Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আপিল নিষ্পত্তিতে সহস্র ট্রাইব্যুনালের পরিকল্পনা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ভারতের আসামে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধক কর্তৃপক্ষের ঘোষিত অ-ভারতীয়দের আপিল নিষ্পত্তির জন্য ১ হাজার ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল গঠনের পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে। এই ট্রাইব্যুনাল ৩১ আগস্ট প্রকাশিত নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়া কয়েক লাখ বাসিন্দার আবেদন যাচাই করবে। ধারণা করা হচ্ছে, তালিকা থেকে বাদ পড়াদের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ লাখের মতো হতে পারে। কয়েক প্রজন্ম ধরে ভারতে বসবাস করা এতো বিপুল সংখ্যক রাষ্ট্রহীন মানুষদের নিয়ে কী করা হবে তা নিয়ে দ্রæত সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকে। এমনিতেই উত্তর-পূর্ব ভারতে বিভিন্ন সংকট বিদ্যমান। দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র রাষ্ট্রহীন জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের চেয়েও ভারতে রাষ্ট্রহীন মানুষের সংখ্যা বেশি দাঁড়াবে। মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জনসংখ্যা প্রায় ৮ লাখ। যদিও প্রায় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। আসাম থেকে বিশ্লেষকদের বিবরণ অনুসারে, রাজ্যটির নাগরিক তালিকায় বড় ধরনের অসংখ্য ভুল ও অযথাযথ তথ্যের উপস্থিতি রয়েছে। অনিয়ম এতোই চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় যে কেন্দ্রীয় সরকারকে এনআরসি তালিকা প্রকাশের নির্দিষ্ট ৩১ জুলাই থেকে পিছিয়ে আসতে হয়। ভারতীয় নাগরিক, এমনকি দাদা-নানাদের নাগরিকত্বের প্রমাণ দেখাতে বলা হয়। পরিবারের সব সদস্য তালিকাভুক্ত হলেও দেখা গেছে মা নেই। সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে যেতে হয়েছে কারাগারে। এমন উদাহরণ অসংখ্য। রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টে দাবি করেছেন, অনেক অভারতীয় নিম্নসারির কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন। বেশ কয়েকটি স্থানে সত্যিকার ভারতীয়রা স্থান পাননি তালিকায়। ফলে নতুন এনআরসি নিয়ে সংশয় আরও বাড়ে। অভারতীয়দের নাগরিক তালিকায় স্থান পাওয়ার ফলে অল আসাম স্টুডেন্টস’ ইউনিয়নের মতো কট্টরপন্থীদের আসামীয়দের আশঙ্কা সত্যি বলে প্রমাণিত হচ্ছে। তাদের দাবি, অবৈধ বাসিন্দাদের রাজ্য থেকে অবিলম্বে তাড়িয়ে দিতে হবে। রাজ্যে ভাষাগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হয়রানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী অল আসাম মাইনরিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের মতো সংগঠনগুলোও দৃঢ়ভাবে এনআরসিতে অন্তর্ভুক্তিকরণের প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেছে। সুপ্রিম কোর্ট বারাক উপত্যকার বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলায় ২০ শতাংশ নাম পুনরায় যাচাইয়ের জন্য কর্মকর্তাদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। এনআরসি কর্মকর্তাদের দাবি, ইতোমধ্যে ৭০ লাখের বেশি নাম অভিযোগের প্রেক্ষিতে যাচাই করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। আসামের প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৪১ লাখ এনআরসিতে স্থান পাননি। সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুসারে, প্রায় ৩৬ লাখ নাগরিকত্বের জন্য পুনরায় আবেদন করেছেন। গত কয়েক বছর ধরেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের কয়েক হাজার কর্মী এতে অংশগ্রহণ করে। প্রক্রিয়াটি শুরু হওয়ার পর থেকেই জাতিগত উত্তেজনা ও বাংলা ভাষাভাষী বরাক উপত্যকার জেলাগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গত কয়েক বছরে আন্তঃস¤প্রদায়গত স¤প্রীতির উন্নতি হয়েছে। যেমন আশঙ্কা করা হয়েছিল দেশভাগের সময় ভারতে আসা বাঙালি হিন্দু ও মুসলমানদের হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পর ভারতীয় নাগরিকত্বের যথাযথ প্রমাণ ছাড়া আসামে কাউকে পাওয়া গেলে তাকে বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। তাড়িয়ে দেওয়ার আগে তাদের কারাগারে রাখা হচ্ছে। নতুন করে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল স্থাপন নিয়ে ৩১ আগস্ট তালিকা থেকে বাদ পড়ে শিগগিরই রাষ্ট্রহীন হতে যাওয়া মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে তেমন উচ্ছ¡াস নেই। কারণ কয়েক বছর ধরে প্রায় শতাধিক ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল আসামে সক্রিয় রয়েছে। এক্ষেত্রে আসামের এই ট্রাইব্যুনালের কার্যকারিতা নিয়ে মানবাধিকারকর্মী রোহিনি মোহনের গবেষণার কথা বিশেষভাবে তুলে ধরতে হয়। এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আসাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