নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শুরুতে লিটন ঝড়, এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিমের দায়িত্বশীল ব্যাটিং। দুইয়ে মিলে পাওয়া গেল চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ। পরে বল হাতে আগুন ঝরালেন বোলাররা। তাতেই ত্রিদেশীয় টি-২০ টুর্নামেন্টের চতুর্থ ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ৩৯ রানে হারিয়ে ফাইনালে উঠে গেল বাংলাদেশ। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের জয় দুটি করে। এখনো জয়ের খোঁজে থাকা জিম্বাবুয়ে নিজেদের শেষ ম্যাচে জিতলেও তাই কোনো লাভ হবে না।
জিতলেই ফাইনাল। এমন হিসাবের সামনে দাঁড়িয়ে গতকাল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টসভাগ্যে হারে বাংলাদেশ। তাতে সমস্যা খুব একটা হয়নি। লিটনের ঝড়ো শুরুর পর মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিমের ৭৮ রানের জুটিতে উপর ভর করে ৭ উইকেটে ১৭৫ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ গড়ে টাইগাররা। জবাবে পুরো ২০ ওভার খেলে ১৩৬ রানে অল আউট হয় জিম্বাবুয়ে।
৩ উইকেট নিয়ে জাতীয় দলে ফেরা রাঙিয়েছেন শফিউল ইসলাম। ২ উইকেট নেন অভিষিক্ত ১৯ বছর বয়সী লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। ২ উইকেট নিয়ে সাকিব আল হাসানের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে টি-২০ ক্রিকেটে ৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। তবে ৪১ বলে পাঁচ ছক্কায় ও ১ চারে ৬২ রান করা মাহমুদউল্লাহ-ই ম্যাচের আসল নায়ক।
বোলিংয়ের সুরটা বেধে দেন মোহাম্মাদ সাইফউদ্দিন। প্রথম ওভারেই লেন্থ বলে টেইলরকে রানের খাতা খুলতে দেননি সাইফ। পরের ওভারে দারুণ ডেভিলারিতে রেজিস চাকাভাকে বোল্ড করে দেন সাকিব। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই শেন উইলিয়ামসনকে ফেরান শফিউল। ৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়ে তখন ধ্বংসস্তুপে।
ওপেনার হ্যামিল্টন মাসাকাদজা তখনও ব্যাটে। তিনোতেন্ডা মুতোম্বদজিকে নিয়ে এরপর দলকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন মাসাকাদজা। মুতোম্বনিকে তুলে নিয়ে ২৭ রানের জুটি ভাঙেন অভিষিক্ত আমিনুল। নিজের পরের ওভারে মাসাকাদজাকেও নিজের শিকারে পরিণত করেন ডানহাতি লেগ স্পিনার। দুইয়ের মাঝে শফিউলের বলে ‘ইনসাইড এজ’ বোল্ড হয়ে যান প্রথম ম্যাচে ঝড় তোলা বার্ল। খানিক বাদে নেভিল মাদজিভা যখন রান আউট হন দলীয় সংগ্রহ তখন ৭ উইকেটে ৬৬। জয় তখনও তাদের জন্য দূরের পথ।
এরপরই ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটিটি পায় জিম্বাবুয়ে। কিন্তু রিচমন্ড মাতুম্বামি ও কাইল জার্ভিসের সেই ৫৮ রানের জুটি কখনোই জয়ের সম্ভবনা তৈরি করতে পারেননি, পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছে মাত্র। শফিউলকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সাইফের হাতে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন ৪ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায় ৩২ বলে ৫৪ রানের দারুণ ইনিংস খেলা মাতুম্বামি। শেষ ওভারে বাকি দুই উইকেট তুলে নেন মুস্তাফিজ।
এর আগে বাংলাদেশের ইনিংসে ছিল মাহমুদউল্লাহ শো। অষ্টম ওভারে নেমেই ছক্কা দিয়ে খুলেছিলেন রানের খাতা। ছক্কা হাঁকাতে গিয়েই শেষ ওভারে। এর আগে মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে গড়েন ৭৮ রানের জুটি। ৬৫ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর এই জুটিই দলকে বড় সংগ্রহের দিয়ে টেনে নেয়।
