Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হোন

ময়মনসিংহে বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:১৭ এএম

সারাদেশকে ক্যাসিনোর দেশে পরিণত করেছে সরকার : মির্জা ফখরুল

বেগম খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে রাজপথের আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহŸান জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন অনুমতি সাপেক্ষে হবে না। আপনারা প্রস্তুত থাকবেন এক ঘণ্টা, এক ঘণ্টা পাঁচ মিনিট, দশ মিনিটের নোটিশে যে সিদ্ধান্ত হবে তা বাস্তবায়নের জন্য রাস্তায় নেমে আসবেন। মার খাবেন, পাল্টা দেবেন, এভাবেই পথ অতিক্রম করবেন। আন্দোলনে যারা বাধা দেবে, বাধা অতিক্রম করতে হবে। দেশটা কারো বাপের না। আন্দোলনে যারা বাধা দেবে, আমাদের যারা আঘাত করবে তাদেরও পাল্টা আঘাত করার অধিকার আমাদের রয়েছে। কারণ আমরা গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করব, সংবিধানে যে সুযোগ আছে সেটার মধ্যেই রাজপথে আন্দোলন হবে। প্রজাতন্ত্রে চাকরি করে জনগণের টাকায় কেনা অস্ত্র জনগণের ওপর ব্যবহার করবেন, বুলেট মারবেন, এটা ভবিষ্যতে করতে দেয়া হবে না। রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমেই বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে। কারণ খালেদা জিয়ার অপর নাম গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের অপর নাম খালেদা জিয়া।

গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ময়মনসিংহ নগরীর কৃষ্ণচূড়া চত্বরে জেলা ও মহানগর আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে তারা এসব কথা বলেন। এর আগে নানা নাটকীয়তার পর বেলা ১১টায় সমাবেশের অনুমতি দেয় পুলিশ। সমাবেশ শুরুর মাত্র আধা ঘণ্টা আগে প্রস্তুত করা হয় সমাবেশ মঞ্চ। মাত্র তিন ঘণ্টা আগে অনুমতি পেলেও সমাবেশ শুরুর আগে থেকেই লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় সমাবেশস্থল। হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে কৃষ্ণচূড়া চত্বর পূর্ণ হয়ে তারা ছড়িয়ে পড়েন আশপাশের সড়কগুলোতে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সমাবেশে বাধা দেয়ার পরও লাখো মানুষের উপস্থিতি ফ্যাসিস্ট, একনায়ক, স্বৈরাচারী সরকারকে জানিয়ে দিচ্ছে দেশের মানুষ দেশনেত্রীর মুক্তি চায়। তিনি (খালেদা জিয়া) এই দেশের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন। মানুষ মনে করে খালেদা জিয়া তাদের প্রতিনিধি, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের প্রতিনিধি। সেই নেতাকে আটকে রেখে সরকার ভেবেছে পার পাবে। বন্দুক দিয়ে গায়ের জোরে কিছুদিন আটকে রাখা যাবে কিন্তু বেশি দিন আটকে রাখা যাবে না। দেশের জনগণই তাকে মুক্ত করে আনবে।

সরকার গোটা দেশকে জুয়ার দেশে পরিণত করেছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার গোটা দেশকে জুয়ার আসর, ক্যাসিনোর দেশ বানিয়েছে। এর চেয়ে অনেক বড় অপরাধ করছেন ২৯ ডিসেম্বর রাতে ভোট ডাকাতি করে। এ জন্য জনগণের কাছে জবাবদিহি তাদের করতে হবে।

দেশে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই সরকার ব্যাংক লুট করেছে, শেয়ারবাজার লুট করেছে, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে, নিত্যপণ্য ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। ১০ টাকায় চাল দেয়ার কথা সেই চাল এখন ৪০ টাকার নিচে নেই। বলেছিল বিনামূলে সার দেবে কিন্তু তা এখন কেউ পায় না, সার এখন ১২শ’ টাকা। অথচ কৃষক ধানের দাম পান না, শ্রমিক মজুরি পায় না, ছোট ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারছেন না। সব টাকা পাচার করে সুইস ব্যাংকে পাঠিয়ে দিয়েছে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা পাঠিয়েছে সেখানে।

