পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে রাজশাহী সীমান্তে বাংলাদেশ ভূমি হারাচ্ছে। ভাঙনে একদিকে যেমন বাড়িঘর, গাছপালা, শস্যক্ষেত্র, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা পদ্মাগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে তেমনি নদী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ায় ওপারে ভারতীয় দখল বিস্তৃত হচ্ছে। এভাবে বাংলাদেশে ওই সীমান্তে তার ভূমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে, অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে রাজশাহী সীমান্তে পদ্মা ভয়ালরূপে বাংলাদেশমুখী ভাঙনের তা-ব চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি সীমানা পিলার স্থানচ্যুত হয়েছে। এ অবস্থায় জেলেরা মাছ ধরতে গেলে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ তাদের বাধা দিচ্ছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে, গত বর্ষায় পদ্মার দক্ষিণ সীমান্তের ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৫০০ মিটার প্রস্থ ভূখ- পদ্মায় হারিয়ে গেছে। ভাঙনে চর মাজারদিয়ার ও চর খানপুরের মধ্যবর্তী কলাবাগান এলাকার ১৬৪ নং মেইন পিলার থেকে ১৬৫ নং মেইন পিলার পর্যন্ত ভূখ- বিলীন হয়ে ভারতীয় সীমানায় মিশেছে। এরপর ওই অংশে দখল প্রতিষ্ঠায় বিএসএফ তৎপর হয়ে উঠেছে এবং তার ক্যাম্প নদীতীরে এনে স্থাপন করেছে। আশংকা করা হচ্ছে, পদ্মার ভাঙনে বাংলাদেশ আরো ভূমি হারাবে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা হলো, কয়েক বছর ধরে পদ্মার ভাঙনে তীরভূমি এলাকায় বসবাসকারীরা সর্বস্ব হারালেও এবং দেশ ভূমি হারালেও ভাঙন রোধের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিজিবি ও স্থানীয় প্রশাসনের তরফে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার তাকিদ দেয়া হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড তেমন কিছু করতে পারেনি। এ ব্যাপারে একটি প্রকল্পপ্রস্তাব দেয়া হলেও উচ্চ পর্যায়ে তা বাতিল হয়ে গেছে। জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজশাহী জোনের উদ্যোগে সীমান্তবর্তী খানপুর, খিদিরপুর, ইউসুফপুর ও চর মাজারদিয়ার বিজিপির বিওপি রক্ষার জন্য ২০১৩ সালে ১৭৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্পপ্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবটি নানা ঘাট ঘুরে ২০১৫ সালের জুলাইয়ে নাকচ হয়ে যায়।
কেন প্রকল্প প্রস্তাবটি এভাবে অপ্রয়োজনীয় সাব্যস্ত হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। পদ্মার ভাঙনে ভূমি হারানোর বিষয়টি গোপন কিছু নয়। সরেজমিন পর্যবেক্ষণেই সেটা চাক্ষুষ করা সম্ভব। হতে পারে কোনো বছর হয়তো ভাঙনের তীব্রতা কম দেখা গেছে কিংবা দেখা যায়নি তাই বলে ভাঙন চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে, এটা মনে করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। খবরে জানা গেছে, সম্প্রতি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন খিদিরপুর ও খানপুরের ভাঙনকবলিত এলাকায় সীমানা নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে। বলাবাহুল্য, সীমানা নির্ধারণ করলেই যে, তা সুরক্ষা হয়ে যাবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। বাংলাদেশী জেলেদের মাছ ধরতে বিএসএফ’র বাধাদানের ঘটনা যে ইঙ্গিত দেয় তা না বুঝতে পারার কিছু নেই। এ ব্যাপারে গভীর উদ্বেগজনক তথ্য এই যে, সকল সীমান্ত নদীরই বাংলাদেশমুখী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙন রোধে কার্যকর কোনো প্রতিবন্ধক বা বাঁধ নির্মাণ না করায় সব সীমান্তনদীই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে আর ওপারে জেগে ওঠা ভূমি ভারতের দখলে চলে যাচ্ছে। এভাবে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ভূগোল। ভারত সব সীমান্তনদীর তীর সংরক্ষণ করে ভাঙনের তা-ব বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বাংলাদেশের ভূমি দখল করার এটি একটি পরিকল্পিত পদক্ষেপ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের জানা মতে, সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার ১০/১২ মাইল এলাকা ইতোমধ্যে ভারতের দখলে চলে গেছে। অনুরূপভাবে ফেনী, সমেশ্বরী, মহুরী, করোতোয়া, মহানন্দা, ধরলা, দুধকুমার, আত্রাই, তিস্তা, ইছামতি, কালিন্দী প্রভৃতি নদীর ভাঙনের ফলে ওপারে জেগে ওঠা ভূমি ভারতের দখলে চলে গেছে। বিশদ ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না, এভাবে সীমান্তনদীগুলোর ভাঙন অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের আরও বহু মানুষ বাড়িঘর, জমি-জিরাত ও সহায়সম্বল হারিয়ে পথের ফকিরে পরিণত হবে এবং বাংলাদেশ আরো জমি হারাবে।
এখানে স্মরণ করা যেতে পারে, দেশ বিভক্তির সময় সীমান্ত নদীগুলোর মধ্যস্রোতকে সীমানারেখা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। ভারত এই মধ্যস্রোতনীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশের ভূমি কব্জা করে নিচ্ছে। সীমান্তনদীগুলোর বাংলাদেশমুখী ভাঙনের ফলে মধ্যস্রোতের পরিবর্তন ঘটছে। নদীগুলো যত বাংলাদেশের অভ্যন্তর ঢুকে পড়ছে। তাদের মধ্যস্রোতও ততো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চলে আসছে। ভারত মধ্যস্রোতনীতি অনুযায়ী ওপারে জেগে ওঠা ভূমি নিজ কর্তৃত্বে নিয়ে নিচ্ছে। পরিবর্তনশীল মধ্যস্রোতকে সীমানা রেখা হিসেবে চিহ্নিত করার নীতি আন্তর্জাতিক পরিম-লে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। এ নীতির মাধ্যমে স্থায়ী সীমানা নির্ধারণ সম্ভব নয়। এ কারণে বহু দেশ মধ্যস্রোতনীতি পরিহার করছে। বিভক্তির সময় যেটি মধ্যস্রোত সেটিই স্থায়ী সীমারেখা বলে গণ্য করছে। বাংলাদেশেরও উচিত বিভক্তির সময় যেখানে মধ্যস্রোত ছিল সেই মধ্যস্রোতকেই স্থায়ী সীমারেখা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ গ্রহণ করা। এ ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে আজ পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। আলোচনা না হয়ে থাকলে আলোচনা করতে হবে। ভারত এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করলে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনাও সক্রিয় করতে হবে। দেশের এক ইঞ্চি ভূমিও আমরা ছাড়তে চাইনে, এটাই শেষ কথা। এই সঙ্গে সীমান্তনদীর ভাঙন রোধে একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পদ্মাসহ যে সব নদী অধিক ভাঙনপ্রবণ তাদের ভাঙন নিরোধে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ব্যাপারে সময়ক্ষেপণের এতটুকু সুযোগ আছে বলে আমরা মনে করি না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।