পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের অর্থনীতির যে কয়টি প্রধান খাত রয়েছে বিশেষ করে যেগুলো রপ্তানিতে মূল ভূমিকা পালন করে সেগুলোর অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। ক্রমেই ধ্বংসের দিকে ধাবিত। এক সময়ের প্রধান রপ্তানি খাত হিসেবে পরিচিত পাটের করুণ অবস্থা। দেশের রপ্তানি খাতে ৮৩ ভাগ আয় করা গার্মেন্টস শিল্পও নানামুখী সংকটের কারণে ধীরে ধীরে পাটের পরিণতির দিকে যাচ্ছে। চামড়া শিল্পের অবস্থাও এখন নাজুক। অবস্থা দৃষ্টে মনে হওয়া স্বাভাবিক, দেশের অর্থনীতির স্তম্ভ হয়ে থাকা এই খাতগুলো অদূর ভবিষ্যতে গল্প ও স্মৃতিচারণের মধ্যে ঠাঁই নেবে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নানা সংকটে দেশের বেশিরভাগ পাটকল বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার হয়ে পড়েছে হাজার হাজার শ্রমিক। জামালপুরের সরিষাবাড়িতে ২২টি পাটকলের ২১টিই বন্ধ হয়ে গেছে। চাঁদপুরের পাটকলগুলো পুরোপুরি বন্ধ। নীলফামারির ৫টি পাটকলের ৭৫ ভাগ উৎপাদন বন্ধ। চট্টগ্রামের তিন পাটকলে ২০০ কোটি টাকার পাটজাত পণ্য আটকে স্থবির হয়ে রয়েছে। অন্যদিকে বিজিএমইএÑএর সভাপতি ড. রুবানা হক জানিয়েছেন, চলতি বছরের ফেব্রæয়ারি থেকে গত ৭ মাসে বন্ধ হয়েছে ৪৬টি গার্মেন্ট কারখানা। এতে বেকার হয়েছে ২৫ হাজার ৪৫৩ জন শ্রমিক। চামড়া শিল্পেও কমপ্লায়েন্সের ত্রæটির অভিযোগ তুলে বিদেশি ক্রেতারা চামড়াজাত পণ্য কিনতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছে। দেখা যাচ্ছে, রপ্তানি খাতের প্রধানতম তিন স্তম্ভ পাট, পোশাক ও চামড়া খাত এখন ভয়াবহ বিপর্যয়কর অবস্থার মধ্যে রয়েছে। এ শিল্পগুলোর উন্নতি দূরে থাক, টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে সরকারের তরফ থেকে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।
সরকার অর্থনীতির উন্নতি নিয়ে বেশ গর্ব করছে। জিডিপির উল্লম্ফন থেকে শুরু করে অর্থনীতির অগ্রগতিকে বিশ্বের রোল মডেল বলে চিহ্নিত করছে। এরকম একটা আবহ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে যে, বাংলাদেশ অর্থনীতিতে একটি ‘শাইনিং কান্ট্রি’, যেমনটি শ্লোগান দিয়েছিল ভারতের মোদি সরকার ‘শাইনিং ইন্ডিয়া’ বলে। অথচ দেখা যাচ্ছে, বাস্তবে এর বিপরীত ঘটনা ঘটছে। মোদির ‘শাইনিং ইন্ডিয়া’ এখন অর্থনীতিতে ‘ফেডিং ইন্ডিয়া’ বা মৃয়মাণ ইন্ডিয়ায় পরিণত হয়েছে। দেশটির অর্থনীতি ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি নি¤œগামি। বাংলাদেশে এখনও এ পরিস্থিতির সৃষ্টি না হলেও রপ্তানিমুখী অর্থনীতির প্রধানতম তিন খাত, পোশাক, পাট ও চামড়া যে করুণ পরিণতির দিকে যাচ্ছে, তাতে অর্থনীতি পর্যুদস্ত হতে বেশি সময় লাগবে না। অর্থনীতির বড় খাতগুলোর প্রতি সরকারের এ উদাসীনতা অশনি সংকেত হয়ে রয়েছে। সরকারের পুরো মনোযোগ কেবল স্থাপত্যগত উন্নয়ন এবং বড় বড় প্রজেক্টের দিকে। এ নিয়েই উন্নয়নের রঙিন চিত্র তুলে ধরছে। আগে থেকেই স্থায়ীভাবে গড়ে উঠা শিল্প খাতগুলো যে অর্থনীতির ভিত্তিকে অনেকাংশে ধরে রেখেছে, এ ব্যাপারে বেখেয়াল হয়ে রয়েছে। বিশেষজ্ঞ এবং এ সংশ্লিষ্টরা প্রতিনিয়ত হা-হুতাশ করলেও তা কানে নিচ্ছে না। ভাবছে না, এই তিন শিল্প ধ্বংস হয়ে গেলে অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে কী অপরিমেয় ক্ষতি সাধিত হবে। ইতোমধ্যে এই খাতগুলোতে ভয়াবহ ক্ষয় শুরু হয়েছে। বর্তমানে দেশের এক নম্বর এবং বিশ্বে চীনের পর দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা গার্মেন্ট খাতটি বিগত কয়েক বছর ধরে যে প্রতিকূলতা মোকাবেলা করছে, তা খাতটির ধ্বংসের প্রাথমিক ধাপ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিগত কয়েক বছরে কয়েক শ’ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার হয়েছে হাজার হাজার শ্রমিক। এখনও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। এ খাত ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। পাট শিল্পের যখন রমরমা অবস্থা এবং প্রাচ্যের ডান্ডি হিসেবে পরিচিত, তখন এ খাতটি ধ্বংসের প্রাথমিক আলামত এই পোশাক খাতের মতোই দেখা দিয়েছিল। বিষয়টি সরকার গুরুত্ব বা আমলে নেয়নি বলে তা ধ্বংস হয়ে এখন তলানিতে পড়ে আছে। সবচেয়ে বড় কথা, এর উন্নয়নে কার্যকর কোনো পদক্ষেপই নেয়া হচ্ছে না। তারপরও কৃষক পাট চাষ করে যাচ্ছে এবং তারা উৎপাদিত পাটের দাম পাচ্ছে না। যদি দামই না পাওয়া যায় এবং উৎপাদন করে গুদামে ফেলে রাখতে হয়, তাহলে এ খাত টিকবে কিভাবে? অথচ এগুলো রপ্তানি করে যে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যায়, এ বিষয়টি আমলেই নিচ্ছে না। কেবল ব্যবস্থা নিচ্ছি, পাটখাতকে লাভজনক করার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছেÑএমন বক্তব্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সরকার যদি খাতটি নিয়ে সিরিয়াস হতো, তবে শত শত পাটকল কি বন্ধ হতো? এখন যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তা রোধে কি কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে? গার্মেন্ট শিল্প যে নানা সংকটের মধ্যে পড়ে কঠিন সময় পার করছে, এ সংকট কীভাবে কাটিয়ে খাতটিকে ধরে রেখে এগিয়ে নেয়া যায়, তারও কি কোনো উদ্যোগ আছে? প্রায়ই আমরা এ খাতে কতটি কারখানা বন্ধ হচ্ছে এবং কত শ্রমিক বেকার হচ্ছে, তার পরিসংখ্যান দেখছি। এ পরিসংখ্যান যে অদূর ভবিষ্যতে আরও বেড়ে শিল্পটিকে তলানিতে নিয়ে ঠেকাবে, তা নিয়ে কি সরকারের কোনো ভাবনা আছে? বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, যতক্ষণ না পর্যন্ত শিল্পটি ধ্বংস হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সরকারের হুশ হবে না। চামড়া শিল্প নিয়ে এখন যা চলছে, তা ধ্বংসেরই নামান্তর। এর উন্নয়নে সাভারে শিল্পপার্ক করে দেয়া হলেও তাতে কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। তার অর্থ হচ্ছে, এ শিল্পটিও ধুঁকছে এবং ধ্বংসের দিকে ধাবিত। আমরা কি দেশের অন্যতম প্রধান এই তিন শিল্পের ধ্বংস চেয়ে চেয়ে দেখব?
সরকার কেবল বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাÐ দেখিয়ে অর্থনীতির একটি রঙিন ফানুস উড়িয়ে চলেছে। অর্থনীতির বাস্তব পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি দিচ্ছে না। প্রতিষ্ঠিত শিল্পখাতগুলোকে টিকিয়ে রেখে উন্নয়ন ঘটানোর কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে তেমন কোনো আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। আজ যদি পাটের মতো গার্মেন্ট শিল্প ¤্রয়িমান হয়ে পড়ে, তখন কী হবে? এর প্রতিক্রিয়া অর্থনীতিতে, কর্মসংস্থানে এবং সামাজিক খাতে কত বড় ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটাবে, তা কি সরকার উপলব্ধি করতে পারছে? বলার অপেক্ষা রাখে না, শ্রমঘন এই শিল্প খাতগুলো ধরে রাখা এবং উন্নয়ন ঘটানো গেলে দেশ থেকে যে হাজার হাজার তরুণ বিদেশ চলে যাচ্ছে, এগুলোর মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থান হলে বিদেশ যাওয়া অনেকাংশে হ্রাস পাবে। বেকারত্বের হারের গ্রাফও নিচের দিকে থাকবে। আমরা মনে করি, অর্থনীতির অপরিমেয় সমৃদ্ধির উৎস এ খাতগুলোর সমস্যার নিরসন সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ প্রয়োজন। খাতগুলো রক্ষায় সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যথাযথ দৃষ্টি দেয়া এবং দিক নির্দেশনা দেয়াও জরুরি হয়ে পড়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।