Inqilab Logo

সোমবার, ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০৪ ভাদ্র ১৪৩১, ১৩ সফর ১৪৪৬ হিজরী

সাঁড়াশি অভিযান আইনবহির্ভূত -মির্জা ফখরুল

আমাদের সংস্কৃতি ঐতিহ্য ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে বর্তমান শিক্ষানীতি সঙ্গতিপূর্ণ নয়

প্রকাশের সময় : ১৮ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : চলমান সাঁড়াশি অভিযান ও গ্রেফতার আইনবহির্ভূত বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এদেশে শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে এবং তারা শান্তিপূর্ণভাবে জীবনযাপন করে। সেখানে আজকে তাদের ওপর আঘাত হানা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যে শিক্ষানীতি করা হয়েছে, সেটা আমার সংস্কৃতি-ঐতিহ্য-ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, সে কারণে এর প্রতিবাদ উঠেছে।
গতকাল বারিধারার ‘জামিয়া মাদানিয়া’ মাদরাসায় এক ইফতার মাহফিলে তিনি এই দাবি করেন। ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের উদ্যোগে এই ইফতার মাহফিল হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে মিথ্যা দোষারোপ দিয়ে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরও ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে। ১২ হাজার যে গ্রেফতার করা হয়েছে, এটা সম্পূর্ণ আইনের বিরোধী। কারণ গত কয়েকদিন আগে হাইকোর্ট থেকে রায় দিয়েছে যে বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। অথচ ১২ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে বিনা ওয়ারেন্টে।
তিনি অভিযোগ করেন, হাজার হাজার গ্রেফতার করলেও এর মধ্যে জঙ্গি খুঁজে পেয়েছে ১৩৫ জন। তাহলে গ্রেফতারকরা ১২ হাজার মানুষ কারা? বাকীরা কারা? বাকীরা ধর্মপ্রাণ মানুষ, যারা ধর্ম বিশ্বাস করে, যারা ঈমান-আকিদায় বিশ্বাস করেন, যারা ধর্ম-কৃষ্টিকে সমুন্নত রাখতে চায়। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে তাদের এই অভিযান।
গত এক বছরে দেশে যেসব হত্যকা- হয়েছে সে প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে সাম্প্রতিককালে যে গুপ্ত হত্যা হয়েছে, এর পেছনে অত্যন্ত সাবলীলভাবে প্রশ্ন এসে যাবে এখন পর্যন্ত সরকার একটা হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে পারেনি কেন? আজকে দেড় বছর এরকম হত্যায় নিহত হয়েছেন প্রায় ৪৮ জন।
তিনি বলেন, ক্রসফায়ারে আমাদের ভাইদের গুলি করে মেরে ফেলা হচ্ছে। কোনো জবাবদিহিতা নেই। সংসদে কোনো জবাবদিহিতা নেই। সব মিলিয়ে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে যেখানে আইনের শাসন উধাও হয়েছে। আজকে তারা (সরকার) গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে আজ ফ্যাসিস্ট শাসন চলছে। বিরোধী দল দমন চলছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম-খুন করে নিচিহ্ন করে দেয়ার একটা অপচেষ্টা চলছে। সমস্ত দেশটাকে কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। বাংলাদেশকে দুঃখজনকভাবে একটা ভিন্ন রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা এটার তীব্র বিরোধিতা করছি। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অক্ষুণœ থাকে, এখানে কেউ যেন হাত দিতে না পারে, সে বিষয়ে অবশ্যই আমরা সজাগ ও সচেতন রয়েছি। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
ফখরুল বলেন, আমরা আশা করব, সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। জনগণের মনের ভাষা বোঝে, চোখের ভাষা বোঝে, তারা সত্যিকার অর্থে একটি নিরপেক্ষ অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে, সকল দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবেন। যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
