পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভাদ্রের তাল পাকা রোদে ছায়ার নিচে দাঁড়ানো কঠিন। প্রচন্ড রোদে পিচ ঢালা পথ যেনো উনুনে পরিণত হয়েছে। গরম আর ঘামে সবার ত্রাহি অবস্থা। মাথা পুড়ছে সূর্যের তাপে, দুই পাশে কংক্রিটের ভবন আর পায়ের নিচে উত্তপ্ত পিচ ঢালা পথ। এরই মধ্যে মাথায় লাল-সবুজের পতাকা বাধা, এক হাতে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি সম্বলিত প্লেকার্ড, অন্য হাত মুষ্টিবদ্ধ, হাটি হাটি পায়ে বজ্র কণ্ঠে শ্লোগান মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। রাজধানী ও এর আশপাথে থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে উপস্থিত হয়ে লাখো কণ্ঠে এই এক আওয়াজে প্রকম্পিত করে তুলেন গোটা এলাকা। বিএনপির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল সোমবার রাজধানীতে বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করে দলটি। দুপুর ২টায় র্যালির সময় নির্ধারণ করা হলেও সকাল ১১টা থেকেই নয়াপল্টনে জড়ো হতে থাকেন বিএনপি ও এর অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
বেলা বাড়ার সাথে সাথে নয়াপল্টন ভরে ওঠে মানুষ আর মানুষে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে আসা নেতাকর্মীদের উপস্থিতি একদিকে নাইটিঙ্গেল মোড় অন্যদিকে ফকিরাপুল ছাড়িয়ে যায়। এছাড়া ওই সড়কের আশপাশের অলিতে গলিতে নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। তখনও খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনমুখী ছিল ঢাকা ও এর আশাপাশের জেলার নেতাকর্মীরা। হাতে হাতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ব্যানার, ফেস্টুন, প্লেকার্ড আর মুখে মুক্তির দাবিতে শ্লোগান দিতে দিতে তারা র্যালিস্থলে উপস্থিত হয়ে জনতার স্রোতে মিলে যান। নেতাকর্মীরা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বড় বড় প্রতিকৃতি হাতে ‘শুভ শুভ শুভদিন, বিএনপির জন্মদিন’, ‘স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া, লও লও লও সালাম’, ‘এক জিয়া লোকান্তরে, লক্ষ জিয়া ঘরে ঘরে’, ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’, শ্লোগান দেন।
নির্ধারিত সময়ের আগেই নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পিকআপ ভ্যানের ওপর নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চে বক্তব্য শুরু করেন বিএনপি নেতারা। দুপুর ২টার পর সেখানে উপস্থিত হন বিএনপি মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র নেতারা। ততক্ষণে কাকরাইল-নাইটিঙ্গেল, বিজয়নগর, ফকিরাপুল এলাকায় র্যালিতে অংশ নিতে আসা নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে পরিণত হয়। বিকাল তিনটায় নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে র্যালি শুরু করার ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব। কিন্তু র্যালিতে বিপুল সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণের কারণে সেটি শুরু হয় কাকরাইল থেকে। আর র্যালির অন্যপ্রান্ত তখনো ছিল ফকিরাপুলে। র্যালিটি যখন শান্তিনগরে ঘুরে আবারও নয়াপল্টনের দিকে আসে তখনও র্যালির শেষ অংশ নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় পার করে নাইটিঙ্গেল মোড়ের দিকে।
র্যালিতে দলীয় ও জাতীয় পতাকা, রঙ-বেরঙের ব্যানার-ফেস্টুন, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতিকৃতিসহ নানা বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মীরা এই শোভাযাত্রা অংশ নেয়। শোভাযাত্রায় মশারী টানিয়ে মহানগর দক্ষিণের নেতাকর্মীরা এসিড মশা প্রতিরোধে জনসচেতনতার বিষয়টি তুলে ধরে। বিএনপির শোভাযাত্রা দেখতে রাস্তার দুই ধারে দাঁড়ানো পথচারীদের করতালি দিতে দেখা গেছে। র্যালিতে মহানগর বিএনপি উত্তর-দক্ষিণ, মুক্তিযোদ্ধা দল, যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, কৃষক দল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের লাখো নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।
