বর্তমান সরকারের আমলেই নারী ও শিশু নির্যাতন অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে বলে অভিযোগ করেছেন
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান। তিনি বলেন, শুধুমাত্র গত ছয় মাসেই ৪৯৬ জন্য কন্যা শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছে, এদের মধ্যে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে ২৩ জনকে। অধিকাংশ নির্যাতনকারী সরকারী দলের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এই কারণে এই ধরণের জঘন্য অপরাধের সাথে জড়িত থাকার পরেও তাদের কেশাগ্রও কেউ স্পর্শ করতে পারছে না। এরা আইনের আওতার বাইরে থাকছে। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সেলিমা রহমান বলেন, বাংলাদেশ আজ পরিণত হয়েছে ধর্ষণের লীলাভূমিতে। বখাটে প্রেমিক, পাড়ার মাস্তান, কর্মকর্তা, বাস কন্ডাক্টর, শিক্ষক, মাদ্রাসার প্রিন্সিপালসহ কিছু বিকৃত মানুষের লালসার শিকার নারী ও শিশুরা। ৯ মাস বয়স থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধা ধর্ষকের লোলুপ দৃষ্টি থেকে কেউ বাদ যাচ্ছে না। এমনকি রেহাই পাচ্ছেন না বাকপ্রতিবন্ধী বা ভবঘুরে পাগলও। রাস্তাঘাট, বাস বা ট্রেন, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, এমনকি পুলিশ স্টেশন কোথাও নারীরা নিরাপদ নয়। স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে নারীকে ধর্ষণ, পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে নির্মম কায়দায় শিশু হত্যা, পাশবিক নির্যাতনের পর নারীকে পুড়িয়ে কয়লা করে দেয়া-এইভাবে নানা অভিনব কায়দায় ধর্ষক লম্পটের হিংস্র থাবা সর্বত্র বিরাজমান। এভাবেই সুবর্ণচরের পারুল, ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি, খুলনায় পুলিশ কাস্টডিতে রাতভর নারীর ওপর গণধর্ষণ চালানোর পর মিথ্যা ও সাজানো মাদক মামলা দিয়ে কোর্টে চালান দেয়া, সিরাজগঞ্জের মেয়ে কলেজ ছাত্রী রুপাকে টাঙ্গাইলের কাছে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ করে হত্যা, কাকরাইলে উইল লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী রিশাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা, ইবনে সিনা হাসপাতালের নার্স তানিয়া বাড়ী যাওয়ার পথে কিশোরগঞ্জের বাসে গণধর্ষণ করার পর হত্যা, এভাবে বর্তমান সরকারের আমলে জিম-মিম-তনু-মিতু-খাদিজাদের আহাজারীতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে আছে। শুধুমাত্র গত ছয় মাসেই ৪৯৬ জন্য কন্যা শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছে, এদের মধ্যে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে ২৩ জনকে।
খুন-ধর্ষণের পৈশাচিক বিকৃতি আমাদের রাষ্ট্র সমাজকে গ্রাস করে ফেলেছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে রাষ্ট্র সমাজের সর্বত্র ঘৃনা ছড়ানোর ফলে ক্ষমতাঘনিষ্ঠ সমাজবিরোধীরা আশকারা পাচ্ছে। দেশব্যাপী ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের পরিস্থিতি জনমনে গভীর উৎকন্ঠার জন্ম দিয়েছে। ধর্ষণ ও ধর্ষণ প্রচেষ্টার কারণে শিশু হত্যার ঘটনা এখন সংবাদপত্রের উল্লেখযোগ্য সংবাদ। অভিভাবকরা মেয়ে ও শিশু সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। আইনের প্রয়োগ নেই বলেই সমাজবিরোধীরা ধর্ষণ-নিপীড়ণে উৎসাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, আইনের শাসনের অভাবে মাদকের বিস্তার এবং মূল্যবোধের অবক্ষয়সহ বিভিন্ন কারণে নারী ও শিশু নির্যাতন বাড়ছে। আমরা মনে করি এই কারণগুলো সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে মোকাবেলা করতে হবে। অনাচারমূলক দু:শাসনে জবাবদিহিতার অভাবের কারণেই নারী ও শিশু নির্যাতন বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যমান গণতন্ত্রশুণ্য দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধের জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। নব্য ফ্যাসিবাদী শাসনে একদিকে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই, আবার অন্যদিকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে জোরালোভাবে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে পড়ায় প্রতিনিয়ত নারী ও শিশুরা দুর্বৃত্তদের লালসার শিকার হচ্ছে। তাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল দেশের নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালনের লক্ষ্য নিয়ে ‘নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম’ শিরোনামে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করেছে। বর্তমান ভয়াবহ অনাচার-দুরাচারের বিরুদ্ধে এটি আমাদের একটি সামাজিক আন্দোলন।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু।