২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
বাংলাদেশে ইদানিং কালে ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সার অধিক হারে ধরা পড়ছে। আমাদের দেশে নারীদের মধ্যে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্যান্সারের স্থান নিয়েছে। অন্যান্য সকল ক্যান্সারের মতো, ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে জ্ঞান ও সচেতনতা গত এক দশকে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
যদিও এখনো, এমনকি চিকিৎসকেরাও ব্রেস্ট ক্যান্সারের সঠিক কারণ সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। তবে বিশ্বব্যাপি অনেক জরীপ যাচাইয়ে ব্রেস্ট ক্যান্সারের সাথে জড়িত বেশ কিছু ঝুঁকির কারণ আলাদা করা গেছে। এর মধ্যে বেশ কিছু কারণ আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেমন, নারীদের নারী হবার কারণে ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়া, ক্রমবর্ধমান বয়স, পরিবারের অন্য কারো ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার ইতিহাস, তুলনামূলক অল্প বয়সে মাসিক শুরু হওয়া, তুলনামূলকভাবে দেরীতে রজঃনিবৃত্তি বা মেনোপজ হওয়া ইত্যাদি। অন্যান্য যে সব কারণসমূহ ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকির সাথে জড়িত সেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবন প্রক্রিয়া বা লাইফ স্টাইলের সাথে জড়িত।
এ প্রসঙ্গে আমি আজকের প্রতিপাদ্য বিষয়ে আসতে চাই। সমগ্র জনগোষ্ঠির ৫০ শতাংশ নারী বিধায়, দেশের কর্মস্থলে অধিক হারে নারীরা এগিয়ে আসছে। উচ্চশিক্ষা, সামাজিক পরিবেশে সহায়ক পরিবর্তন, পারিপার্শ্বিক চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন এবং সর্বোপরি দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের কারণে বাংলাদেশের কর্পোরেট জগতে ইদানিং অধিক হারে অগ্রগন্য নারীদের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে কাজের চাপ, দৈনন্দিন প্রতিযোগীতার মুখোমুখি হওয়ায় বাড়তি দুশ্চিন্তা ও সাফল্যে পৌঁছার ক্রমবর্ধমান উচ্চাভিলাষ, এযুগের কর্মজীবি নারীদের চিন্তা-চেতনা ও জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে যা দূর্ভাগ্যজনকভাবে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকির পরিপূরক। আমাদের বুঝতে হবে যে, যদিও এই আর্থ-সামাজিক অবস্থানগুলো সরাসরি ব্রেস্ট ক্যান্সারের কারণ নয়, তবে বিশ্বব্যাপি বিভিন্ন সমীক্ষায় বারে বারে এই পরিবর্তনগুলোর সাথে ব্রেস্ট ক্যান্সারের সম্পৃক্ততা দেখা গেছে। নিঃসন্তান বা বেশী বয়সে প্রথম সন্তান জন্মদান, সন্তানকে ব্রেস্ট ফিড না করানোর বা কোন কারণে মায়ের বুকের দুধ পান করাতে না পারা, কায়িক পরিশ্রম কম হয় এমন জীবন যাপন, স্থুলতা, চর্বিযুক্ত খাবার ও ফাস্টফুড বেশী খাওয়া, ধুমপান বা মদ্যপান এবং হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপী ইত্যাদি ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। কর্মক্ষেত্রে অধিক চাপ ও যোগ্যতার মাপকাঠিতে একজন পুরুষ সহকর্মীর সাথে সমান গতিতে এগিয়ে যাওয়ার তাগিদে, নারীরা ইদানিং দেরীতে বিয়ে করছে ও দেরীতে সন্তান জন্ম দেবার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বা একইভাবে কর্মস্থলের কঠিন সময়ের বেড়াজালে পড়ে অনেক কর্মজীবি মায়েরা সন্তানকে ব্রেস্ট ফিড করাতে পারছেনা। এছাড়াও আজকাল কর্পোরেট ক্ষেত্রে নারীরা ডেস্কে বসে প্রচুর কাজ করছেন এবং সময় বাঁচাতে ফাস্টফুড দিয়েই দুপুরের খাবার সেরে নিচ্ছেন যা শরীরে প্রচুর চর্বি জমে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলের মতোই, বাংলাদেশেরও নারীরা কর্পোরেট জগতে সমান তালে কাজ করাতে, স্বাভাবিকভাবেই যে কোন মিটিং বা অনুষ্ঠানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ধুমপান বা মদ্যপানের ঝুঁকিও তাদের থেকেই যায়।
এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে তবে কি করা যায়? সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে সচেতন হওয়া। আমাদের মেনে নিতে হবে যে সব নারীরাই নারী হওয়ার কারনেই ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকে এবং বয়সের সাথে সাথে এই ঝুঁকি বাড়ে। নারীদের অধিক হারে কর্মক্ষেত্রে আসার কারণে এবং এ সংক্রান্ত জীবন যাত্রার পরিবর্তনের ফলে, কর্মজীবি নারীদের ও কর্পোরেট খাতে কর্মরত সকল স্তরের নারীদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি দেখা যাচ্ছে। কাজেই সচেতনতা ও ঝুঁকি নিরূপনে স্বাস্থ্য নিয়মিত পরীক্ষাই এর একমাত্র প্রতিকার। ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সের নারীদের নিয়মিত প্রতি মাসে অন্ততঃ একবার ব্রেস্ট সেল্ফ এক্সামিনেশন বা নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীক্ষা করা উচিত। একজন জেনারেল সার্জনের কাছে গেলে উনি এ ব্যাপারে শিখিয়ে দেবেন। নারী তার নিজের পরীক্ষায় ব্রেস্টে কোন অস্বাভাবিকতা যেমন ত্বকের রং পরিবর্তন বা চাকা বা কুঁচকানো ইত্যাদি পাওয়া গেলে, দেরী না করে একজন জেনারেল সার্জনের শরণাপন্ন হবেন। যদি নারীর বয়স ৪০ বা তার উপরে হয়, তবে প্রতি মাসে সেল্ফ এক্সামিনেশনের পাশাপাশি বাৎসরিক একবার ম্যামোগ্রাম করা উচিত। ম্যামোগ্রাম এক ধরণের বিশেষ এক্স-রে পদ্ধতি যার মাধ্যমে খুব আগেই ব্রেস্ট ক্যান্সার সনাক্ত করা সম্ভব হয়। এগুলোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যসচেতন জীবন যাপন করা বাঞ্ছনীয় যেমন, সুষম খাদ্য গ্রহন, চর্বি জাতীয় খাবার এবং গরু বা খাসীর মাংস পরিহার ও সবুজ শাক-সব্জি খাওয়া। প্রতিদিন সময় করে নিয়মিত ব্যায়াম, সপ্তারের ৫ দিন অন্ততঃ ৪৫ মিনিট ছোট ছোট পায়ে দ্রæত হাঁটার অভ্যাস করাটা উপকারী, ধূমপান বা মদ্যপান অবশ্যই পরিহারযোগ্য।
পরিশেষে বলবো, যদি কোন নারী তার যে কোন ব্রেস্টে চাকা অনুভব করে, তবে মনে রাখবেন নারীদের ত্রিশোর্ধ বয়সে শতকরা ১০ ভাগ স্তনের চাকাই শুধুমাত্র ক্যান্সারে রূপ নেয়। যদিও বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই সংখ্যা বাড়তে থাকে। স্তনে চাকা অনুভব করলে চেপে রাখবেন না, লজ্জা পেয়ে দেরী করবেন না, অনতিবিলম্বে একজন জেনারেল সার্জনের শরনাপন্ন হোন; কারণ শুধুমাত্র জেনারেল সার্জনেরাই স্তনের চিকিৎসা প্রদানে ট্রেনিংপ্রাপ্ত, কাজেই সংকোচ করে কোন মহিলা গাইনী চিকিৎসকের কাছে গিয়ে সময় নষ্ট করবেন না। পুরুষ কিংবা নারী যেই হোক না কেন সঠিক চিকিৎসক-ই রোগের সঠিক চিকিৎসা দিতে সক্ষম, কোন প্রকারের কবিরাজী বা ঝাড়-ফুঁকের সাহায্য নিয়ে সঠিক চিকিৎসা বিলম্বিত করবেন না। মনে রাখবেন, অনেক ক্যান্সারের মতো, ব্রেস্ট ক্যান্সারও যদি শুরুতেই ধরা পড়ে তবে এ থেকে নিরাময় পাওয়া সহজতর হয়।
কনসালট্যান্ট, জেনারেল এন্ড ল্যাপারোস্কপিক সার্জারী
ইউনাইটেড হসপিটাল লিমিটেড, ঢাকা
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।