পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে নিয়ে বিতর্ক চলছে। সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি পূর্বাচলে একটি প্লটের জন্য আবেদন করায় মূলত এই বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং কিছু কিছু মুখচেনা মিডিয়ায় এই বিতর্ক ডালপালা ছড়াচ্ছে। বলা হচ্ছে রুমিন ফারহানা ১০ কাঠার প্লটের জন্য ‘বিপ্লবী খোলস’ ফেলে সরকারের কাছে ‘নতজানু’ হয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রুমিন ফারহানার বাগ্মিতায় ক্ষমতাসীনদের বিব্রত হওয়ার কারণেই কী এই বিতর্ক?
প্রশ্ন হচ্ছে একজন এমপির প্লট চাওয়া নিয়ে এই বিতর্ক কতটুকু প্রাসঙ্গিক? নাকি তিনি একটি প্লটের জন্য সত্যিই সরকারের কাছে ‘নতজানু’ হতে চান? বিএনপির আরো এমপি প্লট চেয়েছেন তাদের নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে না কেন? ‘চির কৃতজ্ঞ’ ‘আজ্ঞা হয়’, ‘সবিনয় নিবেদন’ এগুলো তো আবেদন বা চিঠির প্রচলিত ভাষা। তাহলে কি কারো কাছে সম্মান প্রদর্শন করে চিঠি লেখার অর্থ ‘নতজানু’ হওয়া?
এখানে বলে রাখা ভালো বর্তমানে সংসদ সদস্য মানে একটি সংসদীয় আসনের ‘রাজা-মহারাজা’। সংসদ সদস্যের কাজ আইন প্রণয়ন হলেও স্থানীয় সরকারের উন্নয়নমূলক সব কাজকর্ম কার্যত তাদের নিয়ন্ত্রণে। এমনকি থানা-পুলিশ-স্কুল-কলেজ-মাদরাসা এমপির নিয়ন্ত্রণে।
’৯০-এর রাজনৈতিক পরিবর্তনকে যদি আমরা গণতন্ত্রের নতুন যাত্রা ধরি তাহলে দেখা যাবে এই সময়ে এমপি হয়েছেন এমন একজন ব্যক্তি পাওয়া দুষ্কর যিনি সরকারি প্লট নেননি। বর্তমান সংসদে যারা এমপি রয়েছেন তাদের মধ্যে অতীতে যারা সরকারি প্লট পাননি তাদের প্রায় সকলেই প্লটের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু তাদের কারো নাম নিয়ে বিতর্ক নেই; কেবল রুমিন ফারহানাকে নিয়ে প্লট বিতর্ক কেন?
এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানী ঢাকার দেয়ালে দেয়ালে একটি পোস্টার শোভা পেত। ডেমোক্র্যাটিক লীগের অলি আহাদের ছবিসহ সে পোস্টারে লেখা ছিল ‘অলি আহাদের এক আওয়াজ/খতম করো সেনাপতিরাজ’।
সেই আপোষহীন রাজনীতিক মরহুম অলি আহাদের কন্যা ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ’৫২ সালের ভাষা আন্দোলনসহ দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রয়েছে তাঁর অবদান। সেই আপোষহীন পিতার কন্যাকে নিয়ে বিতর্কের আগে দেখা যাক জাতীয় সংসদ সদস্যরা কি কি সুবিধা পেয়ে থাকেন।