Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাইপ লাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের উদ্যোগ

| প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

দেশীয় খনি থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা বাংলাদেশে অনেক পুরনো। সেই প্রাকৃতিক গ্যাস ক্রমে নিঃশেষিত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে এসে সরকার আমদানিকৃত এলএনজি দিয়ে চাহিদা পূরণের বিকল্প ব্যবস্থা করছে। গত বছর মহেশখালীর মাতারবাড়িতে নির্মিত এলএনজি টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পাইপ লাইনের মাধ্যমে এলএনজি সরবরাহ ব্যবস্থা আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। আমদানিকৃত লিকুইড গ্যাস সঞ্চালনে সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এবার চট্টগ্রামের পতেঙ্গা টার্মিনাল থেকে পাইপ লাইনে ঢাকা পর্যন্ত সরাসরি পাইপ লাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত¡াবধানে বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম কর্পোরেশনের(বিপিসি) এই প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক এই মেগা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আগামী বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার টার্গেট নিয়ে ভূমি অধিগ্রহণসহ প্রথম পর্যায়ের কাজের জন্য সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের অনুকূলে ইতোমধ্যে ১ হাজার ৫৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বিপিসি পরিশোধ করেছে বলে জানা যায়। আর এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জ্বালানি খাত এক নতুন যুগে পদার্পণ করতে চলেছে। তেল উৎপাদিত দেশগুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই পাইন লাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ ও জাহাজিকরণ করলেও বাংলাদেশের জ্বালানি তেল সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়নে বর্তমান সরকারের প্রয়াস সত্যি মাইল ফলক ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

সহজে নিশ্চিত জ্বালানি সরবরাহ যে কোনো রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অগ্রগতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। সরকার বিদ্যুৎখাতের উন্নয়নে বেশ কয়েকটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শেষ হতে চলেছে। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজও দ্রæত গতিতে এগিয়ে চলেছে। দেশের ট্রান্সমিশন লাইনে গ্যাসের চাপ কমে আসায় এলএনজির মাধ্যমে চাহিদা পূরণের সমযোপযোগী উদ্যোগের পর পাইপ লাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের উদ্যোগ নানাভাবে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করবে বলে আশা করা যায়। বিদ্যমান ব্যবস্থায় জাহাজে বা ট্যাংকারে করে নৌপথে এবং সড়ক ও রেলওয়াগনে জ্বালানি তেল সরবরাহে নানা ধরনের জটিলতা, অপচয়-অব্যবস্থাপনা, ব্যয়বহুল ও পরিবেশগত ঝুঁকি আছে, পাইপ লাইনে তেল সরবরাহ করা শুরু হলে তা অনেকটাই কমে আসবে বলে আশা করা যায়। প্রতিদিন হাজার হাজার ব্যারেল জ্বালানি তেল রিফাইনারি থেকে সারাদেশে সরবরাহ নিশ্চিত করতে নৌপথে, সড়কপথে ও রেলপথে অসংখ্য অয়েল ট্যাংকার ও ওয়াগন ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব ব্যবস্থায় চুরি, দুর্নীতি, অপচয় ও পরিবেশগত ক্ষতির পাশাপাশি সড়ক, রেল ও নৌপথের উপর বাড়তি চাপের সৃষ্টি হচ্ছে। দুর্ঘটনা, যানজট ও সড়কের উপর অতিরিক্ত চাপের অর্থনৈতিক ক্ষতিও অনেক। পাইপ লাইনে জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা জ্বালানি খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। পথের বিড়ম্বনা, সময়ক্ষেপণ, অপচয় ও নানাবিধ ঝক্কি এড়িয়ে দ্রæততম সময়ে জ্বালানি সরবরাহের এই উদ্যোগ আরো আগে গ্রহণ করা হলে শত শত কোটি টাকার অপচয় থেকে বাঁচত দেশ।

প্রাথমিক পর্যায়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা জ্বালানি টার্মিনাল থেকে ঢাকায় সরাসরি জ্বালানি তেল সরবরাহের উদ্দেশ্যে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল, ফতুল্লা ডিপো পর্যন্ত ২৩৭ কিলোমিটার এবং কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া চলছে। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিরিয়ারিং ব্রিগেডের হাতে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব অর্পিত হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে এবং মানসম্মতভাবে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়িত হবে বলে সকলে বিশ্বাস করে। অন্যান্য অনেক মেগা প্রকল্পের মতো এই প্রকল্প অহেতুক দীর্ঘসূত্রতা বা খাম-খেয়ালির শিকার হবে না বলেই সংশ্লিষ্ট সকলের প্রত্যাশা। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত তেলের পাইপ লাইন স্থাপনের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে, রেললাইনে অয়েল ট্যাঙ্কার চলাচল বন্ধ হলে মহাসড়কের উপর যানবাহনের চাপ অনেকটাই কমে আসতে পারে। সেই সাথে নৌপথে অয়েল ট্যাঙ্কার পরিবহনের কারণে পানি দূষণ, জ্বালানি চুরি, অপচয় এবং খরচের হিসাব কমে আসার ফলে জ্বালানি খাতে খরচ ও ভর্তুকির বোঝা কমিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে। বর্তমানে বছরে ৬০ লাখ টন পেট্রোলিয়ামজাত জ্বালানি চাহিদার বিপরীতে চাহিদার প্রবৃদ্ধি অব্যাহত গতিতে বাড়ছে। এহেন বাস্তবতায় তেলের পাইপ লাইন জ্বালানি খাতে এক ধরনের শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হবে। শুধু রাজধানী ঢাকা পর্যন্তই নয়, জ্বালানি তেলের পাইপ লাইন ক্রমান্বয়ে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল পর্যন্ত সম্প্রসারিত করতে হবে। জ্বালানি সরবরাহে পাইপ লাইন স্থাপনের সাথে সাথে এটি একটি বিশেষ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হিসেবে বিবেচ্য হবে। এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং নজরদারির বিষয়ে আগেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অতীতে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে তার প্রায় সবগুলোতেই সন্তোষজনকভাবে সফল হয়েছে। জ্বালানি তেলের জাতীয় পাইপ লাইন গ্রিড স্থাপনেও তারা সফল হবে এই প্রত্যাশা সকলের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন