পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হঠাৎ করে ফারাক্কার সবকটি গেট খুলে দেয়ায় ভাটির দেশ বাংলাদেশে পদ্মা ও তার শাখা নদীতে পানি বাড়ছেই। ইতোমধ্যে কয়েকটি নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। আবার কোথাও কোথাও ছুঁই ছুঁই করছে সীমা রেখা। ১৬ বছর পর পাবনার পাকশী হার্ডিঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করে সাত সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুষ্টিয়ায় পদ্মার পানি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধ্বসে পড়েছে ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাঁধ। ফলে হুমকিতে রয়েছে শিলাইদহের কুঠিবাড়ী। পদ্মার অব্যাহত তান্ডবে ভাঙনের মুখে দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরিঘাট একিসাথে বিঘ্ন হচ্ছে ফেরি চলাচল। অসময়ের এমন বন্যায় সীমাহীন দূর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। নতুন করে বোনা ফসলী জমি এখন পানির নিচে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সঙ্কট। কয়েকটি জায়গায় ত্রাণ বিতরণ করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় একদমই অপ্রতুল। আমাদের সংবাদদাতা রেজাউল করিম রাজু, মুরশাদ সুবহানী, মো. নজরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম ভূইয়া, এস এম আলী আহসান পান্না, মো. মাহফুজুল আলমের পাঠানো প্রতিবেদনে বন্যার ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে :
রাজশাহী : রাজশাহীর বড়কুঠি পয়েন্টে গতকাল সন্ধ্যায় পানির উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ১৮ মিটার। সকাল ছয়টায় ১৮ দশমিক ১৪ মিটার, দুপুর বারোটায় ১৮ দশমিক ১৭ মিটার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক এনামুল হক বলেন, ফারক্কার গেট খুলে দেয়ায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় পানি বাড়ছে।
ইতোমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হতে পাবনা পর্যন্ত নদী তীরবর্তী এলাকা বন্যা কবলিত হয়েছে। ভারত থেকে আসা পানি প্রথমে আঘাত হানছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাংখা পয়েন্টে। মহানন্দার পানি বেড়েছে। যদিও নদী দুটি বিপদসীমার ত্রিশ ও ২৭ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার দশ ইউনিয়নের পঞ্চাশ হাজার মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছে। সাত হাজার হেক্টরের বেশী জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশী ভাঙন চলছে চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নে।
রাজশাহীর আরো নতুন এলাকা নতুন করে ডুবেছে। গতকাল জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যে, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হচ্ছে বাঘা, পবা, ও গোদাগাড়ী। এছাড়াও নগরীর পদ্মা তীরবর্তী এলাকায় পানি উঠেছে। সব মিলিয়ে প্রায় কুড়ি হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। রাজশাহী জেলা প্রশাসন চরাঞ্চলের ছয়শো পরিবারকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে। পানি বন্দী এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে এপারের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাখা হয়েছে। গবাদি পশুর ঠাঁই হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্টো দিকে বেতার স¤প্রচার কেন্দ্রের মাঠে। পদ্মায় পানি বাড়ায় হুমকীর মুখে পড়েছে শহর রক্ষার মূলগ্রোয়েন টি বাঁধে। সেখানে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে রক্ষা চেষ্টা চলছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন প্রকৌশলী বলেন, পদ্মায় পানি বাড়লেও আতঙ্কেরর কিছু নেই। তাদের ভাষ্য কয়েকদিন ধরে গঙ্গা ও পদ্মা অববাহিকায় অতিবৃষ্টির কারনে পানি বাড়ছে। ফলে ভারতের উত্তরপ্রদেশ ও বিহার রাজ্যে বন্যা দেখা দিয়েছে। সেই পানি এপারে আসছে। ফারাক্কার সবকটি গেট খুলে দেয়ার ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, নদীর পানি বাড়ছে বৃষ্টিতে। ফারাক্কার বাঁধের কারণে নয়। এদিকে পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় রাজশাহী মহানগরীর তেরটি সুইসগেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
পাবনা : জেলার সদর, ঈশ্বরদী ও সুজানগর উপজেলার নদীক‚লবর্তী অনেক গ্রাম তলিয়ে গেছে। কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। পনিবন্দী দিন কাটাচ্ছেন চরাঞ্চলের ২০ গ্রামের মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম জহুরুল হকে মতে, এই পানি বৃদ্ধি সাময়িক অল্প সময়ের মধ্যে কমে যাবে। তিনি আরও বলেন ,পাবনা জেলা ১৫৪৮ কিলোমিটার এলাকা মুজিব বাঁধ দিয়ে পরিবেষ্টিত। ফলে জেলার অভ্যন্তরে বন্যার পানি প্রবেশ করার কোনো সুযোগ নেই। বাঁধের বাইরে বসবাসকারী চরাঞ্চলে পানি প্রবেশ করছে। পদ্মা নদী পানি বৃদ্ধি পেলে এই নদীর শাখা প্রশাখা নদীতেও পানি বৃদ্ধি পেয়ে পায়।
