নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
হুট করেই দেশের ক্রিকেটে দুর্দিন। বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়েও হয়েছে বেহাল দশা। কেবল জাতীয় দলই নয়, এই সময়ে ‘এ’ দল, ‘এইচপি’ দলের কাছ থেকেও মিলছে না স্বস্তির সুবাতাস। ব্যতিক্রম কেবল নারী দল। স্কটল্যান্ডে টি-২০ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অপরাজিত গ্রæপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই সেমিফাইনালে উঠেছে সালমা খাতুনের দল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি তাই অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের কাছে দেশের ক্রিকেট থেকে গুমোট ভাব সরানোর মিশন।
আফগানদের বিপক্ষে আট ওয়ানডে খেলে পাঁচটিতে জিতেছে বাংলাদেশ, হেরেছে তিন ম্যাচ। দু’দলের টি-টোয়েন্টি রেকর্ডে আবার বেশ এগিয়ে আফগানিস্তান। চার ম্যাচের তিনটাই জিতেছেন রশিদ খানরা। বাংলাদেশের জয় একটাই। কিন্তু সংস্করণ যখন টেস্ট, অভিজ্ঞতায় সেখানে অনেক অনেক এগিয়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের বিপক্ষে নামার আগে আফগানিস্তানের টেস্ট অভিজ্ঞতা মাত্র দুই ম্যাচের। ১৯ বছর ধরে টেস্ট খেলে আসা বাংলাদেশ খেলে ফেলেছে ১১৪ ম্যাচ।
স্বাভাবিকভাবেই এমন দলের বিপক্ষে ম্যাচে পরের সিরিজের প্রস্তুতির কথাও মাথায় রাখা যায়-ই। আগামী নভেম্বরে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে নামার আগে এই ম্যাচকে তাই প্রস্তুতির মঞ্চ ভাবারও সুযোগ ছিল সাকিবদের। কিন্তু দেশের ক্রিকেটের মুখগোমড়া সময়ে অমন করে ভাবার ফুরসৎ পাচ্ছেন না অধিনায়ক। এই ম্যাচ থেকে আপাতত স্বস্তি বের করাই বাংলাদেশ দলের মূল লক্ষ্য, ‘আমি যেখান থেকে দেখছি, যেহেতু আমাদের শেষ কিছু দিন ভালো সময় কাটেনি। সবদিক থেকে, সেটা ‘এ’ দল বলেন, একাডেমি বলেন, কোথাও আমরা ভালো পারফর্ম করতে পারিনি। কেবল অনূর্ধ্ব-১৯ দল ফাইনাল খেলেছে ইংল্যান্ডে। আর মেয়েরা বিশ্বকাপ বাছাইয়ে দারুণ করছে। সেদিক থেকে চিন্তা করলে আমাদের জন্য এই ম্যাচটি খুবই গুরুত্বপুর্ণ। কারণ আমরা যদি এই ম্যাচ ভালোভাবে জিততে পারি, আমার কাছে মনে হয়, অনেক কিছুই আবার একটু স্বাভাবিক হতে শুরু করবে।’
‘ভালোভাবে জিততে পারি’, তার মানে দাঁড়াল- বাংলাদেশ কেবল জিততেই চায় না, বড় ব্যবধানে জিততে চায়। কিন্তু তেমনটি আসলে নয়। অধিনায়ক নিজেকে শুধরে জানালেন, ভালোভাবে জেতা মানে আসলে যে কোনোভাবে জেতাই, ‘জয়টাই গুরুত্বপূর্ণ। ১ রানে জিতলেও সেটা জেতা, ১০০ রানে জিতলেও জেতা। ১ উইকেট বা ১০ উইকেট যেভাবেই জিতি। জেতাটাই আসল।’ প্রতিপক্ষ যেমনই হোক, সেই কাক্সিক্ষত জয়টি পেতে হলে কি করতে হবে সেটিও ভালোভাবেই জানা অভিজ্ঞ এই দলনেতার। আগে ছিল যেমন যে (উইকেটে) থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ। এখন থাকার সঙ্গে রানও করতে হয়। দুটি দিকই থাকতে পারে। একেকজনের জন্য একেকটি গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই কারণের মধ্যে সাকিব জানালেন তিনি আগ্রাসী ছিলেন আত্মবিশ্বাস পেতে, ‘আমি জানি না মুশফিক ভাই কি কারণে পজিটিভি খেলেছেন। আমার অনেক সময় আত্মবিশ্বাস একটু নিচে থাকে, কিছু শট খেললে শরীর খুলে যায়, এ কারণে অনেক সময় হতে পারে (আগ্রাসী ব্যাটিং)।’