আল্লামা নুর হোসাইন কাশেমী বলেন, প্রহসনের নির্বাচনে এই সরকার ক্ষমতায়। দেশের অর্থনীতির দুরবস্থা দেখা দিয়েছে। আজকে কৃষক তাদের পণ্যের দাম পাচ্ছে না। দেশ এক সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে। ২০১০ সালের শিক্ষানীতি, শিক্ষা আইন, ২০১৬ সালের খসড়া এবং সিলেবাসÑএদেশকে ইসলাম শূন্য করার যে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র চলছে, আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমরা এর পরিবর্তন চাই।
বক্তব্যের পর জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নুর হোসেইন কাশেমী, সহসভাপতি মুফতি আবদুর রব ইউসফী, মাওলানা মোস্তফা আজাদ, মুফতি আবদুর রব ইউসুফী, মাওলানা জহিরুল হক ভুঁইয়া, মাওলানা ওবায়েদুল্লাহ ফারুক, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এম এ রকীব, খেলাফত মজলিশের নায়েবে আমীর মাওলানা মজিবুর রহমান পেশোয়ারীকে একই টেবিলে বসে ইফতার করেন ফখরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে যারা ২০ দলীয় নেতৃবৃন্দের যারা উপস্থিত ছিলেন, চেয়ারম্যান, জাতীয় পার্টি, এড. ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, চেয়ারম্যান, এনপিপি, এএইচএম কামরুজ্জামান, সভাপতি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, মাওলানা এডএমএ রকীব, চেয়ারম্যান, ইসলামী ঐক্যজোট, আহসান হাবীব লিংকন, প্রেসিডিয়াম সদস্য, জাতীয় পাটি, মাওলানা মুজিবুর রহমান পেশওয়ারী, নায়েবে আমীর, খেলাফত মজলিস, আব্দুল আজীজ হাওলাদার, নির্বাহী সভাপতি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, চেয়ারম্যান, লেবার পার্টি, খন্দকার লুৎফুর রহমান, মহাসচিব, জাগপা, ড. এনামুল হক আজাদ, মহাসচিব, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন, আবুল কাসেম,  মহাসচিব, ইসলামিক পার্টি, আমিনুর রহমান, মহাসচিব, কল্যাণপার্টি, অ্যাডভোকেট এসকে জুলফিকার বুলবুল, মহাসচিব, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, মাওলানা হাকীম আব্দুল করীম, মহাসচিব, ইসলামী ঐক্যজোট, সাইফুদ্দীন আহমদ মুনীর, সাধারণ সম্পাদক, ডেমোক্রেটিক লীগ. ডিএল, জনাব এম গোলাম মোস্তফা ভূইয়া, মহাসচিব, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, দীন মোহাম্মদ কাসেমী, সভাপতি, জাতীয় উলামা পরিষদ, আলহাজ শামসুল হক, সভাপতি, আমরা ঢাকাবাসী, আজহারুল ইসলাম, চেয়ারম্যান, ন্যাপ ভাষানী, ঢাকা মহানগর জমিয়তের সেক্রেটারী মাওলানা মতিউর রহমান গাজীপুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শাইখুল হাদীস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা নাজমুল হাসান, কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক মুফতী মুনীর হোসাইন, কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা জিয়াউল হক কাসেমী, ঢাকা মহানগর সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা হেদায়েতুল ইসলাম, যুব জমিয়ত বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা শরফুদ্দীন ইয়াহইয়া কাসেমী, ছাত্র জমিয়ত সভাপতি মুফতী নাসীর উদ্দীন, সেক্রেটারী জেনারেল মুফতী গোলাম মাওলা ও ছাত্র জমিয়ত ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা বোরহানুদ্দীন প্রমুখ।
এছাড়া বিএনপির মাহবুবুল হক নান্নু, অ্যাডভোকেট আবেদ রাজাসহ জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দও ইফতার অনুষ্ঠানে ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাঁড়াশি অভিযান আইনবহির্ভূত -মির্জা ফখরুল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