মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চালানো হত্যাযজ্ঞের জন্য অবশেষে ক্ষমা চেয়েছে পশ্চিম ইউরোপের দেশ জার্মানি। দীর্ঘ ৮০ বছর পর গত রোববার (১ সেপ্টেম্বর) পোল্যান্ডের উইলান শহরে এসে যুদ্ধের কথা স্মরণ করে ক্ষমা চাইলেন জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ওয়াল্টার স্টেইনমায়ার।
১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর এই উইলান শহর থেকেই বিশ্বব্যাপী নিজেদের তাণ্ডব শুরু করে জার্মানরা। এই শহরেই আঘাত হেনেছিল জার্মানির বিমান বাহিনী থেকে নিক্ষেপ করা প্রথম বোমাটি। এতে মুহূর্তের মধ্যেই প্রাণ হারান হাজার হাজার মানুষ। হঠাৎ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া শহরটির তখন সামরিক দিক থেকে কোনো তাৎপর্যও ছিল না। কেবলই নিরস্ত্র বেসামরিকদের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টির জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল আপাত-গুরুত্বহীন এই উইলান শহরকে।
রোববার ‘ধ্বংসের সেই ভয়ঙ্কর স্পৃহার’ জন্য তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জার্মানির প্রেসিডেন্ট স্টেইনমায়ার। এদিন জার্মান ও পোলিশ দুই ভাষাতেই তিনি বলেছেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির অত্যাচারের শিকার যারা, আক্রান্ত সেসব নাগরিকদের কাছে নত মস্তকে ক্ষমা প্রার্থী আমি।’ জার্মান প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, ‘জার্মানরা এখানে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে। তবে কেউ যদি মনে করেন যে, এখন সে অধ্যায় পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে বা যদি ভাবেন- ইউরোপে জাতীয়তাবাদী ও সমাজতন্ত্রীদের সন্ত্রাসের রাজত্ব সামান্য একটি ঘটনা; তা হলে তাদের ভুল ভাঙাতে পারে কেবলই জার্মানির ইতিহাস।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিহাসকে কখনই ভুলব না। আমরা মনে করতে চাই এবং অবশ্যই তা রাখব।’
বিশ্লেষকদের মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথম মর্মান্তিক আঘাত সহ্য করতে হয়েছে এই পোল্যান্ডকেই। পরবর্তীতে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পরা এই যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় পাঁচ কোটিরও বেশি লোক। যার মধ্যে অন্তত ৬০ লাখেরও বেশি ছিলেন পোলিশ নাগরিক। তাছাড়া হলোকাস্টে প্রাণ গিয়েছিল কমপক্ষে ৬০ লাখের মতো ইহুদির। এখানেও এর অর্ধেকের বেশি ছিল পোলিশ নাগরিক।
দেখতে দেখতে ৮০ বছর পার হয়ে গেলেও এখনো জার্মান প্রশাসন সেই ধ্বংস আর হত্যাযজ্ঞের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা করেনি বলে বার বার অভিযোগ করেছে পোল্যান্ড। যে কারণে এবার ক্ষমা চাইতে জার্মান প্রেসিডেন্ট স্টেইনমায়ার ছাড়াও উইলানে উপস্থিত হয়েছিলেন আরও অনেক দেশের নেতা-নেত্রীরা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পোলিশ প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেই দুদা। যেখানে তিনি তার নিজ দেশের ওপর নাৎসি ও জার্মান অত্যাচারকে একটি বর্বরতার সঙ্গেও তুলনা করেছেন।
এ দিকে গত রোববার উইলান শহরে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে যুদ্ধে শহীদদের স্মরণে সকলে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। পরে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে প্রেসিডেন্ট দুদা বলেছেন, ‘উইলান বিশ্বকে দেখিয়েছে যে যুদ্ধটা ঠিক কী রকম; একটা সম্পূর্ণ যুদ্ধ, যেখানে কোনো নিয়মনীতির বালাই নেই। পুরোপুরি ধ্বংসাত্মক একটা যুদ্ধ।’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এদিন অপর এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল, দেশটির মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। তাছাড়া বাকি সব জ্যেষ্ঠ নেতারা গিয়েছিলেন উইলান মিউজিয়ামে। যেখানে তারা দেখা করেছেন স্থানীয় সেইসব লোকদের সঙ্গে, যাদের জীবন পুরোপুরি তছনছ করে দিয়েছে এই যুদ্ধ।
বিশ্লেষকদের মতে, পোল্যান্ডের উইলান শহরে হামলার পর তৎকালীন নাৎসি প্রধান এডলফ হিটলারকে তাৎক্ষণিক সেই সামরিক অভিযান বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ব্রিটেন। যদিও তখন জার্মানি সেই হুঁশিয়ারি উড়িয়ে দিয়ে হামলা অব্যাহত রাখায় পরের ৩ সেপ্টেম্বর দেশটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ব্রিটেন এবং ফ্রান্স। পরবর্তীতে সেই সংঘাত টানা ছয় বছর ভয়াবহতার সঙ্গে অব্যাহত থাকে।
অপর দিকে দিবসটি উপলক্ষে বিশ্বের অন্তত ৪০ জন রাষ্ট্র প্রধান ইতিহাস স্মরণে উইলানে উপস্থিত হলেও; ছিলেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাখো এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মতো বিশ্বনেতারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।