পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানে নামছে পুলিশ। দেশব্যাপী এ অভিযান আজ শুক্রবার থেকে শুরু হবে। চলবে সাত দিন। চট্টগ্রামে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নেতৃত্বদাতা কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যাকা-ের পর গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হকের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে এই অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়। এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী খুন হওয়ার পর ইতোমধ্যে সারাদেশে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে র্যাব-পুলিশের সাথে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ঢাকাসহ সারাদেশে ৭জন নিহত হয়েছে। নিহতরা জেএমবির সদস্য বলে র্যাব-পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
গত রোববার সকালে চট্টগ্রামের জিওসি মোড়ে বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে ছুরি মেরে ও গুলি করে হত্যা করে দুষ্কৃৃতিকারীরা। মর্মস্পর্শি এই হত্যাকা-ের পর পুলিশ এ ঘটনার জন্য জঙ্গিদের সন্দেহ করে। কার্যত সেদিন থেকেই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়। এর অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার র্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ঢাকায় ২জন এবং পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে গাইবান্ধায় ১জন নিহত হয়েছে। র্যাব ও পুলিশের দাবি নিহত তিন জনই নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির সদস্য। এর আগে মঙ্গলবার পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে তিনজন এবং বুধবার আরও একজন নিহত হয়।
গতকাল পুলিশ সদর দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যা ও সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় নির্ধারণে পুলিশ সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অতিরিক্ত আইজিপি ফাতেমা বেগম, সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপি শেখ হিমায়েত হোসেন, রেলওয়ে রেঞ্জের অতিরিক্ত আইজিপি মো: আবুল কাশেম, ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, সব কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি এবং ঢাকা, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, নীলফামারী, বগুড়া, ঝিনাইদহ ও নাটোর জেলার পুলিশ সুপাররা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে আইজিপি বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী প্রচারণা জোরদার করতে হবে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য কমিউনিটি পুলিশিংকে কাজে লাগাতে হবে। বাবুল আক্তারের স্ত্রী খুনের ঘটনাকে অত্যন্ত নির্মম, বর্বরোচিত ও দুঃখজনক ঘটনা বলে আখ্যায়িত করেন আইজিপি। তিনি এ নৃশংস হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের দ্রুততম সময়ে আইনের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেন। তিনি দৃঢ় মনোবল নিয়ে পেশাদারীত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, টিম স্পিরিট নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
সভায় দেশব্যাপী জঙ্গিদের তালিকা হালনাগাদ করা, বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারি বাড়ানো, ওয়ার্ড কমিউনিটি পুলিশিংকে কার্যকর করা, আগন্তুক ও ভাড়াটেদের ওপর নজরদারি বাড়ানো, বিদেশিদের নিরাপত্তা দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পুলিশের এই সভায় যোগদানের আগে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক রামপুরায় এসপি বাবুল আক্তারের শ্বশুড় বাড়িতে যান। এসপি বাবুল আক্তার তার মাতৃহারা দুই সন্তানকে নিয়ে সেই বাড়িতেই অবস্থান করছেন। আইজিপি শোক সন্তপ্ত পরিবারকে শান্তনা দেন এবং সবাইকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেন।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের ওই বৈঠকে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যাকান্ড নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ বিষয়ে অনেকেই বক্তব্য রাখেন। তাতে বলা হয়, গত এক বছরে যেভাবে লেখক, প্রকাশক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, বিদেশিদের হত্যা করা হয়েছিল, গত ৫ মে সেই কায়দায়ই কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় এসপিপতœী মাহমুদা আক্তার মিতুকে। পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল চট্টগ্রামে থাকাকালে জঙ্গিবিরোধি বিভিন্ন অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ কারণে এই ঘটনার সাথে জঙ্গিদের সম্পৃক্ততার জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
যদিও এরই মধ্যে এই হত্যাকান্ড নিয়ে নানান ধরণের তথ্য এসেছে খোদ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বক্তব্য থেকেই। শুরুতে এই ঘটনার নেপথ্যে জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার কথা বলা হলেও পরে বলা হয়, এর পেছনে দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্র রয়েছে। এই হত্যাকান্ডের পর সারাদেশে জেএমবির ৭ সদস্য ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হলেও ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। গত বুধবার পর্যন্ত মামলার তদন্তের দৃশ্যমান কোনো উন্নতি হয়নি বলে সিএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এর মধ্যেই পুলিশ সদর দপ্তরে সহকর্মীর স্ত্রী হত্যার পর পরিস্থিতি নিয়ে বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন পুলিশপ্রধান শহীদুল হক। বৈঠকে তিনি বলেন, এই ঘটনার (বাবুলের স্ত্রী খুন) সাথে যারা জড়িত, তাদের অত্যন্ত দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আমাদের আনতে হবে। এজন্য বাহিনীর সব সদস্যকে একতাবদ্ধ হয়ে, দৃঢ় মনোবল নিয়ে, পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান পুলিশ প্রধান।