পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারত ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেয়া ও উজান থেকে নেমে আসা বানের পানিতে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বন্যার কবলে পড়েছে বাংলাদেশের দেশের ১০ জেলা। পদ্মা, মহানন্দা, গড়াই, মধুমতিসহ বিভিন্ন নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাস বলছে, বন্যা পরিস্থিতির শিগগিরই উন্নতির সম্ভাবনা নেই। গঙ্গা ও পদ্মা অববাহিকার পানি প্রতিদিনই বাড়ছে। এরই মধ্যে ওই দুটি অববাহিকার পাঁচটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে গেছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর ৯৩টি পয়েন্টের মধ্যে ৩৮টি পয়েন্টেই পানি বাড়ছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে চলতি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।
বন্যার কারণে তিন দিন ধরে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পাবনা, মাগুরা, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মুন্সীগঞ্জ ও কুষ্টিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে রাজবাড়ী, নাটোর ও ফরিদপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।
বন্যাকবলিত এলাকায় শীতকালীন আগাম সবজি ও আমনের ফসল ডুবে গেছে। সব কিছু হারিয়ে কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। কয়েক লাখ মানুষ ইতোমধ্যে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বসতবাড়িতে পানি ওঠায় অনেকে গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে উঁচু স্থানে ঠাঁই নিয়েছে। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে এ প্রতিবেদন :
পাবনা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, পাবনায় ফুঁসে উঠা পদ্মা নদীর স্রোতের তোর কমেনি। পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। নদীর পানি হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যাচ্ছে। গতকাল পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কে.এম জহুরুল হক ইনকিলাবকে জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, সন্ধ্যার দিকে ২/১ সেন্টিমিটার পানি কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্র মতে, পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে ইতোমধ্যে ঈশ্বরদী বাঁধের বাইরে চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পদ্মায় পানি বাড়ার কারণে পাবনায় আত্রাই, চিকনাই, বড়াল, হুরা সাগর, মরা পদ্মায় বানের পানি প্রবেশে করেছে। ভারত ফারাক্কা ব্যারেজর ১০৯টি গেট খুলে দিয়েছে। পাবনা পানি উন্নয়র বোর্ডের সূত্র মতে, বিগত জুন মাস থেকেই ভারত ফারাক্কা ও শিলগুড়ি দিয়ে ঘুরিয়ে নেওয়া তিস্তা ব্যারেজের বাংলাদেশমুখী গেট খুলে দেয়। ঐ সময় ফারাক্কার ৫০টি গেট খোলা থাকে। উজানে ঢল নামলে সব গুলো গেট খুলে দেয়া হয়। এই অবস্থা নতুন নয়। প্রতি বর্ষা মওসুমেই করা হয়। আর শুষ্ক মওসুমে গেট বন্ধ থাকে, পদ্মা ও এর ৫৩টি শাখা-প্রশাখা নদী শুকিয়ে যায়। ফলে পানির টান পড়ে। সেচ কার্য মৎস্য উৎপাদন ব্যাহত হয়। মাঝি-মাল্লারা বেকার হয়ে পড়েন।
গতকাল শুক্রবার বানের পানিতে আরও ৮টি গ্রাম নতুনভাবে প্লাবিত হয়েছে। এই নিয়ে জেলায় ১০৮টি গ্রাম প্লাবিত হলো। জেলার চরাঞ্চলের মানুষজনের দু:খ-দুর্দশা বেশি বেড়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট তীব্র হচ্ছে। দূরবর্তী উচুঁ এলাকার হস্তচালিত নলক‚প থেকে খাবার পানি আনতে হচ্ছে। ১৫৮ কিলোমিটার মুজিব বাঁধের কারণে জেলা শহর ও উপজেলা বন্যা কবলিত না হলেও বাঁধের বাইরের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানি পেরিয়ে চরের মানুষজন শহরে ঠিক মতো কাজে আসতে পারছেন না, আবার এলেও অভ্যন্তরীণ প্রবল বৃষ্টির কারণে কাজহীন ফিরে যেতে হচ্ছে। পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, বন্যা দুর্যোগ মোকাবেলায় তারা প্রস্তুত রয়েছেন।
লালপুর (নাটোর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার কারণে নাটোরের লালপুরে বন্যায় ক্ষতির পরিমানও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিলমাড়ীয়া, লালপুর এবং ঈশ্বরদী এই ৩টি ইউনিয়নের পরে নতুন করে দুরদরিয়া ইউনিয়নে বেশ কিছু বাড়ি-ঘরের পাশাপাশি আখ এবং শীতকালীন সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত স্থানীয় কৃষি বিভাগ ৪টি ইউনিয়নের মোট ৪ হাজারের অধিক কৃষককে ক্ষতিগ্রস্থের তালিকায় এনেছে। তবে চর ডুবে যাওয়ার খাদ্য না থাকার কারনে মানুষের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ হচ্ছে গবাদি পশুর।
এদিকে, সরকারিভাবে ১ হাজার ২’শ পরিবারের মাঝে ১৮মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে লালপুর সদর ও ঈশ্বরদী ইউনিয়নে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ৫ শতাধিক পরিবারকে ১৫ কেজি করে ত্রাণের চাউল দেওয়া হয়।
লালপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে বন্যার কারনে চারটি ইউনিয়নে আগাম ১ হাজার ৩০৮ হেক্টর শীতকালীন সবজি ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া এই চারটি ইউনিয়নে মোট ৩ হাজার ৫৩৮হেক্টর আখ থাকলেও এর মধ্যে ১ হাজার ৪০ হেক্টর আখ তলিয়ে গেছে। লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত কয়েক দিনের বন্যার পানিতে কৃষিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ ৪ হাজার ১৬৪ জন কৃষককে চিহ্নিত করেছি। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। আমরা অধিদপ্তরে প্রতিনিয়ত রিপোর্ট প্রদান করছি। সরকার থেকে কোন বরাদ্দ পাওয়া গেলে তখন কৃষকদের সহযোগিতা করা হবে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।