Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আসামের নাগরিক তালিকা থেকে বাদ ১৯ লাখ: সর্বত্র ক্ষোভ-উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

আবদুল মোমিন | প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৯ পিএম

আসামের নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকায় নাম না থাকা ১৯ লাখ মানুষ এখন কী করবেন? এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সর্বত্র। এনিয়ে গণমাধ্যমে বিশ্লেষণ চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তর্ক-বিতর্ক। সেই সাথে আসামের নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়াদের মাঝে ক্ষোভ, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকট রূপ ধারণ করেছে।

শনিবার বিতর্ক, চরম অনিশ্চয়তা এবং আশঙ্কার আবহেই শেষ পর্যন্ত আসাম নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হয়। প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ আবেদনকারীর মধ্যে থেকে ৩ কোটি ১১ লাখ স্থান পেয়েছেন তালিকায়, আর নাম বাদ পড়েছে কমবেশি ১৯ লাখ মানুষের।

যদিও গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং আসাম রাজ্য সরকার নিশ্চয়তা দিয়ে বলেছে যে, যাদের নাম চূড়ান্ত তালিকায় নেই তাদেরকে বিদেশি বলে গণ্য করা হবে না। তারা নিজেদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করার সুযোগ পাবেন। আদালতে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। কেন্দ্রীয় সরকার এক্ষেত্রে সহায়তা করবে। কিন্তু এতে মোটেও আশাবাদী নয় তালিকা থেকে বাদ পড়া বাঙালিরা।

আসামের চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল এক ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘‘আরাকান, কাশ্মীর আর আসামের ঘটনার যোগসূত্র নিয়ে আমাদের সবাইকে ভাবতে হবে।’’

অপর এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘‘..এদের অনেককে জোর করে বা মানবেতর পরিস্থিতিতে রেখে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করতে পারে ভারত। এই চাপ মাথার উপর ঝুলিয়ে রেখে বাংলাদেশ থেকে আরো নানান একতরফা সুবিধা নেয়ার চেষ্টা হতে পারে। ভারত এমন কিছু করলে সরকারকে শক্ত থাকতে হবে। সরকারকে বুঝতে হবে দেশের স্বার্থ্ বোঝে বাংলাদেশের মানুষ। দেশের জন্য শক্ত অবস্থান নিলে দল মত নির্বিশেষে সবাই থাকবে সরকারের পক্ষে। সরকারকে তাই স্পষ্টভাবে বলতে হবে ১৯ লাখ বা ভারতের কোন অধিবাসীর দায় বাংলাদেশ নেবে না।’’

‘‘আসামের রাষ্ট্রহীন ১৯ লাখ মানুষকে এদেশে ঠেলে দিয়ে ভারত যদি বলে 'এটা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার'; তখন আমরা কি করবো?’’ এমন প্রশ্ন তুলেছেন জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিক সালেহ আকন।

মেহবুব বর্ণ লিখেছেন, ‘‘আসাম থেকে বাঙালি মুসলমানদের তাড়ানোর এই কর্মসূচিতে বাংলাদেশ সরকারের গভীরভাবে নজর রাখা উচিত। যাতে ভারত থেকে একজনও বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে। বাংলাদেশের সীমান্তে পাহারা জোরদার করা হোক।’’

ফেইসবুক ব্যবহারকারী সায়েম হক লিখেছেন, ‘‘আমার মনে হয়, সরকার এবার আর ভুল করবে না। যতই বলি না কেন, শেখ হাসিনা সরকার ঠিক সময়ে ঠিক কাজটি করবে, কারণ দেশটা তাদের নেতৃত্বে জন্ম হয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দিবে না।’’

‘‘আওয়ামী লীগকে যতই সার্পোট করিনা কেন, দেশের স্বার্থ সবার আগে। ইন্ডিয়া থেকে কোন একটা লোক যেন বাংলাদেশে আসতে না পারে সে ব্যাপারে সরকারকে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি’’ লিখেছেন মামুন খান।

