মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
রাখাইনে ফিরে আসা কোনো রোহিঙ্গা আর তাদের এলাকার আগের পরিচিত দৃশ্যপট দেখতে পাবেন না। তারা দেখতে পাবেন যে সবকিছু বদলে গেছে অর্থাৎ বদলে ফেলা হয়েছে।
উত্তর রাখাইনের লবণাক্ত জলাভূমি এলাকা ঘুরে দেখা যায় সেখানে অটুট নীরবতা বিরাজ করছে। এক সময় এ অঞ্চলে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস করত। এখন অধিকাংশ মানুষই নেই। দগ্ধ মসজিদগুলোর কাঠামোর সঙ্গে পোড়া গাছগুলো সাক্ষ্য দিচ্ছে যে এক সময় এখানে মানুষ বাস করত।
মিয়ানমার সরকার রাখাইনে অবকাঠামো উন্নয়নে অর্থ ব্যয় করছে। তৈরি হচ্ছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সরকারি ভবন এবং বিশেষ করে সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষীদের ঘাঁটি। এ সব স্থাপনার অনেকগুলোই তৈরি হচ্ছে জাতিগত নিধনের ফলে রোহিঙ্গাশূন্য হওয়া ফাঁকা জমিতে।
অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউটে আন্তর্জাতিক সাইবার পলিসি সেন্টার কর্তৃক উপগ্রহ ছবি বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে ২০১৭ সালে চরম সহিংসতা শুরু হওয়ার পর ২০১৮ সালে প্রায় ৬০টি রোহিঙ্গা বসতি ধ্বংস করা হয়েছে। এ বছরও রোহিঙ্গা গ্রাম ধ্বংস অব্যাহত রয়েছে। মিয়ানমারের কর্মকর্তারা কখনোই স্পষ্ট করে বলেননি যে প্রত্যাবর্তনকারী রোহিঙ্গারা কোথায় বাস করবে। তারা কিছু পূর্ব নির্মিত বাড়িঘর প্রদর্শন করেন যেগুলো প্রত্যাবাসনকৃত রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত বলে মনে করা হয়।
এখানে নজির হিসেবে উল্লেখ করা যায় যে ২০১২ সালে মধ্য রাখাইনে বৌদ্ধ উগ্রপন্থীদের ভয়াবহ হামলার শিকার হয়ে গৃহহীন এক লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা গত সাত বছর ধরে বন্দি শিবিরে আটকা পড়ে আছে। তাদের বাইরে যেতে দেয়া হয় না। বৌদ্ধরা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য লুটে নিয়েছে। তাদের অধিকাংশ বাড়িঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
রাখাইনের দৃশ্যপট বদলে যাওয়ার সাথে সাথে দিনে পাঁচবার আজান উচ্চারিত হওয়া মসজিদগুলো ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। সে সব জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে বৌদ্ধ প্যাগোডা। সামরিক বাহিনী পরিচালিত কোম্পানিগুলো ভবন নির্মাণের মাধ্যমে দুই হাতে অর্থ লুটে নিচ্ছে।
গত ৫ আগস্ট জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সকল সাক্ষ্যপ্রমাণ বিলোপ করে এ অঞ্চলকে নতুন করে গড়ে তোলায় সাহায্যকারী সামরিক বাহিনীর সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে টার্গেটেড নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করা হয়।
জাতিসংঘ বলছে, কোনো উদ্বাস্তুরই সে স্থানে ফেরা উচিত হবে না যেখানে তাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নেই। তা করা হলে সেটা হবে জোর করা যা আন্তর্জাতিক আইন বিরোধী। কিন্তু মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের আশ্বস্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে যে, যে পরিস্থিতি রোহিঙ্গা গণহত্যার সৃষ্টি করেছিল তা পরিবর্তিত হয়েছে।
মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক যৌন সহিংসতা ও নির্বিচার গুলি ছুঁড়ে শিশুদের হত্যা করেছে বলে রোহিঙ্গাদের সাক্ষ্যপ্রমাণ ও মানবাধিকার গ্রুপগুলোর তদন্তে জানা যায়। কিন্তু মিয়ানমার সরকার তা স্বীকার করেনি। এমনকি তারা অন্যায় করেছে বলেও স্বীকার করে না। মংডুর সরকারি কর্মকর্তা সোয়ে অং বলেন, একজন নিরীহ মুসলমানকেও হত্যা করা হয়নি।
