পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বস্তিতে আগুনে পুড়ে একসাথে হাজার হাজার পরিবরের নিঃস্ব সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়ার বাস্তবতা যেন ঢাকায় নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাসে একাধিকবার ঢাকার বিভিন্ন বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে চলেছে। একেকটা অগ্নিকান্ডের পর মানুষের হাহাকার, বাস্তু ও সহায় সম্বল হারানো হাজার হাজার মানুষের আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। তবে বস্তি পুড়ে যাওয়ার পর সেখানে নতুন বস্তিঘর উঠতে বেশি সময় লাগে না। এভাবেই হাত বদল ঘটে বস্তির জমি এরং বস্তিবাসীর জীবন। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত বছর রাজধানীসহ সারাদেশে ১৬৫ বার বস্তিতে অগ্নিকান্ড হয়েছে, আর চলতি বছরের গত ৮ মাসে বস্তিÍতে অগ্নিকান্ডের সংখ্যা ২৮টি। গত বছরের তুলনায় এ সংখ্যা বেশ কমই বলা যায়। সর্বশেষ এ সপ্তাহে মিরপুরের ঝিলপাড় বস্তিতে আগুন লেগে একরাতে ১৩ হাজার ঘর পুড়ে যাওয়ার সংবাদটি দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও প্রচারিত হয়েছে। এই একটি অগ্নিকান্ড প্রায় ৫০ হাজার বস্তিবাসী মানুষকে চরম দুর্বিপাকে ফেলে দিয়েছে। প্রতিটি অগ্নিকান্ডে কোটি কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে যায় এবং অনেক মানুষ হতাহত হয়। প্রতিবারই বস্তিতে আগুন লাগার পর গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, কারা কি ভাবে এসব বস্তি গড়ে তুলেছে এবং কত টাকা মাসোহারা উঠাচ্ছে তার অনুসন্ধানী রিপোর্টও প্রকাশিত হয়। তবে অবৈধ বস্তি উচ্ছেদ, বস্তিবাসীদের নিরাপত্তা এবং অপরাধমূলক কর্মকান্ড বন্ধে কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায় না।
ঢাকার যানজট, পানিবদ্ধতা, পরিবেশগত দূষণ, নাগরিক নিরাপত্তাহীনতা, ইউটিলিটি সার্ভিসে বিশৃঙ্খলাসহ নানামুখী নাগরিক দুর্ভোগের অন্যতম কারণ সীমিত আয়তন ও অবকাঠামো ব্যবস্থার উপর অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ। সারাদেশের কর্মসংস্থান প্রত্যাশি ও নদীভাঙ্গন কবলিত লাখ লাখ মানুষ প্রতিবছর ঢাকায় ভীড় জমাচ্ছে। এসব মানুষের এক বড় অংশ শহরের বস্তিগুলোতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। আর বস্তিগুলো গড়ে উঠছে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন জমিতে। স্থানীয় এমপি, মন্ত্রী, কমিশনারসহ প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহলের ছত্রছায়ায় থেকে একশ্রেণীর মানুষ এসব বস্তি গড়ে তুলেছে। সরকারি জমিতে গড়ে ওঠা একেকটি বস্তি থেকে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা ভাড়া আদায় করে ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছে। শুধু বস্তিঘরের ভাড়াই নয়, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র ব্যবসাসহ অপরাধ জগতের আন্ডারওর্য়াল্ড হয়ে উঠেছে বস্তিগুলো। একদিকে ক্ষমতাসীন দলের এমপি মন্ত্রীদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জনবলের উৎস হিসেবে বস্তিবাসীদের ব্যবহার করা হচ্ছে, অন্যদিকে একশ্রেণির এনজিও বস্তিবাসীদের দারিদ্র্য, পিছিয়ে থাকা ও অসহায়ত্বকে পুঁজি করে বিদেশ থেকে ফান্ড এনে মানব উন্নয়ন ও মানবাধিকারের লোক দেখানো প্রচারণা চালাচ্ছে। বস্তির মানুষকে ব্যবহার করে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং একশ্রেণির এনজিও স্বার্থ হাসিল করলেও বস্তিবাসীদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।
শহরের লাখ লাখ মানুষ প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানি, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ ও স্যুয়ারেজ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অথচ প্রতিটি বস্তিতে হাজার হাজার ঘরে বিদ্যুৎ ও পানির অবৈধ সংযোগ থাকলেও এসব লাইন থেকে সরকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না। একশ্রেণির মানুষ এসব টাকা আদায় করে নিজেদের অবৈধ প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়াচ্ছে। লাখ লাখ বস্তিবাসী মানুষ নিজেরা যেমন নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা বস্তিগুলো নাগরিক জীবনেও নানা রকম সংকটের জন্ম দিচ্ছে। বিশ্বের কোনো রাজধানী শহরে এমন অবাধে হাজার হাজার বস্তি গড়ে ওঠার নজির নেই। নোংরা, অপরিচ্ছন্ন ও বিশৃঙ্খল বস্তিগুলো মশাবাহিত রোগের অন্যতম উৎস। ঢাকার বসবাসযোগ্যতা বজায় রাখতে চাইলে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব রাজধানী শহর গড়ে তুলতে হলে মানবেতর জীবন-যাপনকারী এসব বস্তি উচ্ছেদ করতে হবে। রাজধানীমুখী জনস্রোত কমিয়ে আনতে সারাদেশে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান ও প্রয়োজনীয় বিকেন্দ্রিকরণ নিশ্চিত করতে হবে। পুরনো ঢাকা এবং বস্তিগুলোতে সংঘটিত অগ্নিকান্ডের মর্মন্তুদ ঘটনা আর নগরবাসী দেখতে চায় না। শহরের নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ন্যূনতম আবাসিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা সরকারকে ভাবতে হবে। মানবিক কারণ দেখিয়ে নেপথ্য রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য বস্তির সংখ্যা বাড়ানোর অপরিণামদর্শি কর্মকান্ড অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। অবৈধভাবে বেদখল হয়ে থাকা বস্তির জায়গাগুলো প্রকৃত মালিক ও সংস্থাগুলোকে ফিরিয়ে দিয়ে তার পরিকল্পিত উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। করাইল বস্তি, ঝিলপাড় বস্তিসহ শহরের বস্তিগুলো কাদের নিয়ন্ত্রণে, কারা মাসোহারা তুলছে, কারা এদের নিয়ে রাজনীতি ও এনজিও চালাচ্ছে তা পুলিশের অজানা নয়। বস্তি কমিয়ে এনে বস্তিতে মাদক ও অপরাধমুক্ত বাসযোগ্য পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।