আবির আহমেদের মন্তব্য, ‘‘বাংলাদেশেকে ভারত বাধ্য করছে পাকিস্তানের মত আচরন করতে, প্রতিবেশী একটা দেশের সাথেও ভারতের ভালো সম্পর্ক নেই, বাংলাদেশর উচিৎ হবে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে, চীনের সাথে সম্পর্ক শক্তিশালী করে সেভেন সিস্টারকে স্বাধীন হওয়ার ব্যপারে উদ্ভুদ্ধ করা ও সহায়তা করা।’’

আসামের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মাঝহারুল ইসলাম লিখেছেন, ‘মোদি গোটা ভারতে আগুন জ্বালানোর উদ্যোগ নিয়েছে।এরকম খুঁজলে সব দেশেই নাগরিক বাদ যাবে। এসব অপ্রয়োজনীয় কাজ। অশান্তির দাবানল তৈরী ছাড়া কিছুই না।একথা ধর্ম-বর্ন নির্বিশেষে সকলের জন্য প্রযোজ্য।’’

তামিম ইকবাল খান মন্তব্য করেছেন, ‘‘এনআরসি থেকে বাদ পড়া নাগরিকদের যদি বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে চালানোর অপচেষ্টা করা হয় তবে বাংলাদেশের উচিত হবে সমগ্র আসাম, পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরাকে বাংলাদেশের অংশ বলে দাবী করা।’’

‘‘বাংলাদেশেরও উচিত সকল নাগরিকদের লিস্ট প্রকাশ করা এবং অবৈধ ইন্ডিয়ান সকলকে ইন্ডিয়ায় পুশ ইন করা। আমি শিউর বাংলাদেশ যদি রিপোর্ট করে তবে কমপক্ষে ৫০ লক্ষ অবৈধ ইন্ডিয়ান পাওয়া যাবে এই বাংলার জমিনে’’ লিখেছেন মিসবাহ আহমেদ।

ফেইসবুকে মুহাম্মাদ সোহেল লিখেছেন, ‘‘বিপর্যয়ের দিকে গোটা বাংলাদেশ এবং ভারতের অসংখ্য নির্যাতিত মানুষ!! রোহিঙ্গা ইস্যু তার বড় একটি উদাহরণ!এমন দিন ক'জন কামনা করছিলো আর সামনে কি হবে আল্লাহ মালুম!’’

এস এম ওবাইদুল ইসলাম এক স্ট্যটাসে লিখেছেন, ‘‘মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সময় এসেছে নড়েচড়ে বসার। এই ১৯ লক্ষ আশ্রয়হীন রাষ্ট্রহীন ঘরবিহীন মানুষগুলোকে পুনর্বাসন করার জন্য, দল-মত, জাতি, ধর্ম, নির্বিশেষে সকল মানুষের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।’’

জুবায়ের আহমেদ লিখেছেন, ‘‘পুরো পৃথিবীজুড়ে শান্তি বিনষ্ট করতে এই মুহূর্তে যারা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে তারা হলো ধর্মীয় উগ্রবাদী ও বর্ণবাদী এবং কাল চিন্তায় বিকৃত মস্তিষ্কের পরিপূর্ণ কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি। তাই পৃথিবীকে শান্তিময় করে তুলতে হলে এখনই এই সকল পরজীবী মুক্ত পৃথিবী গড়তে হবে।’’

হুমায়ুন কবির লিখেছেন, ‘‘মোদী এইবার ক্ষমতায় আসার পর কাশ্মীর ও আসামে যে সংকট সৃষ্টি করেছেন তা অখণ্ড ভারতকে বিভাজনের দিকে নিয়ে যেতে পরে। এবং এই উপমহাদেশে যুদ্ধের সৃষ্টি করে অনেক বড় সংকট সৃষ্টি করতে পারে।’’

‘‘বাংলাদেশে পুশ ইন করার চেষ্টা করলেই সাধারণ পাবলিকদের জোরালো প্রতিবাদ করতে হবে। রাজনীতিবিদরা মরে গেছে, ভোটাধিকার চলে গেছে, নিজের সমস্যা নিজেই মোকাবেলা করতে হবে’’ মন্তব্য এস আলম মানিকের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সোশাল মিডিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