Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভুলতে বসা ঐতিহ্যবাহীরাও শিরোনামে!

জাহেদ খোকন | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

দেশের ক্রীড়াঙ্গনে যাদের ভূমিকা অস্বীকার্য সেই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবগুলোর নাম ভুলতে বসেছিলেন ক্রীড়ামোদীরা। তবে দীর্ঘদিন পর হলেও তাদের চোখে ভেসে উঠলো ঐতিহ্যবাহীদের কর্মকাÐ। মাঠের খেলা নয়, টেবিলের খেলা জুয়া ও ক্যাসিনো বাণিজ্যে যখন মতিঝিল ক্লাব পাড়ার ক্রীড়া সংগঠনগুলো ব্যস্ত, ঠিক তখনই তারা খবরের শিরোনাম হয়। আর এতেই দেশের কোটি ক্রীড়াপ্রেমীর ফের স্থান করে নেয় ক্লাবগুলো। তবে সাফল্যের জন্য বাহবা নয়, অনৈতিক কাজের জন্য ক্লাবগুলোকে ধিক্কার দিচ্ছেন খেলাপাগল মানুষরা।

মতিঝিল ক্লাব পাড়ার পশ্চিমে ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব, পূর্বে ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং। মাঝে আজাদ বয়েজ ক্লাব, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, দিলকুশা স্পোর্টিং, আজাদ স্পোর্টিং, সোনালী অতীত, ঢাকা মেরিনার ইয়াংস, ওয়ারি এবং ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব।
মোট ১১টি ক্রীড়া সংগঠন নিয়ে পুরো এলাকাটার পরিচিতি এখন ক্লাব পাড়া। দেশের খেলাধুলার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র এই ক্লাবপাড়াকে এক সময় জুয়াপাড়া বললেও এখন অনেকে বলেন ক্যাসিনোপাড়া। প্রায় দু’সপ্তাহ আগে ক্যাসিনোপাড়া হিসেবেই আখ্যা পায় মতিঝিল ক্লাবপাড়া। কলঙ্কের এ নামকরণের জন্য ক্লাবগুলোই দায়ী। কিছু বিপথগামী কর্মকর্তার অনৈতিক কার্যকলাপেই ক্লাবগুলো খেলার আলোকপথ ছেড়ে আজ জুয়ার অন্ধকার গলিতে।

মুলত খেলাধুলার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যে ক্লাবগুলোকে মতিঝিলে জমি বরাদ্দ দিয়েছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সেগুলোর প্রায় সব কটিতেই এক সময় খেলাধুলার জমজমাট কার্যক্রম চলতো। বিশেষ করে মোহামেডান ও ঢাকা ওয়ান্ডারার্স স্বাধীনতার আগে ও পরে ছিলো ঘরোয়া ফুটবলের অন্যতম পরাশক্তি। অন্য ক্লাবগুলোও বিভিন্ন খেলায় অংশ নিতো। কিন্তু হালে এরা মাঠের খেলা ছেড়ে মেতে উঠেছিল টেবিলের খেলায়। যা দেশে অবৈধ।

ক্লাব সদস্যদের অবসর সময় কাটানোর জন্য তাস খেলার রেওয়াজ বেশ পুরনো। তবে আস্তে আস্তে আন্ত:কক্ষ ক্রীড়া নামে ক্লাবগুলোতে স্বল্প পরিসরে বসে জুয়ার বোর্ড। পাশাপাশি সপ্তাহে একদিন চলে হাউজি। দৈনন্দিন খরচ যোগাতেই এতদিন ক্লাবগুলো জুয়ার বোর্ড ও হাউজি খেলা থেকে অর্থ উপার্জন করতো। কিন্তু হালে নতুন সংযোজন হয়েছে ক্যাসিনো। সম্প্রতি ক্লাবপাড়ায় ৬টি ক্যাসিনোর সন্ধান পেয়ে সেগুলো সিলগালা করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আলোচনায় এসেছে এ ছয় ক্লাব।

মোহামেডানের পাশেই ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব। ব্রিটিশ শাসন আমলে ইংল্যান্ডের রাণীর নাম অনুসারে ১৯০৩ সালে জন্ম এই ক্লাবটির। এক সময় দেশের ক্রীড়াঙ্গনে উল্লেখ করার মতো ভূমিকা থাকলে হালে হারিয়েছে ভিক্টোরিয়ার ঐতিহ্য। দেশ স্বাধীনের আগে চারটি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে ভিক্টোরিয়া এখন জুয়ার স্বর্গরাজ্য!

১৯৬২ সালে তারা একাধারে ঢাকা লীগ, আগা খান গোল্ড কাপ, স্বাধীনতা দিবস ফুটবল, রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত বগুড়া মোহাম্মদ আলী গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। স্বাধীনতার পরে অনেক প্রতিভাবান ফুটবলারের জন্ম হয়েছিল এখান থেকে। ভিক্টোরিয়ার জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন সাবেক তারকা ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলাম। তার অধীনে সাফল্য পেয়েছিল এই ক্লাব। দুইবার প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের শিরোপা জয়ী ভিক্টোরিয়া। প্রিমিয়ার ক্রিকেটে ক্লাবটি প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয় ২০০১-২০০২ মৌসুমে। ২০০২-০৩ মৌসুমেও প্রিমিয়ার ক্রিকেটের শিরোপা জিতে ভিক্টোরিয়া। সর্বশেষ ২০১১-১২ মৌসুমের রানার্সআপ দলটি। কিন্তু এখন মতিঝিলের এই ক্লাবটি দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট খেলে। এছাড়া প্রিমিয়ার হকি ও পেশাদার ফুটবলের দ্বিতীয় স্তর চ্যাম্পিয়নশিপ লীগে খেললেও সাফল্যহীন দলটি। অবস্থাদৃষ্টে বুঝা যায় এখন তারা খেলাধুলা থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। খেলা নয় ক্লাবটি এখন বিখ্যাত ক্যাসিনো নিয়ে।

১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব। এই ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু, লেফট উইঙ্গার ওয়াজেদ গাজীসহ অনেক তারকা ফুটবলারের নাম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সঙ্গে। একসময়ের জনপ্রিয় এবং জায়ান্ট ক্লাবটি হালে হারিয়ে গেছে। তারা এখন প্রিমিয়ার হকি লীগের পাশাপাশি খেলে প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগে। আর দীর্ঘদিন ধরে জড়িয়ে ছিল জুয়া ও ক্যাসিনো বাণিজ্যে।

১৯৬২ সালে রাজধানীর ফকিরেরপুল বাজার এলাকায় জন্ম নেয়া ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব এক সময় ঢাকা লীগের জায়ান্ট কিলার হিসেবে খ্যাত ছিল। আশির দশকে ঢাকা লীগে সবাই দেখেছে ফকিরেরপুলের সাফল্য। ওই সময় তারা মোহামেডান-আবাহনীর মতো জায়ান্ট হারাত। খেলোয়াড় গড়ার কারখানা খ্যাত ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব বর্তমানে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লীগে খেললেও ২০১৬ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) উঠে টাকার অভাগ দেখিয়ে খেলেনি দেশের সর্বোচ্চ আসর বিপিএলে। অথচ বেশ ক’বছর ধরে এই ক্লাবে উড়েছে ক্যাসিনোর কোটি কোটি টাকা!

ক্লাবের ৬১ বছরের ইতিহাসে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সেরা সাফল্য ফুটবলে ২০১৭-১৮ মৌসুমে স্বাধীনতা কাপ জয়। গত মৌসুমে বাংলাদেশ বিপিএলে পঞ্চম হয়েছিল ক্লাবটি। এক ফুটবল ছাড়া আর অন্য কোনো খেলায় নাম না থাকলেও জুয়া আর ক্যাসিনোর জন্য এখন বিখ্যাত আরামবাগ। আর আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের পাশের ক্লাবটির নাম দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব। ১৯৬৪ সালে জন্মগ্রহণকারী এ ক্লাবটির ফুটবলে এক সময় ঢাকা লীগে বেশ নাম-ডাক ছিল। নীলুর মতো ফুটবলার খেলতেন এই ক্লাবের হয়ে। তবে এখন তারা প্রথম বিভাগ ফুটবল খেললেও প্রিমিয়ার হকির নতুন দল। আর হালের ক্যাসিনো খ্যাত!

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিরোনাম


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