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী একজন সংসদ সদস্য যেসব সুযোগ-সুবিধা পান সেগুলো হচ্ছে- ১. সংসদ সদস্যদের মাসিক বেতন ৫৫,০০০ টাকা, ২. নির্বাচনী এলাকার ভাতা প্রতি মাসে ১২,৫০০ টাকা, ৩. সম্মানী ভাতা প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকা, ৪. শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা, ৫. মাসিক পরিবহন ভাতা ৭০,০০০ টাকা, ৬. নির্বাচনী এলাকায় অফিস খরচের জন্য প্রতি মাসে ১৫,০০০ টাকা, ৭. প্রতি মাসে লন্ড্রি ভাতা ১,৫০০ টাকা, ৮. মাসিক ক্রোকারিজ, টয়লেট্রিজ কেনার জন্য ভাতা ৬,০০০ টাকা, ৯. দেশের অভ্যন্তরে বার্ষিক ভ্রমণ খরচ ১,২০,০০০ টাকা, ১০. স্বেচ্ছাধীন তহবিল বার্ষিক ৫,০০,০০০ টাকা, ১১. বাসায় টেলিফোন ভাতা বাবদ প্রতি মাসে ৭,৮০০ টাকা, ১২. সংসদ সদস্যদের জন্য সংসদ ভবন এলাকায় এমপি হোস্টেলে বসবাস।
এছাড়া একজন সংসদ সদস্য প্রতি বছর চার কোটি টাকা করে থোক বরাদ্দ পাবেন। এর বাইরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি প্লট এবং ফ্ল্যাট পেয়ে থাকেন; পিয়ন, ড্রাইভারসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। জনসেবার নামে এমপিদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি ঐতিহ্য ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দিন সরকারের সময় রাস্তায় ৪-৫ কোটি টাকার বেওয়ারিশ গাড়ি পড়ে থাকার দৃশ্য মানুষ দেখেছে।
বিএনপির বর্তমানের রাজনীতি কর্মকৌশল নিয়ে বিতর্ক আছে। আকাশছোঁয়া জনপ্রিয় নেত্রীকে কারাগারে রেখে বেহাল নেতৃত্বের কারণে দলটিতে যে রাজনীতি চর্চা হচ্ছে আদৌ সেটা রাজনীতি কি না বলা দুষ্কর। শহীদ জিয়ার নীতি-আদর্শ থেকে দলটি যোজন যোজন মাইল দূরে সরে গিয়ে দিল্লির দাদাদের খুশি করার কৌশল নিয়েছে। দেশের জনগণ নয়দিল্লির সাউথ বøক যেন তাদের ক্ষমতায় বসাবে। জাতীয়তাবাদ ও ইসলামি মূল্যবোদের দলটি আমজনতার প্রত্যাশায় খেয়াল নেই।
নির্বাচনে অংশ নিয়ে ‘সেচ্ছায় ঘরবন্দি’ হয়ে কমন ডায়লগ ‘সরকার রাস্তায় নামতে দেয় না’ আওয়াজ তুলে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় দলের যে ক’জন নেতানেত্রী বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে সোচ্ছার এবং বাগ্মিতায় সরকারকে নাস্তানাবুদ করে ফেলছেন তাদের মধ্যে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা অন্যতম। ‘সংসদ অবৈধ’ অবিহিত করে সেই সংসদে বসে যুক্তি বুদ্ধিমত্তা দিয়ে ক্ষমতাসীনদের নাকানি-চুবানিতে নাকাল করছেন।
রুমিনের বক্তৃতা মানেই সংসদ উত্তপ্ত। ট্রেজারি বেঞ্চের কেউ বিএনপির ওপর তীর ছুড়লে তিনি আওয়ামী লীগের ওপর কামান ছোড়েন। সংবিধান নিয়মকানুন নিয়ে বক্তব্য দেয়ায় তার কথাবার্তায় সরকারের অস্বস্তি বোধ করে। ট্রেজারি বেঞ্চের শত শত এমপি ঐক্যবদ্ধ হয়েও রুমিন ফারহানাকে মোকাবিলা করতে বেগ পেতে হয়। এ যেন ‘বাপ ক্যা বেটি’। বাধ্য হয়েই ক্ষমতাসীনদের চরম কূটকৌশলী এবং সব সময় রাজনীতির রুলস অব গেম ভঙ্গ করে রুমিনকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
‘দুধ’ ছাড়াই ‘দই’ তৈরিকে যে দল পারদর্শী তাদের সরকারকে গঠনমূলক এবং তথ্যনির্ভর বক্তৃতায় নাকানি-চুবানি খাওয়ানো চাট্টিখানি কথা নয়! রুমিন ফারহানা সেটাতে সফল হয়েছেন। এতে ক্ষমতার উচ্ছিষ্টভোগী কিছু বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিসেবী এবং সরকারকে তোষণকারী মিডিয়ার গাত্রদাহ। তারাই উস্কে দিচ্ছেন রুমিন বিতর্ক।
