Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বামীর এ কি কাণ্ড..

কোদালের আচারি দিয়ে পিটিয়ে থেঁতলে দিয়েছে স্ত্রী’র শরীরের বিভিন্ন স্থান

কলাপাড়া(পটুয়াখালী)সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৬:৫০ পিএম

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় স্বামীর পরকিয়ার পর দ্বিতীয় বিয়েতে বাঁধা দেওয়ায় তিন সন্তানের জননী গৃহবধূ সাবেকুন্নাহার ঝুমুর (৩২)কে কোদালের আচারি দিয়ে পিটিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থান থেঁতলে দিয়েছে। ঘরের মধ্যে আটকে রেখে পাষণ্ড স্বামী মো.রফিকুল ইসলাম মীর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালায়। বেধড়ক মারধরে সে মারাত্মক জখম হয়। এমনকি চর-থাপ্পড় দিয়ে তার দু’কানের পর্দা ফাটিয়ে ফেলেছে। এ ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার গভীর রাতে উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের চর নিশানবাড়িয়া গ্রামে। এ খবর পেয়ে আহত গৃহবধূর বাপের বাড়ির লোকজন বুধবার সকালে স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় উদ্ধার করে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করেছে। তার কানের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসক পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে। বৃহস্পতিবার সকালে নির্যাতিতা ঝুমুর নিজেই নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেল (ওসিসি) তে গিয়ে এ ঘটনার বিস্তারিত বর্ননা দেন। ওসিসি বিষয়টি আমলে নিয়ে তার কাছ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ রাখেন।

ঝুমুর কান্নাজড়িত কন্ঠে জানায়, আমারে বন্দী কারাগারের মতো রাখা হতো। কোন আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে দিতনা। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাইতে খুন করতে চেয়েছিল। দিশেহারা এ গৃহবধুকে তার শ্বশুর আব্দুল হক ও শাশুড়ির সামনে বসেই এমন নির্দয় নির্যাতন করা হতো বলে ঝুমুরের দাবি। বর্তমানে সে দিশেহারা হয়ে গেছে। তিন সন্তান নিয়ে কী করবেন তাও বুঝে উঠতে পারছেন না। শুধু চোখের জল ফেলে কান্না করছেন।

আহত ঝুমুরের বড় ভাই জাহঙ্গীর মাতুব্বর জানান, দীর্ঘ ১৭ বছর আগে ধানখালী ইউনিয়নের চর নিশানবাড়িয়া গ্রামে আব্দুল হক মীরের ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম মীর’র সাথে পারিবারিক সম্মতিক্রমে তার বোনের বিয়ে হয়। তাদের ঘরে আসে তিনটি কন্যা সন্তান। তবে সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু বছর খানেক আগ থেকেই তার বোনের বাড়ির এক ভাড়াটিয়ার স্ত্রীর এক সন্তানের জননীর সাথে পরকিয়ায় জরিয়ে পরে তার বোন জামাই রফিক। এক পর্যায় পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। এনিয়ে প্রায়শই নির্যাতন চালানো হতো ঝুমুরের উপর। বোনের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সবকিছুই মুখ বুঝে সহ্য করতাম। সর্বশেষ মঙ্গলবার গভীর রাতে ঘরের দরজা বন্ধ করে চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। পাশের বাড়ির নিকট আত্মীয় মোবাইল করে নির্যাতনের বিষয়টি জানায়। ওই রাতে কোন উপায় না পেয়ে ইউপি সদস্য মো.জালালকে অবগত করা হয়। পরদিন বুধবার সকালে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজ তালুকদারের সহযোগিতায় ঝুমুরকে উদ্ধার করে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে নির্যাতিতা ঝুমুরের বড় ভাই জাহঙ্গীর মাতুব্বর জানিয়েছেন।

আহত ঝুমুরের খালাতো ভাই মোস্তফা জামান সুজন জানান, ঘটনার দিন রাতে রফিকের এক নিকট আত্মীয় ইমোতে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানান এবং দ্রæত উদ্ধার করার পরামর্শ দেন। পরের দিন ঝুমুরকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঝুমুরের অবস্থা সংকটাপন্ন। তার দু’কানের পর্দা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মনে হয় সে শ্রবন শক্তি হারিয়ে ফেলবে। বর্তমানে তাকে উন্নতচিকিৎসার জন্য পটুয়াখালী নেয়া হয়েছে।
এ বিষয় অভিযুক্ত মো. রফিকুল ইসলাম মীরকে মোবাইল করলে তিনি রিসিভ করেননি।

চিকিৎসক আশরাফুল জানান, শরীরের বিভিন্ন ধরনের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এখন ফের কানের পর্দায় সমস্যার কথা বলছে। ওই চিকিৎসা অন্যত্র করাতে হবে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারমান রিয়াজ তালুকদার জানান, বিষয়টি অমানবিক। গৃহবধূর ভাই আমাকে জানানোর পর প্রতিনিধি পাঠিয়ে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠাই।

নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেল (ওসিসি) উপজেলা প্রোগ্রাম আফিসার মো.ইদ্রিস আলম জানান, ভিক্টিমের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত বর্ননা শুনেছি। সে লিখিত দিয়েছে। তাৎক্ষনিক ভাবে অভিযুক্ত রফিকের সাথে কথা বলেছি।
কলাপাড়া থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম জানান , তিনি এ ধরনের কোন অভিযোগ পাননি। পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

Show all comments
  • Aklima ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৪ পিএম says : 0
    মেয়েরা কি মানুস নয়? র কতকাল চলবে এমন অমানবিক নিযাতন মেয়েদের উপর? মেয়েরা কি কোনো দিন পাবেনা মানুশের সম্মান। আর নারীরাই নারীর আসল শত্রু।
    Total Reply(0) Reply
  • Buyzid ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৩:২২ পিএম says : 1
    Buzte hobe ....sob digital....Tai Miro digital...e salader digital bhabe khun Kora uchit
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কাণ্ড

২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