নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
হালের ক্যাসিনো স্বর্গরাজ্য খ্যাত মতিঝিল ক্লাব পাড়ার চিত্রটি এরকম- পশ্চিমে ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স, পূর্বে ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আজাদ বয়েজ ক্লাব, ঢাকা জেলা ক্রীড়া সংস্থা, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, দিলকুশা স্পোর্টিং, আজাদ স্পোর্টিং, সোনালী অতীত, ঢাকা মেরিনার ইয়াংস, ওয়ারি এবং ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব। এ ছাড়াও মতিঝিলের বিশাল এই জায়গায় আছে একটি মসজিদ, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে ) ভবন ও তৎসংলগ্ন অ্যাস্ট্রোটার্ফ। পুরো এলাকাটি পরিচিত ক্লাব পাড়া নামে। তবে দেশের খেলাধুলার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র এই ক্লাব পাড়াকে বছরের পর বছর সবাই চিনতেন ‘জুয়া পাড়া’ নামে। সম্প্রতি এই নামকে পেছনে ঠেলে সামনে এসেছে ‘ক্যাসিনো পাড়া’। কলঙ্কের এ নামকরণের জন্য ক্লাবগুলোর দায় কম নয়। কিছু কর্মকর্তার যুগযুগ ধরে অনৈতিক কার্যকলাপেই ক্লাবগুলো হালে খেলার আলোকপথ ছেড়ে জুয়ার অন্ধকার গলিতে ঠাঁই নিয়েছে। এই ক্লাবগুলো এক সময় বর্তমানের বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ও পল্টন ময়দান সংলগ্ন ছিল। তাদেরকে মতিঝিলে স্থানান্তর করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। স্থানান্তরের পর কিন্তু ক্লাবগুলো মানেনি এনএসসি’র শর্ত বা নির্দেশ।
১৯৮৭ সালে এরশাদ সরকারের দায়িত্বকালে এনএসসি’র এক সভায় ক্লাবগুলোকে তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়াম এলাকা ও পল্টন ময়দানের আশপাশ থেকে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরের বছরই পর্যায়ক্রমে ক্লাবগুলোকে স্থানান্তর করা হয় মতিঝিলে। সাবেক প্রেসিডেন্ট মরহুম এইচএম এরশাদ ক্ষমতা ছাড়ার আগের বছর ১৯৮৯ সালে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের নামে মতিঝিলের জায়গাটি স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দিয়েছিলেন। এনএসসি’র তৎকালীন পরিচালক (প্রশাসন) মেজর (অব.) এনামুল হক খান জানান, তৎকালীন সরকারের ইচ্ছে ছিল ১৭টি ক্লাবকে রোকেয়া স্মরণীতে মাঠসহ জায়গা দেয়ার। কিন্তু কিছু ক্লাব সেখানে যেতে আপত্তি জানায়। পরে গুলিস্তানের পাশে ওসমানী উদ্যানেও ক্লাবগুলোকে জায়গা করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এতে আপত্তি জানায় ক’টি ক্লাব। ফলে পরে সিদ্ধান্ত হয়, আরামবাগ এলাকা সংলগ্ন মতিঝিলের ওই জায়গার খাল ভরাট করে সেখানে ক্লাবগুলোকে আলাদা আলাদা করে বরাদ্দ দেয়ার। সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেয় এনএসসি।
কি শর্তে ক্লাবগুলোকে জায়গা দেয়া হয়েছিল? তা এনএসসি’র বর্তমান পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো: শাহ আলম সরদার বলতে না পারলেও বলেছেন সাবেক পরিচালক (প্রশাসন) মেজর (অব.) এনামুল হক খান। তিনি বলেন,‘ক্লাবগুলোকে ৯৯ বছরের জন্য জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে মোহামেডানের জায়গাটা পরে দলিল করে দিয়ে দেয়া হয়। ক্লাবগুলোকে যে সব শর্ত দেয়া হয়েছিল তা সব মনে নেই এখন। তবে যতটুকু মনে আছে তা হলো- শুধুমাত্র খেলাধুলার কার্যক্রম, স্থাপনা টিনসেটের বা সর্বোচ্চ এক তলা দালান করা যাবে। তবে পরে ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবকে দেয়া হয়েছিল দোতলা পর্যন্ত দালান করার অনুমতি। তখন বলা হয়েছিল শর্ত ভঙ্গ করলে এনএসসি বরাদ্দ বাতিলও করতে পারে।’
এনএসসি’র সাবেক পরিচালকের (প্রশাসন) তথ্য অনুযায়ী সরেজমিনে দেখা যায়, মতিঝিল পাড়ার বেশ ক’টি ক্লাবই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের শর্ত বা নির্দেশ মানেনি। দেশের খেলাধুলার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ক্লাবগুলো দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে বছরের পর বছর আর্থিক ফায়দা লুটেছে। কাড়ি কাড়ি টাকা কামিয়েছে। যে টাকা খেলাধুলার উন্নয়নে খরচ করেনি। ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব ছাড়াও এখানকার ঢাকা ওয়ান্ডারার্স, আরামবাগ, দিলকুশা ও ঢাকা মেরিনার ইয়াংস ক্লাবে দ্বিতল ভবন রয়েছে। তবে মেরিনারের দ্বিতল ভবনটি খেলাধুলার কাজে ব্যবহার হলেও বাকিগুলোর নীচ তলায় জুয়ার বোর্ড ও ক্যাসিনো থাকায় ক্লাবের স্বাভাবিক কর্মকান্ড চলেছে দ্বিতীয় তলায়। এগুলোর চেয়ে অনেক অনেক কয়েক ধাপ এগিয়ে যেতে চেয়েছিল মোহামেডান। বেশ কিছুদিন আগে মোহামেডান কর্তৃপক্ষ বহুতল মাল্টি কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য ৫০তলা মাল্টি কমপ্লেক্স নির্মাণের। কিন্তু ক্যাসিনো ইস্যুতে ক্লাবটির ডাইরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়া সম্প্রতি র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ায় তাদের সেই পরিকল্পনা এখন দু:স্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
এদিকে খেলাধুলার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যে ক্লাবগুলোকে মতিঝিলে জায়গা বরাদ্দ দিয়েছিল এনএসসি সেগুলোর ৬টি ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ায় ক্রীড়াঙ্গনের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে বলে উল্লেখ করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো: জাহিদ আহসান রাসেল, এমপি। ক্লাবগুলো এতোদিন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে না থাকলেও এখন সেগুলোকে তার মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন রাসেল। সম্প্রতি একটি সাংবাদিক সংস্থার অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক বছর ধরেই ক্লাবগুলোতে নৈরাজ্য চলে আসছে। ক্লাবগুলোয় ক্যাসিনো বাণিজ্য হওয়ায় দেশের খেলাধুলার ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। এর দায়ভার আমরা নিতে পারি না। নিতে হলে এই ক্লাবগুলোকে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।