আফগানিস্তান টেস্টে বেশ কয়েকজন মানসম্পন্ন স্পিনারের বিপক্ষে খেলতে হবে বাংলাদেশকে। রশিদ খানের লেগ স্পিনের সঙ্গে আছেন চায়নাম্যান জহির খান। আছেন সীমিত পরিসরের ক্রিকেটে সফলতা পাওয়া অভিজ্ঞ অফ স্পিনার মোহাম্মদ নবী। আরেক লেগ স্পিনার কাইস আহমেদকে একাদশে খেলিয়ে দিলে সারাক্ষণই রিস্ট স্পিনার সামলাতে হবে সাকিব-মুশফিকদের। গতকাল নেটে তেমন কয়েকজন বোলার জড়ো করে সমানে তাই আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট চালাচ্ছিলেন সাকিব-মুশফিকরা। কিন্তু টেস্টে তো দরকার টিকে থাকা, দরকার লম্বা সময়ের ধৈর্য। তাই অনেকটা বৈসাদৃশ্য চোখে লাগলেও এমন ব্যাটিং অনুশীলন একদম অকারণে নয়। অধিনায়ক জানালেন মূলত দুই কারণে এমন অ্যাপ্রোচ ছিল তাদের, ‘দুইটি দিক আছে। একটি দিক আছে যে, অনেক সময় ব্যাটসম্যানরা আত্মবিশ্বাস অনুভব করার জন্য কিছু শট খেলে। শট লাগলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। দ্বিতীয়ত, একজন ব্যাটসম্যান কখনোই সেট নয়, যতক্ষণ না রান করছে। আপনি যদি ১০০ বলে ১০ করেন, তখনও আপনি সেট নন। কিন্তু ১০ বলে ৪০ বা ৫০ করলে সেট। তো রান করতে হবে। উইকেটে শুধু পড়ে থাকাই এখনকার টেস্ট ক্রিকেট নয়।’
সেটি করতে হলে অন্যদের মতো দায়িত্ব নিতে হবে নিজের কাঁধেও। তাইতো ব্যাটিংয়ে নিজের অবস্থানও পরিবর্তন করার পক্ষে বাংলাদেশ অধিনায়ক। ওয়ানডেতে তিন নম্বরে ব্যাট করার ভাবনা ছিল তার নিজেরই। টিম ম্যানেজমেন্টকে অনেকভাবে বুঝিয়ে তবেই রাজী করিয়েছিলেন এই পরিবর্তনে। সেখানে সাফল্য তাকে অনুপ্রাণিত করতে পারে টেস্টেও ওপরে উঠে আসতে।
টেস্টে কেবল ৪টি ইনিংসে ব্যাট করেছেন ৪ নম্বরে। বাকি সব ইনিংস আরও নিচে। পাঁচে খেলেছেন ৪৫ ইনিংস, ছয়ে ৩৬ ইনিংস, সাতে ১৬ ও আটে ২ ইনিংস। দলের সেরা ব্যাটসম্যানরা সাধারণত ব্যাট করে থাকেন প্রথম চারেই। তবে বোলিংয়ের ভার ও পারিপার্শ্বিকতা মিলিয়ে এখনই টেস্টে নিজেকে ওপরে তুলতে চাইছেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘যেহেতু অনেক ওভার বোলিং করতে হয়, বিশেষ করে আমাদের দেশে বা উপমহাদেশে, এত ওভার বোলিং করে আবার ওপরে ব্যাট করা কঠিন। গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে চারে ব্যাট করেছিলাম। তবে সত্যি কথা হলো, তিন-চারে ব্যাটিং করলে, দ্রæত উইকেট পড়ে গেলে, ২৫-৩০ ওভার বোলিং করে আবার তখনই ব্যাটিং করা কঠিন। একজন ব্যাটসম্যানের জন্য টেস্টে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার মনোযোগ। আর মনোযোগ ধরে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো, কতটা তরতাজা অবস্থায় ব্যাট করা যায়। এজন্য একটু পরে ব্যাট করাটাই আমার জন্য মনে হয় ভালো।’
৪ নম্বরে যে ৪ ইনিংস ব্যাট করেছেন, খুব খারাপ করেননি সাকিব। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে ২ ইনিংসে করেছিলেন ৫৯ ও ৮। গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে কিংস্টনে ব্যাটিং প্রতিকূল উইকেটে করেছিলেন ৩২ ও ৫৪। তবে আগে অনেকবারই সাকিব বলেছেন, কোনো একদিন বোলিংয়ে নিজের চাপ একটু কমিয়ে দিতে চান। তাই ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ব্যাটিং অর্ডারে বদলের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেন না। ‘যদি কখনও ওরকম সুযোগ আসে যে বোলিং কমিয়ে দিচ্ছি বা ওরকম কিছু, হয়তো ইচ্ছে আসতেও পারে যে ওপরের দিকে ব্যাট করলাম।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।