চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
আফতাব চৌধুরী
॥ শেষ কিস্তি ॥
ইসলামের সংবিধানে কয়েকটি জিনিসের ওপর ছদকা তথা জাকাত (দান-খয়রাত) নির্ধারিত হয়েছে, যেমন ধনী ব্যক্তিদের ধনের প্রাচুর্যের ওপর চল্লিশ অংশের এক অংশ টাকা-পয়সা দান করা ‘জাকাত’ নামে অভিহিত। তেমনি মানব শরীরের জাকাত হলো রোজা তথা উপবাস থাকা। নির্ধারিত রমজান মাসে এবং এই উপবাস ব্রত পালনের জাকাত হলো ‘ফিতরা’।
ইসলামের মহান সাম্যবাদনীতি এই জাকাত ও ফিতরার ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই জাকাত ও ফিতরা সঠিক হিসেবে আদায় করা হলে সমাজের দুস্থ-দরিদ্র, গরিব-মিসকিনের দুঃখ-কষ্ট আংশিক হিসেবে লাঘব হবে। ফিতরা আদায় না করলে এই রোজা খোদার কাছে গৃহীত হয় না, বরং এই রোজা আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে ঝুলন্ত থাকে।
প্রাচ্য ও পশ্চাত্যের অমুসলিম কতিপয় মনীষী ও চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইসলামী প্রথায় রোজা তথা উপবাস ব্রত পালনের উপকারিতার কথা অকুণ্ঠচিত্তে স্বীকার করে তাদের ব্যক্তিগত উক্তি ব্যক্ত করেছেন। এখানে কয়েকটি বিশেষ উক্তি ব্যক্ত করা হলো-
১) মুসলামানগণ যে ধারাবাহিক প্রথায় রোজা রাখে তা চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিধানসম্মত এবং দেহের পক্ষে অতিশয় হিতকর- ডা. লিড ফার্ট, জার্মানি। ২) ইসলামী রোজা দেহ ও আত্মার প্রাণ। মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব বেশি হয় এবং এর ফলে দেহের প্রধান-প্রধান অঙ্গগুলোর ক্লান্তিলাঘব হয় এবং সেগুলো শক্তিশালী হয়- ডা. এফ এম গ্রিফি, লন্ডন। ৩) রোজা দ্বারা সমস্ত দেহ পবিত্র হয় এবং দেহের সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ বিশ্রাম নেওয়ার অবকাশ পায়, যার ফলে সেগুলোর কার্য পূর্বাপেক্ষা দ্রুততর ও সুষ্ঠু হয়- ডা. মেকারিয়াস, গ্রিস। ৪) রোজা রক্ত প্রবাহকে ঠিক রাখে এবং মেধা ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে- ডা. জিওগ্লোভিচ। ৫) ইসলাম যে রোজার বিধান দিয়েছে তা নানাবিধ আত্মিক ও দৈহিক উপকারের আকর- ডা. জি সি গুপ্ত, মুম্বই। ৬) রোজা মানুষের পাপ ও অপরাধপ্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং চিন্তাভাবনাকে কলুষিত হতে দেয় না- ডা. সি ফ্রয়েড। ৭) রোজা মানসিক রোগের প্রতিষেধক, তা আত্মাকে নির্মল পবিত্র রাখে- ডা. স্যামুয়েল আলেজান্ডার। ৮) রোজা কয়েক প্রকার ব্যাধিকে বিদূরিত করে, বিশেষত কফজনিত রোগগুলো- ডা. এম ক্লাইভ। ৯) রোজা আত্মার খোরাক- ডা. জ্যাকব। ১০) কর্কশ মেজাজের ও অবিবাহিত লোকদের জন্য রোজা পরম উপকারী। এতে মনের চিন্তাধারা পবিত্র থাকে এবং অসৎ ধারণার উদ্রেক হতে পারে না- ডা. আব্রাহাম জে হেনরি। ১১) রোজা দ্বারা মানুষের ভিতর ও বাইরের সব গ্লানি ও কলুষতা দূর হয়ে যায় এবং তা মানসিক ও দৈহিক রোগসমূহের প্রতিষেধক- ডা. জোসেফ। ১২) রোজা অন্তরে শান্তি, ধৈর্য ও স্বস্তি সৃষ্টি করে। এর দ্বারা সহনশীলতা বাড়ে এবং কষ্টসহিষ্ণুতার অভ্যাস গড়ে ওঠে- ডা. হেনরি এডওয়ার্ড। ১৩) মনের শান্তিলাভের জন্য রোজা উৎকৃষ্ট পন্থা- ডা. খান লিমার্ড। ১৪) বিপদ-আপদ ও ক্ষুধা-পিপাসার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য রোজার চাইতে অন্য কোনও ব্যবস্থা নেই- ডা. সিগার।১৫) পরলোকগত মহাত্মা গান্ধী ছিলেন নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ। তিনি অধিকাংশ সময় ব্রত পালন করতেন। নিজের ধর্মানুসারে যোগসাধনা করতেন। কিন্তু এক স্থানে ইসলামী রোজা সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, মুসলামগণ যে পদ্ধতিতে রোজা রাখে তা অন্য ধর্মীয় ব্রত ও উপবাসের সবচেয়ে উত্তম ব্যবস্থা। ইসলাম এ ব্যবস্থা মুসলমানদের শিক্ষা দিয়েছে তাদের আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধি ও আত্মশুদ্ধির উদ্দেশ্যে। সত্য বলতে কী- নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে এ ব্যবস্থা অনুসরণ করলে নানাবিধ আধ্যাত্মিক সুফল পাওয়া যায় এবং পরমাত্মার সঙ্গে যোগাযোগ ঘনিষ্ঠ হয়। ১৬) জনৈক আমেরিকান লেখক মি. ভলক্রিট লিখেছেন- অন্তরের নির্মলতা, দেহের পরিচ্ছন্নতা, আত্মার পবিত্রতা এবং চিন্তার উৎকর্ষের জন্য রোজার চাইতে উত্তম ব্যবস্থা আর কিছুই নেই যা ইসলাম তার অনুসারীদের দান করেছে। ১৭) জার্মান অধ্যাপক সোর্ড একটি পত্রিকায় লিখেছেন, বিভিন্ন ধর্মে উপবাসের মাধ্যমে অন্তরের শুদ্ধতা ও আত্মার পবিত্রতা অর্জনের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি চালু রয়েছে বটে কিন্তু নিয়মানুগতা ও মানব প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যের দিক দিয়ে এর উৎকৃষ্ট নিদর্শন একমাত্র ইসলামেই পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেছেন যে, প্রভাতের লক্ষণসমূহ প্রকাশের পূর্বে সেহরি গ্রহণ এবং সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করা বিশ্ব প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। ১৮) প-িত বিদ্যাসাগর কাশ্মীরি তাঁরই এক প্রবন্ধে লিখেছেন- ইসলামের ব্রত তথা রোজা অন্যান্য সমস্ত ব্রত থেকে উত্তম এবং এতে কোনও প্রকার দোষ-ত্রুটি নেই। ১৯) ফ্রান্সের অধ্যাপক ডি এস ফ্রোর্ড তাদের স্থানীয় এক সাপ্তাহিক পত্রিকায় লিখেছেন, ইসলামের পয়গম্বরের নির্দেশিত ইবাদত অনুষ্ঠানের মধ্যে একটি ইবাদত হচ্ছে রোজা, যা আত্মশুদ্ধি ও সংযমের একটি উৎকৃষ্ট উপায়। এর দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। এই রোজা ইসলামের প্রাণ।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।