পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানীতে গড়ে উঠা বস্তিগুলো নিয়ে একশ্রেণীর সিন্ডিকেট, প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তির ছত্রছায়ায় বছরের পর বছর ধরে চলছে কোটি কোটি টাকার রমরমা বাণিজ্য। ঘর ভাড়া, অবৈধ গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ দিয়ে বস্তিবাসীদের কাছ থেকে বিল আদায়ের মাধ্যমে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা এই সিন্ডিকেট আদায় করে নিচ্ছে। বিশেষ করে সবচেয়ে বড় তিনটি বস্তি- বনানীস্থ কড়াইল, ভাষানটেক ও মিরপুরস্থ চলন্তিকাকে কেন্দ্র করে এই রমরমা ব্যাণিজ্য চলছে। এই অবৈধ বাণিজ্যের সাথে তিতাস গ্যাস, ডেসকো, ওয়াসা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তাও জড়িত। বস্তির গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অবৈধ পানি সংযোগের কারণে রাজধানীর অন্যান্য প্রকৃত বাসিন্দাদের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি মাসে বস্তিগুলোতে অবৈধ সংযোগের কারণে যে পরিমাণ গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি ব্যয় হয়, তা প্রকৃত নগরবাসীর জন্য চরম সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া, বস্তিগুলো হয়ে উঠেছে, অপরাধী, মাদক কেনাবেচা, মাদকসেবীদের অভয়ারণ্য। বস্তিকে কেন্দ্র করে প্রায়ই খুন-খারাবি হয়ে থাকে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা অনেকটা নিয়মিত হয়ে উঠেছে। সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে উঠা এসব বস্তি রাজধানীর ‘বিষফোঁড়া’ হিসেবেও চিহ্নিত হচ্ছে।
বস্তিগুলো সাধারণত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ছিন্নমূল, রিকসা শ্রমিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণীর শ্রমিক ও নদীভাঙ্গনে উদ্বাস্তু হওয়া মানুষের আশ্রয়স্থল। এমনকি অনেক ব্যাচেলর, শিক্ষার্থী, ছোটোখাটো চাকরিজীবী এবং শিক্ষিত লোকজনও কম খরচে থাকার জন্য বস্তিগুলোতে আশ্রয় নেয়। এর কারণ প্রকৃত গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিলের চেয়ে অনেক কম খরচে তারা এখানে বসবাস করতে পারেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উল্লেখিত প্রধান তিন বস্তিতে প্রায় দেড় লাখের বেশি মানুষ বসবাস করে। আরেক হিসাবে, শুধু কড়াইল বস্তিতে বসবাস করে চার লাখ মানুষ। এ বস্তি থেকে সিন্ডিকেট চক্রের মাসে আয় হয় ১৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির অবৈধ বিলের নামে আদায় করা হয় ৮ কোটি টাকা এবং ঘর ভাড়া বাবদ ১১ কোটি টাকা। অন্য বস্তিগুলোতেও এভাবে কোটি কোটি টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ আয় করছে বস্তির নিয়ন্ত্রক যেসব সিন্ডিকেট ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা-কর্মী রয়েছে তারা এবং ওয়াসা, ডেসকো ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু ব্যক্তি। বস্তিগুলো এসব চক্রের স্থায়ী আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে। নগরীতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংকটের অন্যতম কারণ হয়ে রয়েছে এসব বস্তি। বস্তিগুলোতে যদি অবৈধ সংযোগ না থাকত, তাহলে এই সংকট অনেকটাই কেটে যেত বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বস্তি দখল নিয়েও অনেক সময় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। কোটি কোটি টাকা আয়ের দখল নিতেই এ সংঘর্ষ হয়ে থাকে। অথচ এসব বস্তি গড়ে উঠেছে সরকারি জায়গার ওপর। সরকারি জায়গায় সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বস্তিগুলো গড়ে উঠার ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদন আছে কিনা, তাও বোঝার কোনো উপায় নেই। যদি থেকে থাকে, তবে বস্তিকে কেন্দ্র করে যেসব অপকর্ম হচ্ছে, তার দায় কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। বলা হয়ে থাকে, রাজধানীর মাদকের অন্যতম উৎস এসব বস্তি। সন্ধ্যার পরপরই বস্তিগুলো মাদকসেবীদের আখড়া হয়ে উঠে। আবার এখান থেকেই রাজধানীতে মাদক ছড়িয়ে পড়ে। বছরের পর বছর ধরে এসব বস্তিতে নির্বিঘে্ন অপকর্ম চললেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। এর কারণ তাদের অনেককে ম্যানেজ করেই বস্তি নিয়ন্ত্রক সিন্ডিকেট এ অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে।
রাজধানীকে বসবাস উপযোগী করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বস্তিগুলোও যে অন্তরায় হয়ে রয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। গত সপ্তাহে লন্ডনের দ্য ইকোনোমিক পত্রিকার ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)-এর এক প্রতিবেদনে ঢাকা বিশ্বের পঞ্চম অনিরাপদ শহর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। অবকাঠামো, ব্যক্তি নিরাপত্তা ও বসবাস অনুপযোগিতা বিবেচনা করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ দেশের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত রাজধানী অত্যন্ত বেহাল অবস্থায় রয়েছে। এটা কোনোভাবেই দেশের ক্রমাগত উন্নয়নের সূচক হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে না। রাজধানী থেকে বস্তি উচ্ছেদের কথা বহুবছর ধরেই বলা হচ্ছে। কেউ কেউ এর বিরোধিতাও করছে। এ বিরোধিতা যে তাদের সুবিধা এবং অপরাজনীতির কথা বিবেচনা করেই করা হচ্ছে, তাতে সন্দেহ নেই। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, রাজধানীর অভিজাত ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়ই সবচেয়ে বড় বড় বস্তি গড়ে উঠেছে। একদিকে সুদৃশ্য অট্টালিকা, তার ঠিক পাশেই বস্তি। এ যেন প্রদীপের নিচে অন্ধকার। একেবারে বিপরীত চিত্র। এ চিত্র দেশের জন্য কোনোভাবেই সুনামের নয়। আমরা মনে করি, বস্তিতে যেসব মানুষ বসবাস করে তাদের জন্য আলাদা বাসস্থানের ব্যবস্থা করা উচিত। ইতোমধ্যে সরকার রাজধানীতে এ ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে কবে এ ব্যবস্থা বাস্তবে রূপ লাভ করবে তা অনিশ্চিত। এ অনিশ্চয়তার মধ্যে বসে না থেকে বস্তিগুলোতে যেসব অবৈধ, গ্যাস, বিদ্যুত ও পানির সংযোগ রয়েছে, সেগুলো বিচ্ছিন্ন করে দেয়া উচিত। তাহলে দেখা যাবে, একদিকে যেমন সরকারের কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হবে, তেমনি বস্তি নিয়ে সিন্ডিকেটের যে অবৈধ বাণিজ্য, অপরাধ, মাদক ইত্যাদি কমে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।