পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর মহারাজা ভারতে যোগ দিলেন শর্তসাপেক্ষে। ভারতীয় সেনাবাহিনী শ্রীনগরে পৌঁছল পরের দিন। উপজাতীয় লোকেরা পিছু হটল। পাকিস্তান পাঠালো সৈন্যবাহিনী। বরামুলা পর্যন্ত ভারত ফের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হলো। মুজাফফারাবাদ রইল পাকিস্তানের অধীনে। যুদ্ধ চলল ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বর মাস নাগাদ। তারপর যুদ্ধবন্ধের চুক্তি (Cease fire) হলো ১৯৪৯ সালের জানুয়ারিতে।
ভারতের অধীনেই রইল সিংহভাগ অংশ। কিন্তু, মহারাজা আর শাসনের কেন্দ্রে থাকতে পারলেন না। শেখ আবদুল্লাহকে বানানো হলো রাজ্যের ডিফ্যাক্টো রুলার। মহারাজা হলেন গভর্নর (সদর-এ রিয়াসাত)। এরপর শুরু হলো শেখ আবদুল্লাহর সঙ্গে মহারাজার দেন-দরবার। শেখ আবদুল্লাহর নেতৃত্বে জনগণের আন্দোলনের মূল দাবি ছিল, মহারাজার শোষণের বিরুদ্ধে একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক শাসন। মহারাজার শোষণ শেষ হলো, কিন্তু, ‘স্বাধীনতা’র সুযোগ হলো না রাজ্যটির। পৃথিবীর ‘বৃহত্তম গণতান্ত্রিক’ দেশের ‘বিশেষ’ অংশ হলো জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর। এই বিশেষত্ব নির্ধারণের জন্য বহু দেনদরবার, দর-কষাকষি হয়েছে। ভারতীয় সংবিধানে আর্টিকেল-৩৭০ যুক্ত করে তাতে জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা দেয়া হলো। ভারতীয় সংবিধানের শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে।
The Constitution applies to the State of Jamma and Kasmir with cartain exceptions and modifications as praided in atrticle 370 and the Constitutions (Application to Jammu and Kashmir) Order, 1954.
রাজ্যসভাকে ‘সদর-এ-রিয়াসাত’ বা গভর্নর নিয়োগের ক্ষমতা দেয়া হলো। অন্যান্য রাজ্যের ক্ষেত্রে যার নিয়োগ হয় ভারতের রাষ্ট্রপতির হাতে। জম্মু-কাশ্মীরকে দেয়া হলো আলাদা পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত। একারণেই, ভারতীয় পার্লামেন্টে গৃহিত সকল আইন উল্লেখ থাকে, ‘এই আইনটি জম্মু ও কাশ্মীরে প্রযোজ্য নয়, যতক্ষণ এটি সেখানকার রাজ্যসভায় পাশ না হয়।’ ভারতীয় তিন রঙা পতাকার পরই শোভা পেতে শুরু করল রাজ্যের স্বতন্ত্র পতাকা। ভারতের সংবিধানে এই ধারা যুক্ত করার জন্য আবদুল্লাহ ও নেহরুর মধ্যে দেনদরবার চলেছে দীর্ঘ পাঁচ মাসব্যাপী। ১৯৪৯ সালের ১৫ মে থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত। এরপর সাংবিধানিক এসেম্বলি ১৯৪৯-এর অক্টোবরে এই ধারাটি ভারতীয় সংবিধানে যুক্ত করে।
স্বায়ত্তশাসনের শর্তে ভারতের ওপর, সম্ভবত ব্যক্তি নেহরুর ওপর বিশ্বাস করলেন শেখ আবদুল্লাহ। হলেন প্রধানমন্ত্রী। ভারতের সব রাজ্যের গণতান্ত্রিক প্রধানের নাম মুখ্যমন্ত্রী (সিএম)। কিন্তু জেঅ্যান্ডকের প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী (পিএম)। আলাদা মর্যাদা, আলাদা পোর্টফোলিও নিয়ে তিনি ভারতের সঙ্গে ভালই শুরু করেছিলেন। এই শুরু হয়েছিল ২৪শে জুলাই ১৯৫২ সালের ‘দিল্লি এগ্রিমেন্টের’ মাধ্যমে।
মহারাজার ভারতে যোগদানের শর্ত ছিল বিদেশনীতি, যোগাযোগ ও প্রতিরক্ষা ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্ব। সেই সার্বভৌমত্বের সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নির্ধারিত হলো ‘দিল্লি এগ্রিমেন্টে’। তাতে জেঅ্যান্ডকে ভারতের অংশ হলেও উচ্চমাত্রার স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চয়তা দেয়া হলো। কিন্তু, ব্যাপক স্বায়ত্তশাসনের সেই স্বচ্ছ কাঁচের দেয়াল বছরান্তেই ভেঙে খান খান হয়ে গেল। ৯ আগস্ট ১৯৫৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হলো। তার দল ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) ওই দিনটিকে জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীরের কালো দিবস হিসেবে স্মরণ করে থাকে। দলটির বক্তব্য অনুসারে, ‘জনপ্রিয় সরকারকে অবৈধভাবে ভেঙে দেয় করণ সিং (সদর এ রিয়াসাত)। প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। একটি গভীর রাজনৈতিক চক্রান্ত হিসেবে বকসি গোলাম মোহাম্মদকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বসানো হয়। দিল্লি সরকার আর্টিকেল ৩৭০ বাতিল চেষ্টার বিরোধিতা করার কারণেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এনসির দাবি, ‘বকসিকে পুতুল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বসিয়েই ৩৭০ ধারাকে বাতিলের চক্রান্ত করা হয়।’ বকসি তার প্রথম বক্তব্যেও বলেছিলেন, ‘শেখ সাহেব একটি মুক্ত (ভৎবব) রাষ্ট্র গঠন করতে চান যা তিনি কোনোভাবেই হতে দেবেন না।’ বিএন মল্লিকের বক্তব্যের বরাতে এনসির পক্ষ থেকে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘জওহরলাল নেহরুও শেখ আবদুল্লাহকে গ্রেপ্তারের সমর্থন দিয়েছিলেন, কারণ, তিনি (আবদুল্লাহ) কাশ্মীরিদের দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুসারে তাদের অধিকার ও মর্যাদা ফিরিয়ে আনার জন্য একটি বিদ্রোহের পরিকল্পনা করছিলেন।’ তাদের দাবি, ‘১৯৫২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যেই ৩৭০ ধারাকে শক্তিহীন করা হয়েছে’।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।