শনিবার ভোররাতে চাঁদে দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছানোর কথা ছিল ভারতের চন্দ্রযান-২-এর। প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার এ চন্দ্রযান-২-এর সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গেই ইতিহাস রচনা হতো ভারতের। চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করলেই, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীনের পরেই ভারতের স্থান হতো। পাশাপাশি প্রথমবারেই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে অবতরণের রেকর্ডও দখলে আসত ভারতের। কিন্তু এসবের কিছুই হয়নি। কক্ষপথে ঢুকে দ্রæতগতির কারণে চাঁদের মাটিতে আছড়ে পড়ে নভোযানটি। যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায় ইসরোর সঙ্গে।
সফলগাঁথা রচনা করতে পারেনি চন্দ্রযান-২। এমন ব্যর্থতা ইসরোপ্রধান শিবনকে কতটুকু পোড়াচ্ছে তার বর্ণনা দিয়েছেন এক কাশ্মীরি সাংবাদিক।
এ বিষয়ে ইসরোপ্রধানকে উদ্দেশ করে দ্য কুইন্ট নামে একটি ইংরেজি পোর্টালে চিঠিও লিখেছেন সৈয়দ ফাইজান বুখারি নামের ওই কাশ্মিরী সাংবাদিক।
‘শ্রদ্ধেয় ইসরোপ্রধান, একজন কাশ্মীরি হিসেবে আমি অনুভব করি প্রিয়জনের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে তা কতটা যন্ত্রণার’ শিরোনামে সেই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আপনাকে ও আপনার দলকে অভিনন্দন যে, ভারতের জন্য গর্ব বয়ে আনতে আপনার যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে অন্তিম মুহূর্তে গিয়ে চন্দ্রাজিযান-২ এর ল্যান্ডার বিক্রমের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
আমি জানি, আপনি ভারতকে গর্বিত করতে চান? কে না চায়? একজন ভারতীয় হিসেবে আমিও ভারতকে গর্বিত করতে চাই।
সফলতার এতো কাছাকাছি পৌঁছেও চাঁদের সঙ্গে আপনার যোগযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। এতে আপনি বিপর্যস্ত। ‘বিক্রম’-এর সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হওয়ার পর আপনি প্রকাশ্যেই ভেঙে পড়েন। আর আপনার এ কষ্ট আমি তিলে তিলে টের পাচ্ছি।
কেবল কাশ্মীরিরাই আপনার এ কষ্ট বুঝতে পারবে। কারণ আপানার মতোই কাশ্মীরে আমার যে চাঁদ রয়েছে তার (মায়ের) সঙ্গে গত এক মাস ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।’
ফাইজান আরও লেখেন, ‘আপনি ভাগ্যবান। প্রধানমন্ত্রী আপনাকে জড়িয়ে ধরে সান্তনা দিয়েছেন। কিন্তু দেখুন কতটা হতভাগ্য আমি! এক মাস ধরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছি। কেউ সান্তনা দিতে, সহমর্মিতা জানাতে আসেননি। আমার মতো হাজারও কাশ্মীরির একই অবস্থা। জড়িয়ে ধরা তো দূরের কথা, আমাদের জন্য একটি শব্দও খরচ করেননি প্রধানমন্ত্রী।’
ফাইজান লেখেন, ‘স্যার, আপনার ও আমার মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। আপনি বিক্রম ল্যান্ডারের সঙ্গে সংযোগ পেতে মরিয়া। আমিও আমার মা, পরিবার ও ছোট ভাইবোনদের খবর নিতে গত এক মাস ধরে মরিয়া হয়ে আছি। কিন্তু পার্থক্য হলো আপনাকে সব ধরনের সহায়তা করছে সরকার। আপনাকে আশ্বস্ত করছে, স্বান্তনা দিচ্ছে। কিন্তু আমার মায়ের খবর এনে দিচ্ছে না কেউ।’
সবশেষে আপ্লুত ভাষায় ফাইজান লেখেন, ‘হয়ত বিক্রমের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন সংযোগ ফিরে পাবেন আপনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনাকে প্রশংসায় ভাসাবে ভারতবাসী। সরকার আপনাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করবে। কিন্তু তখনও আমি মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে একাকী প্রহর গুনতে থাকব।’
এভাবেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন কাশ্মীরিদের যন্ত্রণা ফুটিয়ে তুলে ইসরোপ্রধানকে খোলা চিঠি দিলেন এক কাশ্মীরি।
প্রসঙ্গত খুঁজে পাওয়া গেছে বিক্রম ল্যান্ডার। এটি চাঁদের পৃষ্ঠে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছেন ইসরোপ্রধান শিভান। তিনি জানান, চন্দ্রযানটির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।