খবরে জানা যায়, বর্তমান সংসদের বেশ কয়েকজন এমপি সরকারি প্লটের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। রুমিন ফারহানা তাদের একজন। এ প্রসঙ্গে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে জানান, ‘প্লট চেয়ে কয়েকজন সংসদ সদস্যের আবেদন পেয়েছেন। তার মধ্যে সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার একটি আবেদন রয়েছে। আইন অনুযায়ী এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ মন্ত্রী যথার্থই বলেছেন।
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা মিডিয়াকে বলেছেন, ‘একজন এমপি রাষ্ট্রীয়ভাবে পাঁচ বছর থাকার জন্য ন্যাম ভবনে একটি ফ্ল্যাট, একটা ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি এবং রাজউকের একটা প্লট পান। একজন এমপি হিসেবে রাষ্ট্রের কাছে উল্লিখিত সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখি। সে অনুযায়ী আমি রাষ্ট্রের কাছে প্লটের জন্য আবেদন করেছিলাম। তবে বর্তমান অনির্বাচিত সরকারের কাছে আবেদন করিনি’।
তিনি আরো বলেছেন, ‘আমি রাষ্ট্রের কাছে আবেদন করেছি। কোনো অনির্বাচিত সরকারের কাছে নয়। আমি জানি, তারা আমাকে এক কাঠা জমিও দেবে না। তবু আনুষ্ঠানিকতার জন্য আবেদন করেছি।’ প্রশ্ন হলো এমপি হিসেবে প্লট চাইতেই পারেন। কিন্তু সময় বলে একটা কথা রয়েছে। একদিকে আপোষহীন নেতা অলি আহাদের কন্যা; অন্যদিকে বিএনপির জন্য সময় চরম প্রতিক‚ল; এ অবস্থায় প্লট চাওয়া কি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হয়েছে? আর আপনি যদি জানেন সরকার এক কাঠা জমিও দেবে না তাহলে কেন প্লট চেয়ে এত বিতর্কের ঝড় তোলা হলো?
অবশ্য গতকাল পূর্ত মন্ত্রণালয়ে প্লট চাওয়ার আবেদন প্রত্যাহারের জন্য চিঠি দিয়েছেন। তবে সময়োপযোগী কথা বলেছেন আরেক বরেণ্য রাজনীতিক মরহুম কে এম ওবায়দুর রহমানের কন্যা শামা ওবায়েদ। তিনি বলেছেন, ‘একজন সংসদ সদস্য হিসেবে রুমিন ফারহানা প্লট চাইতেই পারে; তবে আমি হলে চাইতাম না। তাছাড়া যেহেতু আমরা বিএনপি করি, তাতে রাষ্ট্রের কাছে চাওয়া চিঠির ভাষা নিয়ে আরেকটু ভাবা উচিত ছিল।’ এটা বিএনপির নেতাকর্মীদের হৃদয়ের কথা।
শামা ওবায়েদের এই বক্তব্য ভেবে দেখা উচিত রুমিন ফারহানার। মানুষ চায় অলি আহাদের কন্যাকে পিতার মতোই; বিএনপির মতো পথহারা পাখিকে নয়। একই সঙ্গে প্লট ইস্যুতে ‘রুমিন ফারহানা বিতর্ক’ থেকে বিএনপির নেতাদের শিক্ষা নেয়া উচিত। কারণ সময়-অসময় বলে একটা কথা আছে। আর এমপি হিসেবে প্লট চাওয়া নিয়ে যারা রুমিনকে নিয়ে বিতর্কের ডালপালা ছড়াচ্ছেন, বিতর্ক করে মজা নিচ্ছেন; তাদের উচিত আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।