পাবনার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন জানান, আকস্মিক বন্যায় সদর উপজেলার দোগাছি, ভাঁড়ারা, চরতারাপুর ও হেমায়েতপুর ইউনিয়নের ৬৯২ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ১ হাজার পরিবারের মানুষ। অব্যাহত থাকলে আরও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। চরকোমরপুর বন্যায় তলিয়ে গেছে ধান, মাসকলাই, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজের ক্ষেত। কৃষকরা কাঁচা ধান কেটে নিয়ে আসছেন।
পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজনকে ত্রাণ সহযোগিতার প্রস্তুতি প্রশাসনের রয়েছে।
রাজবাড়ী : গত ৫ দিনে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ঢল্লাপাড়া, ১ নং বেপারী পাড়া, জলিল মন্ডলের পাড়া এবং দেবোগ্রাম ইউনিয়নের কাওলজানি গ্রামের কয়েকশ’ বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া ভাঙনের শিকার হয়ে প্রায় ৩০০ পরিবারের ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছে প্রায় ২০০ পরিবার। তাছাড়া ওই এলাকার প্রায় ৫০০ পরিবার ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। এ ছাড়া দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের লঞ্চঘাট ও ফেরিঘাটসহ এর সংলগ্ন প্রায় ৩ শতাধিক বসতবাড়ি, একটি মসজিদসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট সংলগ্ন ঢল্লাপাড়া, ১নং বেপারী পাড়া, হাতেম মেম্বর পাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্থদের আহাজারিতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক পরিবার তাদের দীর্ঘদিনের ঠিকানা থেকে সহায় সম্বল গুটিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। কৃষকরা বলেন, ভাঙন শুরু হওয়ার গত কয়েক দিনে প্রায় ৫০০ বিঘা ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া ভাঙনের শিকার হয়ে কয়েকশ’ বসতবাড়ী নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
অন্যদিকে দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরি ঘাটের উজানে দেবগ্রামের কাওলজানি এলাকার ভাঙন দেখে ঘাট এলাকার স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবায়েত হায়াত শিপলু বলেন, ভাঙন অব্যাহত থাকলে দৌলতদিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাট হুমকির মুখে পড়বে।
গত সোমবার বিকেলে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন শেষে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী বলেন, এভাবে ভাঙতে থাকলে দৌলতদিয়া ফেরি ও লঞ্চ ঘাট রক্ষা করা মুশকিল হয়ে পড়বে। তাই অন্তত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যাতায়াত ঠিক রাখতে জরুরী ভিত্তিতে ফেরি ও লঞ্চ ঘাট রক্ষা করতে জরুরীভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আরিচা : দ্রুত পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোতের কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি-লঞ্চ চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএর সহকারি পরিচালক ফরিদুল আলম জানান, গত কয়েকদিনে অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। স্রোতের বিপরীতে চলতে গিয়ে উজাতে না পারায় গত মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত তিন ঘন্টা লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
বিআইডব্লিউটিএ অফিস সূত্রে জানা যায়, পদ্মার পানি দৌলতদিয়া পয়েন্টে গতকাল বৃহম্পতিবার বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আরো কয়েকদিন পানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। এছাড়া, উপজেলার চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকায় পদ্মা-যমুনার তীব্র ভাঙনে বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ জনপদ বিলীন হচ্ছে ।
বিআইডব্লিউটিসির এজিএম জিল্লুর রহমান জানান, বহরের চলমান ১৬টি ফেরির মধ্যে ২/১টি সবসময়ে মেরামতে থাকে। ফলে ১২/১৩টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হয়। ফেরিগুলো পুরনো হওয়ায় কয়েকটি ফেরি তীব্র স্রোতের বিপরীতে চলতে অক্ষম। অপরদিকে, পদ্মার ভাটিতে আরো দুটি ফেরিঘাট পয়েন্টে স্রোতসহ নানাবিধ কারণে ফেরি চলাচলে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
কুষ্টিয়া : গত ১২ ঘণ্টায় এ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে আরও দুই সেন্টিমিটার, যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। এদিকে গতকাল সকালে কুষ্টিয়ার কয়া ইউনিয়নের কালোয়া গ্রামে শিলাইদহের রবীন্দ্র কুঠিবাড়ী রক্ষা বাঁধের ৩০ মিটার ধসে গেছে। সকাল ৯টায় কয়া ইউনিয়নের কালোয়া অংশে হঠাৎ করে বাঁধে ভাঙন শুরু হয়। মুহূর্তেই বাঁধের ৩০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়।
এ সময় বাঁধের ওপর বসবাসরত কয়েকশ পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন।
দৌলতপুর : রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী এ দুই ইউনিয়ন এখন পুরো পানিবন্দী হওয়ার পাশাপাশি প্লাবিত হয়ে পড়েছে। যেদিকে তাকানো যায় শুধু পানি আর পানি। কৃষকের স্বপ্নের অর্থকরী ফসল মাসকলাই বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পর এবার বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে বন্যাকবলিত অসহায় মানুষকে সীমাহীন দূর্ভোগে ফেলেছে। পানি ও খাবারে সংকট দেখা দিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।