শোভাযাত্রা শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, মানুষের বিরুদ্ধে কাজ করছে, জনগণ থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দেশনেত্রীকে আটকিয়ে রেখে জনগণকে মিথ্যা মামলায় দিয়ে নির্যাতন করে, হত্যা করে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতায় রাজপথের আন্দোলন সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যদি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চাই, তারেক রহমান সাহেবকে যদি দেশে ফিরিয়ে আনতে চাই তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই ত্যাগ স্বীকার করে রাজপথে এসে এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে আন্দোলন করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, পৃথিবীর কোনো স্বৈরশাসক এভাবে টিকে থাকতে পারেনি। তাই আজকে বাংলাদেশের সমস্ত মানুষকে জাগ্রত করতে হবে। বিএনপির দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। কারণ বিএনপি হচ্ছে সেই দল, যে দল তৈরি করেছিলেন স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্র্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তিনি এই দলের প্রতিষ্ঠাতা। বাংলাদেশের সমস্ত দেশপ্রেমিক মানুষকে এক করে এই দল তিনি তৈরি করেছিলেন। ৪০ বছরে বিএনপি পাঁচ বার জনগণের ভোটে রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেছে। বিএনপি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ৯ বছর আপোষহীন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আবার গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে এনেছে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের মনে রক্তক্ষরণ, অন্যায়ভাবে তারা (সরকার) নেত্রীকে কারাগারে রেখেছে। সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের নেত্রীকে কারাগারে রেখে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে অলিখিত বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা। আজকে সরকারের সব খেলা শেষ। তারা আমাদেরকে দূর্বল করতে চেয়েছিলো, আমরা দূর্বল নই, আগের থেকে আরো শক্তিশালী দল। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জেল থেকে এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকার আর আমাদের স্তব্ধ করে রাখতে পারবে না। অনেকে প্রশ্ন করেন দেশনেত্রীর মুক্তি আন্দোলন কখন শুরু হবে? আমি বলতে চাই, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। এই আন্দোলন আর কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আজকের এই সরকার ২৯ ডিসেম্বর ভোট চুরি করেছে। অনেকে বলে ওরা ভোট ডাকাতি করেছে। আমি বলব, ওরা ভোট ডাকাত নয়, সেই সাহস তাদের নেই। ওরা রাতের অন্ধকারে ভোট চুরি করেছে। তাই চুরি করা ভোটে যারা সরকার গঠন করেছে সেই সরকারকে আমাদের মানার কোনো প্রয়োজন নেই। এই সরকারের পতন ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। আসুন আমরা সরকার পতন আন্দোলনের দিকে যাই। এই সরকার জনগণের নয়, এদের কোনো অধিকার নেই বাংলাদেশের সরকার পরিচালনা করার।
প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও বক্তব্য রাখেন।
র্যালিতে আরও অংশগ্রহণ করেন- বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকতউল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, জয়নুল আবদিন ফারুক, মশিউর রহমান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আবদুল হাই, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, শামা ওবায়েদ, মাহবুবে রহমান শামীম, মীর সরফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আবদুস সালাম আজাদ, শামীমুর রহমান, আবদুল আউয়াল খান, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, শামসুল আলম তোহা, নবী উল্লা নবী, আবু নাসের মো. রহমাতুল্লাহ, সাদেক খান, সাইফুল ইসলাম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করীম বাদরু, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, মোস্তাফিজুর রহমান, মোঃ গোলাম সরোয়ার, আনোয়ার হোসেইন, হাসান উদ্দিন সরকার, আফরোজা আব্বাস, জেবা খান, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, রিজিয়া আলিম, হাসান জাফির তুহিন, সালাউদ্দিন ভূঁইয়া শিশির, আবুল কালাম আজাদ, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, ছাত্রদলের প্রার্থী হাফিজুর রহমান, এস এম সাজিদ হাসান বাবু, আশরাফুল আলম ফকির, মোঃ ফজলুর রহমান খোকন, মোহাম্মদ এরশাদ খান, মোঃ আমিনুর রহমান আমিন, মোহাম্মদ হাসান (তাঞ্জিল হাসান), শাহ নেওয়াজ, মোহাম্মদ জুয়েল হাওলাদার (সাইফ মাহমুদ জুয়েল), মোহাম্মদ করিমুল হাই (নাঈম), মোস্তাফিজুর রহমান প্রমূখ।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।