Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাঁড়াশি অভিযানের নামে আবারো বিরোধী দলের ওপর চড়াও হবে সরকার -মির্জা ফখরুল

প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : সাঁড়াশি অভিযানের অজুহাত দেখিয়ে সরকার বিরোধী দলের ওপর আবারো চড়াও হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিএনপি। গতকাল (শুক্রবার) সকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই আশঙ্কার কথা জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন, এই ধরনের সাঁড়াশি অভিযানের কথা বলে ইতোমধ্যেই ক্রসফায়ার বা তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা বেড়ে গেছে। ৯ জন ইতোমধ্যে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। এটা (সাঁড়াশি অভিযান) হচ্ছে তাদের সেই কৌশল, যেই কৌশল করে তারা এখানে জনগণের আন্দোলনকে দমিয়ে রেখেছিলো। আজকে এই সাঁড়াশি অভিযানের অজুহাত নিয়ে তারা আবারো বিরোধী দলের ওপর চড়াও হবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।
শুক্রবার সকালে বিএনপির মহাসচিব আগারগাঁও পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ভেরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী আজিজুর রহমানকে দেখতে যান। চিকিৎসকদের কাছ থেকে তার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন।
গত ২ জুন ইউনিয়ন পরিষদের শেষ ধাপের নির্বাচনের দু’দিন আগে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হন তিনি।
আহত আজিজকে প্রথমে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দু’দিন আগে তার অস্ত্রোপচারে বাম পা কেটে ফেলা হয়। শেষ ধাপের নির্বাচনে আজিজ ভেরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। হাসপাতালে আজিজুর রহমানকে দেখে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, সম্ভবত আজিজুর রহমানকে হত্যার উদ্দেশে গুলি করা হয়েছিলো। আল্লাহর সহায় তিনি প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জনপ্রিয় মানুষ। সেজন্য তাকে এভাবে গুলি করার পরও এলাকার জনগণ তাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছে।
এই ঘটনা থেকে সারাদেশের চিত্র আমরা পাই। দেশে আজ কোথাও কোনো আইনের শাসন নেই। জীবনের নিরাপত্তা নেই। বিশেষ করে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে যে সহিংসতা হয়েছে, অতীতে আর কখনো ঘটেনি। এটা নজিরবিহীন। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ‘অযোগ্যতা ও দলীয় আনুগত্যতার’ কঠোর সমালোচনাও করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সরকারের লেজুড়বৃত্তি করার ফলেই আজকে নির্বাচন ব্যবস্থা এতোটা অবনতি হয়েছে। পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, সরকার সারাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। এটার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে- ঘোলা পানিতে তারা তাদের যে ক্ষমতা সেটাকে চিরস্থায়ী করে রাখবার জন্য মানুষের অধিকারগুলোকে হরণ করেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে অতিদ্রুত একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই বলে জানান তিনি।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, গাইবান্ধা জেলা সহ-সভাপতি মো. হাসান আলী, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এ সরকার দেশে কোন বিরোধী দল রাখতে চায় না
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশ আজ একটা আবদ্ধ জনপদে পরিণত হয়েছে। আমাদের জনগণের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। ভোটের অধিকার, রাজনীতির অধিকার, কোন কোন ক্ষেত্রে ধর্ম পালনের অধিকারও কেড়ে নেয়া হচ্ছে। সরকার দেশে কোনো বিরোধী দল বা মত রাখতে চায় না। দেশে কিছু দিন যাবৎ রহস্যজনক গুপ্তহত্যা শুরু হয়েছে। একদিকে যারা ধর্মে বিশ্বাস করে না তাদের উপর আক্রমণ হচ্ছে অন্যদিকে যারা ধর্মে বিশ্বাসী যেমন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলমান ধর্মাবলীদেরও হত্যা করা হচ্ছে। সরকার এ ক্ষেত্রে হত্যা বন্ধে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে আরেকটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, এ সব অপরাধের নামে যাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদের বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করা হচ্ছে। গত ৩ দিনে অন্তত ৯ জনকে বন্দুকযুদ্ধে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, হত্যাকা- বন্ধের জন্যে সাঁড়াশি অভিযানের নামে যে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে তা মূলত বিরোধী দলকে দমনের জন্যে আরেকটি অভিযান মাত্র। গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৬০০ জনকে গ্রেফতার করা হচ্ছে যার মধ্যে অনেকেই বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মী। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানে গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে খেলাফত মজলিস আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, শুধু ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদেরই নির্যাতন করা হচ্ছে না আজ প্রায় ১৪ মাস যাবৎ মাহমুদুর রহমমান মান্নাকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। প্রখ্যাত সাংবাদিক শফিক রেহমানকে মিথ্যা মামলায় আটক করে রাখা হয়েছে। সত্য কথা বলার কারণে আমার দেশের মাহমুদুর রহমানকে ৩ বছরের অধিক সময় কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদকে ১ বছর ধরে আটক রাখা হয়েছে। কারাগার থেকে বের হতে দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২৬টি মামলা দেয়া হয়েছে। অনেক মামলায় মিথ্যা চার্জশিট দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, একটা জিনিসি পরিষ্কার আর তা হচ্ছে এ সরকার দেশে কোন বিরোধী দল বা মত রাখতে চায় না। এক সময় এ দলটি মাত্র ৪টি বাদে সকল পত্রপত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল। সব কিছু করা হচ্ছে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যে। তিনি বলেন, এ সরকার যে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে সে নির্বাচন কোন নির্বাচনই ছিল না। সেখানে ১৫৪ জন বিনা ভোটে এমপি হয়েছেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে এভাবে জুলুম-নির্যাতন করে, জনগণকে বিভ্রান্ত করে ক্ষতায় টিকে থাকা যাবে না। আমাদের সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, জালিম শাসকদের সামনে হক কথা বলা হচ্ছে সবচেয়ে বড় জিহাদ। আজকে হামলা-মামলা আর নির্যাতনের কারণে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা এই রমজান মাসেও ঘরে থাকতে পারছে না। আজকে রোজাকে সমানে রেখে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
গতকাল রাজধানীর সীগাল রেস্টুরেন্টে খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত ইফতার মাহফিলে সংগঠনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ শফিক উদ্দিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় গণতান্ত্রিক পাটির্- জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, সাধারণ সম্পাদক মোঃ লুৎফুর রহমান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি- এনপিপি’র চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ- বিএমএলর সভাপতি এ এইচ এম কামরুজ্জামান খান, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্তুজা, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন, দৈনিক নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব এম. আবদুল্লাহ, দি নিউ নেশনের সাবেক সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি’র মহাসচিব ড. রেদওয়ান আহমদ, শেখ গোলাম আসগর, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব অধ্যাপক আবদুল করিম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরীর যুগ্ম সদস্যসচিব মাওলানা ফজলুল করিম, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিঙ্কন, ইসলামিক পার্টির সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী, ন্যাপ ভাসানী সভাপতি এডভোকেট মোঃ আজহারুল ইসলাম, ডেমোক্রেটিক লীগ- ডিএল’র সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমদ মনি, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহম্মদ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, এ আর এম আবদুল মতিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুজাহিদুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. আবদুল লতিফ মাসুম, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ আবদুল্লাহ খান, এডভোকেট বোরহান উদ্দিন, এডভোকেট রেজাউল করিম প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাঁড়াশি অভিযানের নামে আবারো বিরোধী দলের ওপর চড়াও হবে সরকার -মির্জা ফখরুল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