Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কোন পথে খালেদা জিয়ার মুক্তি

বিএনপির নতুন ভাবনা

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০০ এএম

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি কোন পথে, এ বিষয়ে দলের নীতিনির্ধারকরা নতুন করে ভাবছেন। এত দিন দলের সিনিয়র নেতাদের অনেকে বলে আসছিলেন, আইনি প্রক্রিয়াতেই চেয়ারপার্সনের মুক্তি হবে। গত ১ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন সরাসরি নাকচ হয়ে যাওয়ার পর সে আশার আলো অনেকটাই নিভে গেছে। আর সেই সাথে সারাদেশের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম নিয়েছে। এ অবস্থায় চেয়ারপার্সনের মুক্তির বিষয়টি নিয়ে দল নতুন করে ভাবছে। বিশেষ করে দলের নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়টি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। জামিন বাতিলের পর ওইদিন রাতেই দলের সিনিয়র নেতারা পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে সিনিয়র আইনজীবীদের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। সেখানে তারা স্কাইপিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথেও পরামর্শ করেছেন। তবে ওই বৈঠকে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের মুক্তির বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তার মুক্তি আইনি প্রক্রিয়ায় হবে না, এটা এখন আমাদের কাছে যেমন পরিষ্কার, তেমনি দেশবাসীর কাছেও এটি স্পষ্ট। বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে যেসব সাজানো মামলা রয়েছে, এগুলোতে আইনের যেকোনো গ্রাউন্ডেই তিনি জামিন পাবেন, এমনটি একজন আইনজীবী শুধু নয়, সাধারণ মানুষও মনে করে। অথচ সরকার নানাভাবে ছল-চাতুরী করে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন দিচ্ছে না। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিন আবেদন সরাসরি নাকচ হয়ে যাওয়ার পর এটি দেশবাসীর কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। তাই আমরা এখন মনে করি, রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমেই বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। এ বিষয়ে কী কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে তা আগামীকাল (শনিবার) স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।
বেগম খালেদা জিয়ার গ্রেফতারের ১৭ মাস পেরিয়ে গেলেও আইনি প্রক্রিয়ায় তাকে আজও মুক্ত করতে পারেনি বিএনপি। এতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর চরম ক্ষুব্ধ। গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি চেয়ারপার্সন গ্রেফতারের পর থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি দেয়ার দাবি করে আসছে। তবে কেন্দ্রীয় নেতারা এ বিষয়ে কোনো কার্যকর কর্মসূচি আজ পর্যন্ত গ্রহণ করতে পারেননি। তারা শুধু বলেছেন, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে। নেতাদের এ কথায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এখন আর আস্থা রাখতে পারছেন না। তারা বলছেন, চেয়ারপার্সনের মুক্তির বিষয়ে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। তাই খুব শিগগিরই তারা মুক্তির দাবি নিয়ে রাজপথে নামবেন।

এ বিষয়ে নেত্রকোনা জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক ডা. আনোয়ারুল হক ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের এখন একটাই দাবি, একটাই চাওয়া সেটা হলো ম্যাডামের (বেগম খালেদা জিয়া) মুক্তি। এর বাইরে আমরা আর কোনো কিছুই ভাবি না। ম্যাডামের মুক্তির জন্য রাজপথে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। তাই নেতাকর্মীরা তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। কেন্দ্র থেকে যে কর্মসূচি দেয়া হবে আমরা তা সফল করতে সব সময় প্রস্তুত আছি।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের আইনজীবীরা মনে করছেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিন আবেদন হাইকোর্টে সরাসরি খারিজ হয়ে যাওয়ায় তার মুক্তির বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আইনজীবীরা জানান, এখন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালাস চেয়ে যে আপিল আবেদন শুনানির অপেক্ষায় আছে, সেই আবেদনটি হাইকোর্টের অন্য কোনো বেঞ্চে উপস্থাপন করে জামিন আবেদন করা যেতে পারে। আর দ্বিতীয় প্রক্রিয়া হলো হাইকোর্টের জামিন আবেদন খারিজের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাওয়া। তারা বলেছেন, যেহেতু খালেদা জিয়ার কোনো আইনজীবীকে তার সাথে সাক্ষাৎ করতে দেয়া হচ্ছে না, সেহেতু এ বিষয়ে সিনিয়র আইনজীবীরা সম্মিলিতভাবে আলোচনায় বসে পরবর্তী করণীয় কী সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, রাজনৈতিক কারণে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়েছে। এ কারণে সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার জামিন হবে না। সাত বছরের সাজায় তার জামিন নামঞ্জুর করা অত্যন্ত দুঃখজনক। তারপরও আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই আমরা এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাবো।

খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী ও বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ইনকিলাবকে বলেন, যেকোনো বিবেচনায় জামিন পাওয়া বেগম খালেদা জিয়ার আইনি অধিকার। বারবার জামিন থেকে তাকে বঞ্চিত করে তার অধিকার ক্ষুন্ন করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, জামিন না দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, যা অবিচারেরই নামান্তর। জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে যে শর্তগুলো আদালত বিবেচনা করেন, তার প্রতিটি শর্তই বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। যেমন স্বল্প সাজা, শারীরিকভাবে অসুস্থ, বয়স বিবেচনা ও তার সামাজিক অবস্থান। প্রতিটি ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া জামিন পাওয়ার হকদার ছিলেন।



 

Show all comments
  • Khandaker Momin ৩ আগস্ট, ২০১৯, ২:০০ এএম says : 0
    সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাজাপ্রাপ্ত আসামী হিসেবে এক বছরের ও বেশী সময় ধরে কারাভোগ করছেন। তাঁর সাজার প্রক্রিয়া এবং বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলে ও একথা দিনের আলোর মত সত্যি তাঁর মত নেত্রীর মুক্তি নিয়ে বিএনপি কোন রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সম্পূর্ণ ব্যার্থ হয়েছে। উঁনার বয়স এবং শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে মুক্তির ব্যাপারে ক্ষমতাশীল সরকারের সমর্থক অনেকেই সহমত প্রকাশ করেন বলে জানা যায়। এসব বিবেচনায় নিয়ে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশা করি।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Akram Babu ৩ আগস্ট, ২০১৯, ২:০০ এএম says : 0
    বিএনপি এখন সরকারের উপর নির্ভর, একটা প্রধান দলের দেউলিয়া মনোভাব দেখানো উচিৎ নয় । মনে রাখা উচিৎ আ.লীগ টানা ২৩ বছর ক্ষমতার বাহিরে ছিল এবং অনেক জেল জুলুম সহ্য করেছে তাই আজকে ক্ষমতায় আসতে পেরেছে । বিএনপি নেতাদের সাহস দেখাতে হবে, ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় যারা টাকার পাহাড় গড়েছে তারা এখন কেউ নেই, খালেদা এখন পাস্ট এই চিন্তা নিয়ে এগোতে হবে বিএনপি'কে ।
    Total Reply(0) Reply
  • