নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ঘূর্ণি উইকেট বানিয়ে পেসারবিহীন একাদশ নামিয়েছিল বাংলাদেশ। চার বিশেষজ্ঞ স্পিনারের সঙ্গে অনিয়মিত আরও তিন স্পিনার দিয়ে আফগানিস্তানকে কাবু করার ফাঁদ পাতা ছিল চট্টগ্রামে। বাংলাদেশের স্পিনে খুব একটা কাবু হয়নি আফগানিস্তান। কিন্তু আফগানিস্তানের স্পিনে পুরো কুপোকাত বাংলাদেশ। টেস্টে একেবারে নবিশ আফগানদের বিপক্ষে দলের এই অবস্থায় উঠছে কতগুলো প্রশ্নও।
ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় আফগানদের ৩৪২ রানের জবাবে ৮ উইকেটে ১৯৪ রান নিয়ে গতকাল দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে সাকিব আল হাসানের দল। হাতে মাত্র ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে ১৪৮ রানে। আটে নামা মোসাদ্দেক হোসেন ৪৪ ও দশে নামা তাইজুল ইসলাম ব্যাট করছেন ১৪ রান নিয়ে। নবম উইকেটে ৪৮ রানের জুটিতে তারা গড়েছেন প্রতিরোধ। তবে ম্যাচ পরিস্থিতি বলছে, এই টেস্টের নিয়ন্ত্রণ এখন পুরোটাই আফগানদের হাতে।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান আসগর আফগান ও আফসার জাজাইয়ের বিদায়ের পর আফগানিস্তানকে সাড়ে তিনশো ছোঁয়া সংগ্রহ পাইয়ে দেন অধিনায়ক রশিদ খান। আসগর প্রথম সেঞ্চুরিবঞ্চিত হয়েছেন ঠিকই তকে দলকে এ পর্যন্ত টেনে নেয়ার কৃতিত্বটা ঠিকই প্রাপ্য। তবে ঝড়ো গতিতে টেস্টে নিজের প্রথম হাফসেঞ্চুরি তুলে রশিদ থামেন ৫১ রান। এরপর বল হাতেও তিনি অনবদ্য। বাংলাদেশের পাতা স্পিন ফাঁদের ফায়দা তুলে নিয়ে বিপদে ফেললেন সাকিব আল হাসানদেরই। নিলেন ৪ উইকেট। তার অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আফগানরা।
সেট হয়ে আউট হন সৌম্য সরকার-লিটন দাস। হতাশ করেন অধিনায়ক সাকিব-মুশফিকুর রহিমও। মাহমুদউল্লাহ দেখাতে পারেননি দৃঢ়তা। গড়ে ওঠেনি ভালো কোনো জুটি। আফগান স্পিনারদের ওপর দাপট দেখাতে পারেন কেবল মুমিনুল হক। তার ব্যাট থেকে আসে ৭১ বলে ৫২ রান। এই টেস্টে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের আক্ষেপটি আরো বড়। চট্টগ্রামের এই সাগরিকায় আগে ৬ বার ফিফটি করে প্রতিটিকেই সেঞ্চুরিতে রূপ দিয়েছিলেন টেস্ট ক্রিকেটের ‘পকেট রকেট’ খ্যাত মুমিনুল। তার বিদায়ে ফলোঅনের যে শঙ্কা উঁকি দিয়েছিল বাংলাদেশ দলে তা কাটিয়ে বিদায় নেন মিরাজও। তবে শেষ বিকেলে আশার প্রদীপ জ¦ালিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছেন মোসাদ্দেক (৭৪ বলে ৪৪ রান) ও তাইজুল (৫৫ বলে ১৪ রান)। এখনও আফগানদের থেকে ১৪৮ রানে পিছিয়ে সাকিবরা। হাতে রয়েছে মাত্র ২ উইকেট। আজ তৃতীয় দিনে বিস্ময়কর কিছু না ঘটলে বেশ বড় লিড পেতে যাচ্ছে আফগানিস্তান।
বিপর্যস্ত এক দিন শেষে অধিনায়ক নিজেই এলেন সংবাদ সম্মেলনে। উইকেট নিয়ে প্রকাশ্যেই ঝাড়লেন নিজের হতাশা। উইকেটে সুবিধা থাকলে তবেই প্রতিপক্ষকে চেপে ধরতে পারে বাংলাদেশ। তবে আফগানিস্তানের যেহেতু তিনজন রিস্ট স্পিনার আছে, তারা তাই ফ্লাট উইকেটেও পারেন বল ঘোরাতে। এমন যুক্তিতে উইকেটে নিজেদের স্পিনারদের জন্য সুবিধা না থাকার হতাশা স্পষ্ট করেন সাকিব, ‘আমরা সবাই অনেক বিস্মিত। কারণ আমরা এমন আশা করিনি। আমরা যেমন আশা করেছিলাম, তার পুরো বিপরীত ছিল (উইকেট)। তার মানে এই না যে আমরা ভালো কিছু করতে পারব না। কিন্তু অবশ্যই আমাদের প্রত্যাশার বাইরে ছিল।’
উইকেট এমন থাকাতে টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া আফগানিস্তান ৩৪২ রান করায় অবাক হননি সাকিব। অবাক হয়েছিলেন প্রথম দিনে মাত্র ৫ উইকেট নিতে পেরে, ‘অবাক হয়েছিলাম যখন প্রথম দিন আমরা ৫ উইকেট পেয়েছিলাম। কারণ ফ্ল্যাট উইকেটে অনেকদিন পর আমরা খেলেছি বলে মনে হয়।’ দ্বিতীয় দিন পরও উইকেট খুব একটা বদলায়নি। যদিও বাংলাদেশ দুইশো পেরুনোর আগেই খুইয়ে বসেছে ৮ উইকেট। এর মধ্যে রিস্ট স্পিনাররা পান ৫ উইকেট, ‘খুব একটা কিন্তু ফিঙ্গার স্পিনারদের জন্য উইকেট বদলেছে বলে মনে হয় না। রিস্ট স্পিনাররা সব সময় সাহায্য পাবে। কারণ রিস্ট স্পিনারদের ভেতরও ওদের বৈচিত্র্য আছে। কাজেই ওদের একটু সুবিধা অবশ্যই থাকবে।’
কোনো পেসার ছাড়া নেমেছিল বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞ চার স্পিনারের পাশাপাশি স্পিন করতে পারেন অনিয়মিত এমন আরও তিনজন ছিলেন দলে। বাংলাদেশ কেমন উইকেট চেয়েছিল তাতেই স্পষ্ট ছিল। তা না পাওয়ায় হতাশা আড়াল করলেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘অবশ্যই হতাশার। কিন্তু আসলে এটা নিয়ে আলোচনা করে বা চিন্তা করে লাভ হবে না। এখন এখান থেকে কীভাবে ফিরে আসতে পারি তা নিয়ে ভাবতে হবে। আমরা যেভাবে দল সাজিয়েছে, হয়তো আপনারা বুঝবেন কি ধরনের উইকেট আমরা আশা করেছিলাম। স্বাভাবিকভাবে অনেক সময় অনেক কিছুর কারণে সম্ভব হয় না।’
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-আফগানিস্তান, একমাত্র টেস্ট
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম
টস : আফগানিস্তান (ব্যাটিং)
আফগানিস্তান ১ম ইনিংস : ১১৭ ওভারে ৩৪২ (আগের দিন ৯৬ ওভারে ২৭১/৫, ইব্রাহিম ২১, রহমত ১০২, আসগর ৮৮*, আফসার ৩৫*; তাইজুল ২/৭৩, সাকিব ০/৫০, মিরাজ ০/৫৯, নাঈম ২/৪৩, মাহমুদউল্লাহ ১/৯)
রান বল ৪ ৬
আসগর ক মুশফিক ব তাইজুল ৯২ ১৭৪ ৩ ২
আফসার বোল্ড তাইজুল ৪১ ১১৫ ৪ ১
রশিদ ক এন্ড ব মিরাজ ৫১ ৬১ ২ ৩
কাইস ক মুমিনুল ব সাকিব ৯ ১৫ ১ ০
ইয়ামিন ক সৌম্য ব সাকিব ০ ৭ ০ ০
জহির অপরাজিত ০ ৫ ০ ০
অতিরিক্ত (লেবা ১, নো ২) ৩
মোট (অলআউট, ১১৭ ওভারে) ৩৪২
উইকেট পতন : ১-১৯ (ইহসানউল্লাহ), ২-৪৮ (ইব্রাহিম), ৩-৭৭ (হাশমতউল্লাহ), ৪-১৯৭ (রহমত শাহ), ৫-১৯৭ (মোহাম্মদ নবী, ৬-২৭৮ (আসগর), ৭-২৯৯ (আফসার), ৮-৩২২ (কাইস), ৯-৩২৭ (ইয়ামিন), ১০-৩৪২ (রশিদ)।
বোলিং : তাইজুল ৪১-৫-১১৬-৪, সাকিব ২২-১-৬৪-২, মিরাজ ২৮-৫-৭৩-১, নাঈম ১৩-০-৪৩-২, মাহমুদউল্লাহ ৪-০-৯-১, সৌম্য ৪-০-২৬-০, মুমিনুল ৪-০-৯-০, মোসাদ্দেক ১-০-১-০।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস রান বল ৪ ৬
সাদমান ক আফসার ব ইয়ামি ০ ৪ ০ ০
সৌম্য এলবি ব নবি ১৭ ৬৬ ০ ০
লিটন বোল্ড রশিদ ৩৩ ৬৬ ৩ ১
মুমিনুল ক আসগর ব নবি ৫২ ৭১ ৮ ০
সাকিব এলবি ব রশিদ ১১ ২০ ১ ০
মুশফিক ক ইব্রাহিম ব রশিদ ০ ২ ০ ০
মাহমুদউল্লাহ বোল্ড রশিদ ৭ ১৩ ১ ০
মোসাদ্দেক ব্যাটিং ৪৪ ৭৪ ১ ২
মিরাজ বোল্ড কাইস ১১ ৩১ ১ ০
তাইজুল ব্যাটিং ১৪ ৫৫ ২ ০
অতিরিক্ত (বা ৪, লেবা ১) ৫
মোট (৮ উইকেট, ৬৭ ওভারে) ১৯৪
উইকেট পতন : ১-০ (সাদমান), ২-৩৮ (সৌম্য), ৩-৫৪ (লিটন), ৪-৮৮ (সাকিব), ৫-৮৮ (মুশফিক), ৬-১০৪ (মাহমুদউল্লাহ), ৭-১৩০ (মুমিনুল), ৮-১৪৬ (মিরাজ)।
বোলিং : ইয়ামিন ১০-২-২১-১, নবি ২২-৬-৫৩-২, জহির ৯-১-৪৬-০, রশিদ ১৮-৩-৪৭-৪, কাইস ৮-২-২২-১।
*দ্বিতীয় দিন শেষে
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।