টস হেরে ব্যাটে নামা টাইগার বাহিনীর শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। ঝড় তুলেছিলেন লিটন। অভিষিক্ত নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে গড়েন ৪৯ রানের জুটি। পঞ্চম ওভারে ১১ রানে নাজমুলের বিদায়ে ভাঙে জুটি। পরের ওভারে লিটন ঝড় থামান এমপুফু। ২২ বলে চার বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ৩৮ রান করেন লিটন। ফাইন লেগের উপর দিয়ে খেলতে গিয়ে নেভিল মাদজিভার দারুণ ক্যাচে পরিণত হন তিনি।
এসেই জীবন পাওয়া সাকিব থিতু হওয়ার আগেই আউট হন। জার্ভিসের অফ স্টাম্পের বাইরের বল সাকিবের ব্যাটের নিচ দিয়ে উইকেটকিপারের গøাভসে জমা হয়। রিপ্লেতে দেখা যায় বল ব্যাট স্পর্শ করেছিল। জীবন পেয়েও বাজে শটে লং অফে উইকেট বিলিয়ে আসেন দলীয় অধিনায়ক।
এরপরই আসে মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকের সেই ৭৮ রানের জুটি। আগেও ব্রান্ডন টেইলরের হাতে জীবন পাওয়া মুশফিক সেই টেইলরের হাতেই ক্যাচ তুলে দেন রিচমন্ড মুতোম্বদজিতো সুইপ করতে গিয়ে। ফেরার আগে ১ ছয়, ৩ চারে ২৬ বলে ৩২ রান করেন মুশফিক। ১৬.৩ ওভারে ১৪৩ রানে দল তখন অনেকটা নিরাপদে। পাঁচে নেমে মাহমুদউল্লাহর খেলা ৬২ রানের ইনিংসটি দেশের হয়ে সর্বোচ্চ। আগের সর্বোচ্চ ছিল সাকিব আল হাসানের (৩৮ বলে ৬০, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে)। পাঁচ ছক্কায় মাহমুদউল্লাহ ছুঁয়েছেন নাজিমুদ্দিন, জিয়াউর রহমান, সাব্বির রহমান ও তামিম ইকবালকে। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে এক ইনিংসে এটিই সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড।
প্রথম ম্যাচের নায়ক আফিফ হেসেন এদিনও সুবিধা করতে পারেননি। আর শেষ ওভারে জার্ভিসের টানা দুই ফুলটস বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন প্রথমে মাহমুদউল্লাহ, পরে মোসাদ্দেক।
আগামীকাল নিজেদের শেষ ম্যাচে আফগানদের মুখোমুখি হবে জিম্বাবুয়ে। আগামী সোমবার মিরপুরে হবে ফাইনাল।
স্কোর কার্ড
ত্রিদেশীয় টি-২০ সিরিজ (৪র্থ ম্যাচ)
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে, চট্টগ্রাম
টস : জিম্বাবুয়ে (ফিল্ডিং)
বাংলাদেশ ইনিংস রান বল ৪ ৬
শান্ত ক ও ব জার্ভিস ১১ ৯ ১ ০
লিটন ক মাদজিভা ব এমপোফু ৩৮ ২২ ৪ ২
সাকিব ক উইলিয়ামস ব বার্ল ১০ ৯ ১ ০
মুশফিক ক টেইলর ব মুতোম্বদজি ৩২ ২৬ ৩ ১
মাহমুদউল্লাহ ক উইলিয়ামস ব জার্ভিস ৬২ ৪১ ১ ৫
আফিফ ক টেইলর ব এমপোফু ৭ ৮ ০ ০
মোসাদ্দেক ক চাকাভা ব জার্ভিস ২ ৩ ০ ০
সাইফউদ্দিন অপরাজিত ৬ ২ ১ ০
আমিনুল অপরাজিত ০ ০ ০ ০
অতিরিক্ত (লেবা ৩, ও ৪) ৭
মোট (২০ ওভারে ৭ উইকেটে) ১৭৫
উইকেট পতন : ১-৪৯ (শান্ত), ২-৫৫ (লিটন), ৩-৬৫ (সাকিব), ৪-১৪৩ (মুশফিক), ৫-১৫৯ (আফিফ), ৬-১৬৯ (মাহমুদউল্লাহ), ৭-১৬৯ (মোসাদ্দেক)।
বোলিং : এনডিলোভু ৩-০-৩২-০, জার্ভিস ৪-০-৩২-৩, এমপোফু ৪-০-৪২-২, উইলিয়ামস ৪-০-২৬-০, বার্ল ১-০-১৩-১, মুতোম্বজি ৩-০-১৭-১, মাদজিভা ১-০-১০-০।
জিম্বাবুয়ে ইনিংস রান বল ৪ ৬
টেইলর ক সাকিব ব সাইফউদ্দিন ০ ৫ ০ ০
মাসাকাদজা এলবি ব বিপ্লব ২৫ ২৫ ৩ ০
চাকাভা বোল্ড সাকিব ০ ২ ০ ০
উইলিয়ামস ক আফিফ ব শফিউল ২ ৫ ০ ০
মুতম্বজি ক নাজমুল ব বিপ্লব ১১ ৯ ০ ১
বার্ল বোল্ড শফিউল ১ ৩ ০ ০
মুতুম্বামি ক সাইফউদ্দিন ব শফিউল ৫৪ ৩২ ৪ ৩
মাজিভা রানআউট ৯ ১৫ ০ ০
জারভিস ক সাব্বির ব মুস্তাফিজ ২৭ ৪ ০ ০
এনলোভু বোল্ড মুস্তাফিজ ২ ৪ ০ ০
এমপফু অপরাজিত ০ ০ ০ ০
অতিরিক্ত (বা ১, লেবা ১, ও ৩) ৫
মোট (অলআউট, ২০ ওভারে) ১৩৬
উইকেট পতন : ১-০ (টেইলর), ২-২ (চাকাভা), ৩-৮ (উইলিয়ামস), ৪-৩৫ (মুতম্বজি), ৫-৩৭ (বার্ল), ৬-৪৪ (মাসাকাদজা), ৭-৬৬ (মাজিভা), ৮-১২৪ (মুতুম্বামি), ৯-১৩৬ (জারভিস), ১০-১৩৬ (এনলোভু)।
বোলিং : সাইফউদ্দিন ৪-০-১৪-১, সাকিব ৪-০-২৮-১, শফিউল ৪-১-৩৬-৩, মুস্তাফিজ ৪-০-৩৮-২, বিপ্লব ৪-০-১৮-২।
ফল : বাংলাদেশ ৩৯ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।