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে হত্যার ঘটনায় শোকাহত, মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ পুলিশ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এই ঘটনাকে ইতোমধ্যে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। যেকোনও উপায়ে হত্যাকারীদের খুঁজে বের করতে গ্রহণ করা হচ্ছে সব ধরনের পদ্ধতি। পুলিশের প্রতিটি বিভাগকে দেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে নির্দেশনা। আজ শুক্রবার থেকে ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী’ বিশেষ অভিযান শুরু করবে যৌথবাহিনী। পুলিশ সদর দফতরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম। পুলিশ সদস্য আক্রমণের স্বীকার হলেও তাদের পরিবার কখনও টার্গেট হয়নি। কিন্তু এবার সেটা হয়েছে। পুলিশ তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নাগরিকদের নিরাপত্তা দেবে। পুলিশের উপ-মহাপরিদরশক (ডিআইজি) একেএম শহিদুর রহমান বলেন, যেকোনও অপরাধের বিষয়ে পুলিশ জিরো টলারেন্স। পুলিশকে সেভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযানে র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা যৌথভাবে অংশ নেবে। সারাদেশে এই অভিযান চলবে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।
র্যাবের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ২
রাজধানীর তুরাগ ও রামপুরায় র্যাবের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দু’জন নিহত হয়েছেন। তুরাগ থানার প্রত্যাশা ব্রিজ এলাকায় গতকাল ভোরে ও রামপুরায় বুধবার মধ্যরাতে পৃথক এ দুইটি ঘটনা ঘটে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক (এএসপি) মিজানুর রহমান জানান, তুরাগ থানার প্রত্যাশা ব্রিজের কাছে র্যাবের চেকপোস্টের সামনে দিয়ে ভোরে মোটরসাইকেলে করে তিনজন যাচ্ছিল। র্যাব সদস্যরা তাদের থামতে বললে তারা মোটরসাইকেল না থামিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং র্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। র্যাবও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় নজরুল ইসলামের (৪০) শরীরে গুলি লাগলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান এবং বাকিরা পালিয়ে যান। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। নিহত নজরুল নারী পাচারকারী, অজ্ঞানপার্টির নেতা ও ছিনতাইকারী বলেও জানান তিনি।
এদিকে রামপুরা এলাকায় র্যাবের টহল টিমের সঙ্গে ছিনতাইকারীদের একটা গ্রুপের গুলি বিনিময়ে কামাল পারভেজ (৪২) নামে ছিনতাইকারী দলের এক সদস্য নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি দেশি রিভলভার ও ৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয় বলেও জানান এএসপি মিজানুর রহমান।
রামপুরা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দেলওয়ার হোসেন জানান, রাত পৌনে ১টায় র্যাব-৩ এর সদস্যদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কামাল পারভেজ গুলিবিদ্ধ হন। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ২টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।
জানা গেছে, নিহত কামাল বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার কেনাই কাজীর ছেলে। তিনি উত্তরার আজমপুর এলাকায় থাকতেন।
গোবিন্দগঞ্জে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ জেএমবি সদস্য নিহত
গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা)উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্ধুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে জেএমবির এক সদস্য নিহত হয়েছেন। নিহতের বয়স ৩৫-৩৮ হবে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে গোলাবারুদসহ দেশী অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের মালঞ্চা গ্রামের জাহাঙ্গীরের বাড়িতে বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশের দাবী, নিহত ব্যক্তি নিষিদ্ধি ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবির সক্রিয় সদস্য। গোপন বৈঠককালে পুলিশ অভিযান টের পেয়ে নিহত ব্যক্তিসহ সংঘবদ্ধ জেএমবির সদস্যরা পুলিশের উপর গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে ঘটনাস্থলে জেএমবির সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোজাম্মেল হক এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, চিহ্নিত জেএমবির ক্যাডার মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের বাড়ীতে বুধবার দিবাগত রাতে বেশ কয়েকজন জেএমবি সদস্য সংগঠিত হয়ে নাশকতার উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠক করছিল। খবর পেয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশের একটি দল জাহাঙ্গীরের বাড়িতে অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের উদ্দ্যেশে গুলি ছোড়ে জেএমবি সদস্যরা। এতে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে। এসময় অন্যরা পালিয়ে গেলেও গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই এক জেএমবির সদস্য নিহত হয়।
তিনি আরও জানান, তাৎক্ষণিকভাবে নিহতের নাম পরিচয় জানা যায়নি। তার পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। ঘটনাস্থল থেকে গোলাবারুদসহ দেশী অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের লাশ উদ্ধার করে গোবিন্দগঞ্জ থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।