,‘ আমরা নিজেদের সেরাটা খেলবো। বাকিটা আল্লাহ ভরসা। ১৭ কোটি মানুষের দোয়া ও শুভকামনা রয়েছে আমাদের জন্য।’

বাছাইয়ের ‘ই’ গ্রুপে পয়েন্ট টেবিলের তলানীতে রয়েছে এ দুই দেশ। দু’ম্যাচে ভারতের সংগ্রহ এক পয়েন্ট হলেও বাংলাদেশের শূন্য। ওমানের কাছে হারের পর কাতারকে রুখে দিয়ে ভারত পায় এক পয়েন্ট। অন্যদিকে আফগানিস্তানের পর কাতারের কাছেও হারে বাংলাদেশ।

১৯৮৬ সালের ১২ এপ্রিল সল্টলেকে প্রথমবার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ-ভারত। ওই ম্যাচে ভারত ২-১ গোলে জয় পায়। আশীষ কুমার ভদ্র বাংলাদেশের পক্ষে একমাত্র গোলটি করেছিলেন। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ভারতের অবস্থান ১০৪। আর বাংলাদেশ রয়েছে ১৮৭তম স্থানে। র‌্যাঙ্কিংয়ে ৮৩ ধাপ পেছানো বাংলাদেশ পরিসংখ্যানেও অনেক পিছিয়ে রয়েছে। দু’দলের ২৮ বারের মোকাবেলায় বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র দু’ম্যাচে। হেরেছে ১৫ বার, ড্র হয়েছে ১১ ম্যাচ। ১৯৯১ সালে ২৬ ডিসেম্বর কলম্বো সাফ গেমসে বাংলাদেশ ২-১ গোলে ভারতকে প্রথম হারায়। তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশের দুর্ধর্ষ ফরোয়ার্ড রুমি রিজভী করিম একাই দু’গোল দিয়েছিলেন। এক যুগ পর ২০০৩ সালে ১৮ জানুয়ারি ঘরের মাঠে সাফ ফুটবলের সেমিফাইনালে বাংলাদেশ ২-১ গোলে দ্বিতীয় জয়টি পায়। রোকুনুজ্জামান কাঞ্চন ও মতিউর মুন্নার অসাধারণ গোলে ওই ম্যাচে ভারতকে হারায় লাল-সবুজরা। তারপর থেকে ১৬ বছর জয় অধরাই থেকেছে বাংলাদেশের। দু’দলের সর্বশেষ সাক্ষাতে জয় পায়নি কেউ। ২-২ গোলে ড্র হয়। ২০১৪ সালে গোয়ায় বাংলাদেশ-ভারত ওই প্রীতি ম্যাচটি ২-২ ব্যবধানে অমিমাংসিতভাবে শেষ হয়। ভারতের ক্রোয়েশিয়ান কোচ ইগর স্টিমাচ গত মে মাসে দায়িত্ব পান। তার তত্বাবধানে ভারতীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে ছন্দময় ফুটবল উপহার দেয়ার আকাক্সক্ষা লক্ষ্য করা গেছে। স্টিমাচের অধীনে এখন পর্যন্ত সাতটি ম্যাচ খেলেছে ভারত।

বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচকে ঘিরে দু’দেশের ফুটবলপ্রেমীদের মাঝেই এখন টানটান উত্তেজনা। আগের ম্যাচে দোহায় ভারত বিশ্বকাপের আয়োজক কাতার’কে রুখে দিয়ে সমর্থকদের প্রত্যাশা পুরণ করেছে। অন্যদিকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ঘরের মাঠে সেই কাতারের বিপক্ষে অসাধারণ ফুটবল উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ। যদিও তারা ২-০ ব্যবধানে ম্যাচটি হেরে গেছে। তারপরও বলা যায়, গেল প্রায় ১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় দল কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে এতোটা ভালো খেলতে পারেনি, যতটা কাতার ম্যাচে খেলেছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে মঙ্গলবারের ম্যাচটি উপভোগ্য হবে বলে মনে করছেন দু’দেশের ফুটবলবোদ্ধারা।

দীর্ঘ ৩৪ বছর পর যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গণে বাংলাদেশের মুখোমুখি হচ্ছে ভারত। আর ৮ বছর পর কোলকাতার মাঠে খেলছে ভারতীয় জাতীয় দল। স্বাগতিকদের এই ম্যাচ নিয়ে কোলকাতার দর্শকদের প্রত্যাশাও আকাশচুম্বী। ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ৮৫ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গণ কানায় কানায় পরিপূর্ণ থাকবে। স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে উত্তাল জনসমুদ্রের সামনে বাংলাদেশকে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। তারা কি নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারবে? নাকি প্রতিপক্ষের সমর্থকদের চাপে মনোবল হারাবে? এমন প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে লাল-সবুজের ফুটবলভক্তদের মনে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