Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক্যাসিনো জুয়ার বিরুদ্ধে র‌্যাবের অভিযান

| প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

ক্যাসিনোতে র‌্যাবের অভিযান এবং প্রভাবশালী হোতাদের পাকড়াও করার ঘটনায় দেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাধুবাদ জানাচ্ছে। মদ, জুয়া, নারী ও শিশু নির্যাতন একটি সমাজের সামাজিক-রাজনৈতিক অবক্ষয়ের চরম সীমাকে নির্দেশ করে। সাম্প্রতিক বাংলাদেশ যেন সে প্রান্তসীমায় এসে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনের খবরের কাগজ খুললেই কোথাও না কোথায় নারী ও শিশু ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের খরব পাওয়া যাচ্ছে। সেই সাথে ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে তারুণ্যের মাদকাসক্তি, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজির ঘটনা। তারই ধারাবাহিকতায় শহরে বেড়ে উঠেছে জুয়ার আসর। আধুনিক নগর সভ্যতায় যার নাম ক্যাসিনো। গত বুধবার একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে রাজধানী ঢাকা শহরে অন্তত ৬০টি স্পটে ক্যাসিনোর ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। খেলাধুলা মানুষের সুস্বাস্থ্য ও সৃজনশীলতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা পালন করে থাকে। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে ঢাকায় অবস্থিত অনেক স্পোর্টিং ক্লাব রাতের বেলায় জুয়ার আসরে পরিণত হয়। দীর্ঘদিন ধরেই ক্লাবগুলোতে ভদ্রবেশি জুয়াড়িদের আড্ডা থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে রমরমা হয়ে উঠার পাশাপাশি এসব জুয়ার আসরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ ও অপরাধিচক্র। মূলত এসব সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজরাই ক্লাবপাড়া থেকে শহরের অভিজাত এলাকার হোটেল-রেস্টহাউজ পর্যন্ত জুয়া বা ক্যাসিনোর বিস্তার ঘটিয়েছে। ক্লাব কালচার এবং ভদ্রলোকদের জুয়ার আসর বৃটিশ আমল থেকে চলে আসলেও সাম্প্রতিক সময়ে এই কালচার যেন অন্ধকার অপরাধ জগতের বল্গাহীন বিস্তৃতি হয়ে উঠেছে। মাদক, জুয়া, আগ্নেয়াস্ত্র এবং কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি যেন একই সুত্রে গাঁথা। এরা নতুন প্রজন্ম এবং সমাজকে যতটা ক্ষতিগ্রস্ত করছে, কোনো জঙ্গিগোষ্ঠিও এতটা ক্ষতি করতে পারে নি।
যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয় ও অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠার জন্য দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব দায় এড়াতে পারেন না। মূলত তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় এবং পৃষ্ঠপোষকতায়ই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকান্ডে এবং সরকারি ক্রয়ে সরকারি দলের সাথে ঘনিষ্ঠ পেশাজীবী এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগের তকমাধারি যুবকরা ব্যাপক চাঁদাবাজি ও লুণ্ঠনে মেতে উঠেছে। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আবাসিক প্রকল্পে চাঞ্চল্যকর বালিশকান্ড, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে পর্দাকান্ড এবং জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটি টাকার ঈদ সালামির তথ্য ফাঁস হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শক্ত হাতে এদের দমনের নির্দেশ দিয়েছেন। চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে ইতিমধ্যে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ পদে থাকা সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভন এবং সেক্রেটারি গোলাম রব্বানিকে সরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার পর তাদের নানা অপকর্ম এবং রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠার কাহিনী বেরিয়ে আসছে। সেই সাথে এসব বিষয়ে উপযুক্ত তদন্ত ও বিচারের জোরালো দাবীও উঠেছে। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের চাঁদাবাজি, ক্লাবপাড়ায় মদ জুয়া অতীতেও সব সরকারের আমলেই ছিল। তবে আগে কখনো এতটা প্রকট আকার ধারণ করেনি এবং কোনো সরকারের আমলে এদের বিরুদ্ধে এমন সাংগঠনিক এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থাও দেখা যায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ক্ষেত্রে এক ব্যতিক্রমী উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।
চাঁদাবাজ ছাত্রনেতাদের বহিষ্কারের পর প্রধানমন্ত্রী যুবলীগের একশ্রেণীর নেতার বিরুদ্ধেও হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছিলেন। তার মতে এরা শোভন-রব্বানীদের চেয়েও খারাপ। মতিঝিলের ক্লাব পাড়ায় র‌্যাবের অভিযান চালিয়ে দেড় শতাধিক জুয়াড়ি এবং ক্যাসিনোর অন্যতম হোতা ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদকে গুলশান থেকে গ্রেফতার করার পর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের যথার্থতা প্রমাণিত হয়েছে। রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাবের কারণে যারা এতদিন নিজেদেরকে আইনের ঊর্ধ্বে বলে মনে করত, তারা এখন প্রমাদ গুনতে শুরু করেছে। জুয়ার সাথে চলে মাদকের আসর, সেই সাথে গড়ে ওঠে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের মজুদ এবং মহড়া। খালেদ মাহমুদকে অস্ত্র ও ইয়াবাসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। ক্যাসিনোতে জব্দ হয়েছে ২০ লক্ষাধিক টাকা এবং গ্রেফতার হয়েছে ১৪২ জন জুয়াড়ি। অর্থাৎ এখন আর টাকা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করতে পারছে না এতদিনের প্রভাবশালীরা। সরকারের মন্ত্রী,এমপি, আমলা থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণীর কর্মকর্তার পরোক্ষ সহযোগিতায় গড়ে উঠা অপরাধ জগতের এই দুষ্টচক্র ভাঙ্গা আর কারো পক্ষে সম্ভব ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নির্দেশনা আছে বলেই এসব ক্ষমতাধর, প্রভাবশালী গড ফাদাররাও এখন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছে। শিক্ষাঙ্গণে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি, হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে সরকারী ক্রয়ের নামে পুকুর চুরির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় অবস্থান সমুন্নত দেখতে চায় দেশবাসি। চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, মাদক ও জুয়ার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযান যেন অব্যাহত থাকে, এটাই এখন সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্যাসিনো জুয়া
আরও পড়ুন