মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়ে দেশের ভেতরেও সমালোচনার শিকার হচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি। তার সমালোচনা করে দেশটির জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম ‘আনন্দবাজার’ শনিবার ‘দখল’ শিরোনামে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে। পাঠকদের জন্য সম্পাদকীয়টি তুলে ধরা হল-
কাশ্মীর নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী অত্যান্ত সংযত ভাষণ দিয়েছেন। তাতে নাটকীয়তা থাকলেও, বাড়াবাড়ি ছিল না। কাশ্মীরে ঘটনাক্রমকে আরো একটি ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ বলে বুক ঠুকে দম্ভ প্রকাশ করার প্রলোভন তিনি সযত্নে এড়িয়ে যেতে পেরেছেন।
প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে কাশ্মীরে টেলিভিশন সংযোগ বিচ্ছিন্ন, সেখানে সেই অঞ্চলের অধিবাসীদের উদ্দেশে ভাষণ তাদের কাছে কোন পথে পৌছবে? এর উত্তরও সবারই জানা। এই ভাষণ যে প্রকৃত প্রস্তাবে উপত্যকার জন্য নয়, বরং অবশিষ্ট দেশের জন্য— তাতে কোন সন্দেহ নেই। এই প্রেক্ষিতেই ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী মোদি সোশ্যাল মিডিয়ার নাড়িনক্ষত্র জানেন। ফলে, তিনি অবশ্যই জানেন, গত কয়েক দিন ধরে নেট-দুনিয়ায় দু’টি ‘রসিকতা’ভাইরাল হয়েছে— এখন কাশ্মীরে জমি কেনা যাবে, এবং ‘ফর্সা’ কাশ্মীরি মেয়েদের বিয়ে করা সম্ভব হবে। বিজেপির নেতারাই যেখানে এমন রসিকতা করছেন, সাধারণ মানুষের কথা বলা বাহুল্য। কোনও ভূখণ্ড জয় করলে সেখানকার মাটি ও নারীর উপর জয়ীর অধিকার প্রশ্নাতীত— নাদির শাহের কথা ভাবলে সন্দেহ থাকে না। অনুমান করা যাচ্ছে, নেতা ও অনুগামীরা কাশ্মীরের ঘটনাক্রমকে হয়তো দখল হিসাবেই দেখছেন। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে এই ভুলটি ভেঙে দেয়ার কোন চেষ্টা করেননি। তিনি নিজেও সম্ভবত বিষয়টি এভাবেই দেখেন বলেই ভাষণে এসব রসিকতার কোন জবাব দেননি।
মোদি তার ভাষণে আরো বেশ কিছু প্রসঙ্গের উল্লেখ করেননি। যেমন, ৩৭০ ধারা ও ৩৫এ ধারার বিলুপ্তির ফলে কাশ্মীরি মানুষের কতখানি উপকার হবে— ছাত্রছাত্রী থেকে সাফাইকর্মী, সরকারি কর্মকর্তা থেকে সাধারণ শ্রমিক, কার কি লাভ হবে— সে কথা ফলাও করে বললেও প্রধানমন্ত্রী বললেন না, এই ধারাগুলি থাকায় কাশ্মীরের মানুষের কি কি সুবিধা হচ্ছিল। কাশ্মীরে ভূমি সংস্কারের প্রসঙ্গটিও এড়িয়ে গিয়েছেন; রাজ্যে চাকরির ক্ষেত্রে, জমি-বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে স্থানীয়দের বাড়তি সুবিধার কথা বলেননি। রাজ্যের উন্নয়নের প্রশ্নে বিধানসভার অনস্বীকার্য গুরুত্বের কথাও স্বীকার করেননি। তিনি জানিয়েছেন, ৩৭০ ধারার কারণে ও রাজ্য সরকারের অসহযোগিতায় কেন্দ্রীয় কল্যাণমূলক আইনও রাজ্যে বলবৎ করা যায়নি। কিন্তু জানাননি, মেহবুবা মুফতির পিডিপির সাথে জোট সরকার চালাবার সময় বিজেপি কেন সেই উন্নয়নের সদর দরজা খুলে দেয়নি।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট, তার আশা যে ৩৭০ ধারা বিলোপের পর উপত্যকায় বেসরকারি বিনিয়োগ আসবে এবং তাতে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাবে। কথাটি ভারতের এবারের বাজেটের সুরে মিলেও যায়। কিন্তু, সমগ্র দেশে তো ৩৭০ ধারা ছিল না কখনও। সেখানে যদি বেসরকারি বিনিয়োগের অভাবে উন্নয়ন আটকে থাকে, কাশ্মীরে কিভাবে বিনিয়োগ উপচিয়ে পড়বে, প্রধানমন্ত্রী ব্যাখ্যা করলেন না।
বরং, জম্মু-কাশ্মীরকে অঙ্গরাজ্য হতে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত কবার যুক্তি হিসাবে যে ভাবে উন্নয়নের প্রসঙ্গটি টানলেন, তা বিপজ্জনক। প্রধানমন্ত্রী জানালেন, রাজ্য সরকার উন্নয়ন করতে পারেনি। কেন্দ্র রাশ ধরলেই বিতস্তা-চন্দ্রভাগায় উন্নয়নের প্লাবন আসবে। কথাটি প্রত্যক্ষ ভাবে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় দর্শনের পরিপন্থী। সংবিধান-প্রণেতারা যদি বিশ্বাস করতেন যে, রাজ্য সরকারের অধীনে উন্নয়ন হয় না, তার জন্য কেন্দ্রের বিকল্প নেই, তবে সম্ভবত ভারত নামক দেশটি যুক্তরাষ্ট্র না হয়ে বেশ কিছু কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সমষ্টি হত। নরেন্দ্র মোদির অবস্থানটি একক কেন্দ্রের দর্শনে পুষ্ট। সর্বশক্তিমান কেন্দ্র। এবং, সেই অবস্থান যে শুধু কাশ্মীর উপত্যকাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে, সেই সম্ভাবনাও কম। রাজ্যে উন্নয়নের প্রকৃত বা কল্পিত অভাব যদি কেন্দ্রীয় দখলের যুক্তি হয়ে উঠে, ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ দুর্ভাবনার কারণ যথেষ্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।