ক্যাসিনো, মেগা প্রজেক্ট থেকে কারা টাকা লুট করেছে সেই প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, শামীম (জি কে শামীম) সচিবালয়ের কাজ করেছে ৫০০ কোটি টাকা। প্রত্যেকটা সরকারি প্রকল্প থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ পেয়েছে। কার ছত্রছায়ায়? তিনি যুবলীগের নেতা। যাদের ধরা হচ্ছে তারা সবাই যুবলীগের নেতা। এদের এত সাহস? এরা কি একা একাই কাজ করছে? না। বলা হচ্ছে বিএনপির লোক ছিল! তাহলে ১২ বছর ধরে কি করলেন? এত দিন টাকা দিয়েছে পাচার করেছেন। এখন চুনোপুঁটি ধরে গায়ের গন্ধ কিছুটা দূর করতে চান। হবে না। একবার যখন আস্থা চলে যায় তা আর ফিরে আসে না।

পুলিশকে জনগণের পক্ষে আসার আহŸান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, আপনাদের দায়িত্ব জনগণের সামনে থাকা। জনগণের প্রতিপক্ষ না হয়ে পক্ষে আসুন। যারা জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করছে, মিথ্যা ভোট দিয়ে মিথ্যা আইন করছে তাদের প্রতিরোধ করা আপনাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ দাবি করে তিনি বলেন, দেশনেত্রীকে মুক্তি দিন, সংসদ বাতিল করুন, পদত্যাগ করুন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন দিন। যার মাধ্যমে জনগণের সরকার জনগণের পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠা হবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়া কোনো অন্যায়ের জন্য নয়, সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও অলিখিত বাকশাল পাকাপোক্ত, লুটপাট, চাঁদাবাজি, কমিশনবাজির উদ্দেশ্যে নেত্রীকে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, এটা জনগণের সরকার না, ডাকাতি, লুটেরা, সুবিধাভোগী, লুটপাটের ও ক্যাসিনোবাজিদের সরকার। এই সরকারের দুঃশাসনে, দুর্নীতিতে, লুটপাটে, কমিশনের কারণে, অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে, ব্যাংক খালি হয়ে গেছে। সরকার দেশ পরিচালনার জন্য রাজস্ব শূন্য তাই আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের টাকা নিয়ে যাচ্ছে। এমন দেউলিয়া হয়েছে মহাসড়কে টোলের টাকা নিয়ে সরকার পরিচালনা করতে হচ্ছে। টাকা গেল কেথায়? গত ৫ বছরে বিভিন্নভাবে তিন গুণ ট্যাক্স বৃদ্ধি হয়েছে। টাকা যাচ্ছে কোথায়? ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী লীগের হাতে।

মসজিদের নগরী ঢাকা ক্যাসিনোর নগরীতে পরিণত হয়েছে অভিযোগ করে মোশাররফ বলেন, যাদের ধরছে তারা তাদের দলের চুনোপুঁটি। যুবলীগের সমবায় সম্পাদক হাজার হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। তাহলে তাদের বড় নেতাদের কত হাজার কোটি টাকা আমরা জানতে চাই। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগের হাতে যদি এত হাজার কোটি টাকা থাকে, আওয়ামী লীগের বড় নেতাদের হাতে কত টাকা আছে। সরকারের উচ্চমহল, প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া এ ধরনের লুটপাট, ক্যাসিনোবাজি চলতে পারে না। জনগণের দাবি শুধু তারা নয়, তাদের পেছনে যারা আছে তাদের বের করতে হবে। তা না হলে জনগণ বের করে বিচার করবে।

মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা দেশনেত্রীর সাথে দেখা করতে যেতাম। এখন আমাদের দেখা করতে দেয়া হয় না। আমরা দেখা করতে পারলে অন্তত এই খবর দিতে পারতাম, দেশনেত্রী জেলে আছেন ভয়ের কিছু নেই। সারা বাংলাদেশের জনগণ আপনার সাথে আছে। যেখানেই বাধা আসছে সেখানেই জনগণ বাধা অতিক্রম করছে সেখানে সমাবেশ করছে। এখন থেকে যেখানে বাধা আসবে এখন থেকে সেখানে প্রতিরোধ হবে।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জঘন্য মিথ্যা কথা বলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, তাদের লজ্জা নেই। হাছান মাহমুদসহ আরো কয়েকজন কালকে গ্রেফতার হলে বলা হবে তারা মির্জা আব্বাসের সাগরেদ ছিলেন। চোর যখন ধরা পড়ে কিল খায়, তখন এর কথা ওর কথা বলে। তাদের ভালো করে কিল দিলে আসল কথা বলবে। সারাদেশে লুটপাট চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক, শেয়ারবাজার, সাধারণ মানুষের পকেট কাটা, শেষ পর্যন্ত শুনলাম মশার ওষুধ চুরি করছে। ঢাকার রাস্তায় চলা যায় না, খালি উন্নয়ন আর উন্নয়ন। উন্নয়নে আপত্তি নেই, কিন্তু রাস্তার বদলে যদি পকেটের উন্নয়ন হয় তাতে আপত্তি আছে। টাকা যায় কোথায়? তা বের করতে হবে। একদিকে দেশের মানুষ না খেয়ে থাকে অন্য দিকে সিঙ্গাপুরের ম্যারিনা বে ক্লাবে গিয়ে উনারা ক্যাসিনো খেলেন।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ক্ষমতাসীনদের পাতি নেতাদের হাতে হাজার হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। তাহলে সংসদে যারা যায়-আসে তাদের কাছে কত টাকা? তারা কত টাকা লুটপাট করেছে, কত টাকা চুরি করেছে তার হিসাব নেয়ার সময় হয়েছে। আজকে শ্রমিক, কৃষক, পেশাজীবী সবার মুখে এক আওয়াজ এই সরকার দুর্নীতিবাজ। যুবলীগের দুইজনকে ধরে যারা বাহবা নিতে চান তাদের কপালে বাহবা জুটবে না। আজকে যারা অভিযান চালাচ্ছেন তারা যদি দেশপ্রেমের অনুভূতি নিয়ে নেমে থাকেন তাদেরকে বলব, দুইজনকে ধরেছেন, বাকিদের ধরুন, জনগণ ও জনগণের দল বিএনপিও সমর্থন জানাবে। কিন্তু যদি সরকারকে বাঁচানোর জন্য একটা-দুইটা নাটক করে মাতামাতি করতে চান, বলতে চান আপনি ভালো হয়ে গেছেন তা জনগণ বিশ্বাস করবে না।

প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের সমাবেশের নাকি অনুমতি লাগে। প্রশাসনের লোকদের বলব ময়মনসিংহের সমাবেশ নিয়ে অনেক মাতবরি করেছেন। ভবিষ্যতে আর মাতবরির সুযোগ পাবেন না। আর কোনো অনুমতি নিয়ে বিএনপি আন্দোলন করবে না। তিনি বলেন, যারা মামলা দিচ্ছেন তারাও সময়মতো মামলা খাবেন। খালেদা জিয়ার জামিনের ব্যাপারে যারা বাধা দেন হস্তক্ষেপ করেন ক্ষমতার অপব্যবহার করেন তারাও জেলে যেতে পারেন। জেলখানা খালেদা জিয়া, বিএনপির জন্য স্থায়ী বরাদ্দ না। খালেদা জিয়া বের হয়ে যদি খালি না হয়, মুক্তি না পান তাহলে আপনাদের কোথায় রাখব। নিজেদের নিরাপদ রাখার জন্য জেলখানা খালি করুন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন। সেখানে নিজেরা যান নিজেদের নিরাপদ রাখুন। দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক। ভোটের অধিকার ফিরে আসুক।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ শক্তিশালী করা, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন চলছে। আন্দোলন বিভাগীয় সমাবেশেই শেষ হবে না। এটা প্রস্তুতি পর্ব। যেটা আন্দোলনকে জোরদার করবে।

ময়মনসিংহ জেলা দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ এবং উত্তর বিএনপিসাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন তালুকদারের পরিচালনায় মহাসমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাড. ফজলুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, এমরান সালেহ প্রিন্স, শ্যামা ওবায়েদ, কেন্দ্রীয় নেতা ওয়ারেছ আলী মামুন, কামরুজ্জামান রতন, শামীমুর রহমান শামীম, আব্দুল বারী ড্যানি, আব্দুল্লাহ ফারুক, শামসুল আলম তোফা, ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন, বেগম নূরজাহান ইয়াসমিন, অ্যাড. আরিফা জেসমিন, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূইয়া জুয়েল, শেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মাহবুবুল হক রুবেল, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, তাঁতি দলের আহŸায়ক আবুল কালাম আজাদ, কৃষক দলের সদস্য সচিব হাসান জারিফ তুহিন, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ ও নূরুল ইসলাম নয়ন।

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আন্দোলন

৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