মিয়ানমার নেত্রী অং সান সু চি রাখাইনে সহিংসতার জন্য সেনাবাহিনীকে দায়ী করতে অস্বীকার করেন। কিন্তু জাতিসংঘ নিয়োজিত তদন্তকারীরা গত বছর সুপারিশ করেন যে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কমান্ডারদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা উচিত।
রোহিঙ্গারা সুস্পষ্টভাবে মিয়ানমারের অধিবাসী হওয়া সত্তে¡ও অধিকাংশ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী বলে গণ্য করে মিয়ানমার। কাউকে প্রত্যাবাসনের জন্য গ্রহণের আগে তারা সাক্ষ্যপ্রমাণ চায় যে সে মিয়ানমার থেকে এসেছে। যেসব রোহিঙ্গার বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে তাদের জন্যও এ নিয়ম প্রযোজ্য। আরো কথা হচ্ছে যারা মিয়ানমারে ফিরতে চায় তাদের প্রত্যেককে মিয়ানমার সরকারের দেয়া পরিচিতিপত্র গ্রহণ করতে হবে। সমালোচকরা বলছেন যে এটা তাদের রাষ্ট্রহীনতার পরিচায়ক।
মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা নামটি গ্রহণ করতে রাজি নয়। তার পরিবর্তে প্রত্যাবর্তনকারীদের প্রত্যেককে যে কাগজ দেয়া হচ্ছে তাতে তাদেরকে বাঙালি বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। তার অর্থ তারা ভিন্নদেশ থেকে মিয়ানমারে অনুপ্রবেশকারী। তারা রাখাইনের কোনো জাতিগত গ্রুপ নয়।
উত্তর রাখাইনের একটি গ্রামের ইমাম আবদুল কাদির যে কোনো কারণেই হোক পালাতে পারেননি। তিনি ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে বলেন, আমরা রোহিঙ্গা। কিন্তু মিয়ানমার আমাদের রোহিঙ্গা বলে না। এনগা খু ইয়া প্রত্যাবাসন শিবিরের অভিবাসন বিষয়ক উপপ্রধান কিয়াও কিয়াও খাইন বলেন, রোহিঙ্গা বলে কিছু নেই। বিদেশীরা কেন এ শব্দ ব্যবহার করবে? মিয়ানমারের সরকারি ভাষ্য এ রকম : রোহিঙ্গারা আন্তর্জাতিক সহানুভ‚তি অর্জনের লক্ষ্যে নিজেদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা এখন বাংলাদেশে বসে মুসলিম দেশগুলোর দেয়া প্রচুর রেশন পাচ্ছে।
মিয়ানমার কর্মকর্তারা বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের অলস বলে অভিযুক্ত করে থাকেন। তারা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে আগ্রহী নন বলে তারা মনে করেন। এনগা খু ইয়া শিবিরের এক প্রশাসক উ কিয়াও সেইন বলেন, হয়ত তারা চান যে রোহিঙ্গারা সেখানে থাক। সত্য খুব বেশি আলাদা হতে পারে না। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রতি অসাধারণ সহানভ‚তি প্রদর্শন করেছে। কিন্তু দেশটির সহ্যসীমা হ্রাস পাচ্ছে।
বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের একটি দ্বীপে পুনর্বাসন করার হুমকি দিয়েছে। এটি বঙ্গোপসাগরের মধ্যে একটি বালিময় চর যা ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকায় অবস্থিত। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের বিরাট অংশকে উদ্বাস্তু হিসেবে বিবেচনা করে না। কারণ এই অভিধা তাদের চিরকালের জন্য প্রবাসী হিসেবে বাস করার অধিকার জোরালো করে।
এর ফলে তাদের উদ্বাস্তু শিবিরের বাইরে কোনো কাজ করার বা পড়াশোনা করার অধিকার নেই। মুসলিম উগ্রবাদীরা শিবিরের মসজিদগুলোতে যাচ্ছে ও জঙ্গিবাদের মাধ্যমে মুক্তি লাভের আশ্বাস দিচ্ছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে শুধু হতাশা আর হতাশা। রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু শিবিরের নেতা সাইফুল ইসলামের প্রশ্ন, আমার সন্তানরা কি বাকি জীবন এখানেই কাটাবে? তাদের জন্য কি আমার করার কিছুই নেই? (শেষ)
*এনগা খু ইয়া প্রত্যাবাসন শিবির পরিদর্শনের পর মিয়ানমারের সাংবাদিক স নাং ও জাতিসংঘের মাইকেল সরিৎজ এ প্রতিবেদন তৈরি করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।