Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পরিত্যক্ত ভবনে পাঠদান

দুপচাঁচিয়া উপজেলা শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়

মো. গোলাম ফারুক, দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

দুপচাঁচিয়া উপজেলা শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পরিত্যক্ত ভবনে ঝুঁকি নিয়ে ঝড়ে পড়া, ছিন্নমূল ও শ্রমজীবী শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চলছে।

উপজেলা বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে পড়া হত দরিদ্র ও শ্রমজীবী শিশুদের আলোকিত নীড় দুপচাঁচিয়া শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়। দুপচাঁচিয়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে সমাজের অসহায়, ছিন্নমূল ও শ্রমজীবী শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলোছড়িয়ে দিতে গড়ে উঠেছে এই শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আর্থিক অনটনের কারণে ঝড়ে পড়া শিশুসহ ছিন্নমূল, শ্রমজীবী শিশুদের সন্ধান করে তাদেরকে এই বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। বিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১৫০ জন। শিক্ষক রয়েছেন ৪ জন সহ অফিস সহকারি রয়েছে ১ জন। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ জানান, ২০১৩ সালে প্রায় ৩০ জন ঝড়ে পড়া শিশুকে নিয়ে অস্থায়ী ভাবে দুপচাঁচিয়া পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এই বিদ্যালয়টির কার্যক্রম শুরু হয়। আয় উৎস হিসেবে স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অনুদান।
বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা অনুযায়ী পৌর এলাকা সহ মিল কারখানা এলাকার ঝড়ে পড়া ছিন্নমূল শিশুদের শিক্ষিত করার লক্ষে শিশু কল্যাণ বিদ্যালয় সরকারের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেন। সেই আলোকে ২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে এই বিদ্যালয়টি সরকারি আওতাভুক্ত হয় এবং বর্তমানে শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে শিক্ষকরা বেতন ভাতা গ্রহণ করছে। বিদ্যালয়ে তরুন চৌকুশ এই সব শিক্ষকরা ঝড়ে পড়া ও ছিন্নমূল শিশুদেরকে পাঠদান করে সমাজের আর দশ টা শিশুর মতো শিক্ষিত করে গড়ে তোলার কাজ করে যাচ্ছে। বিদ্যালয়টির নিজস্ব কোনো ভবন নেই। দুপচাঁচিয়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত একটি ভবনে তিনটি কক্ষে এই বিদ্যালয়টির শিক্ষার কার্যক্রম চলছে। ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়াও ভবনটিতে বৈদ্যুতিক কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে ফ্যানের অভাবে গরমের মাঝেই পাঠদান করছে।

একান্ত এক সাক্ষাতকারে বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস.এম জাকির হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ঝড়ে পড়া ও ছিন্নমূল, শ্রমজীবি শিশুরা সমাজের বোঝা নয়। এরাও লেখাপড়া শিখে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজের সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। একটু সহযোগীতা পেলে এই সব অনাথ শিশুরাও সমাজে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি পরিবারকেও আর্থিক ভাবে সহায়তা করতে পারে। এতে এক দিকে তাদের পরিবার অন্য দিকে সমাজ ও দেশ উপকৃতও হবে। ঝড়ে পড়া ছিন্নমূল এই সব ছেলে মেয়েদের সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য সমাজের বৃত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে। এ জন্য তিনি এলাকার শিক্ষানুরাগীদের সহযোগিতাও কামনা করেন। বিদ্যালয়টির নিজস্ব একটি ভবনের প্রয়োজন উল্লেখ করে বলেন সরকারি কোন খাস জায়গা পেলে সেখানে শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ভবন নির্মাণের যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে। জায়গার অভাবে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।

বিদ্যালয়টি’র পরিচালনা কমিটির সদস্য আলহাজ আব্দুর রাজ্জাক জানান, সমাজের এই সব অবহেলিত শিক্ষা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা দান করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষিণ্ন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই কাজ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছেন। এ দিকে বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আদর্শগ্রামের কবিতা (১২) জানায়, সে অর্থের অভাবে লেখাপড়া করতে পারে নি। বর্তমানে সে এক বাড়িতে ঝি এর কাজ করছে। কাজের ফাঁকে শিশু কল্যাণ বিদ্যালয়ের মাধ্যমে লেখাপড়ার সুযোগ পেয়ে নিজেকে শিক্ষিত করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। তবে এতকিছুর মাঝেও বিদ্যালয়টির নিজস্ব কোন ভবন না থাকায় তারা ভোগান্তিতে পড়ছে।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ভুক্তভোগী এই ঝড়ে পড়া ছিন্নমূল, শ্রমজীবি শিশুরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টিও কামনা করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাঠদান

১০ জানুয়ারি, ২০২০
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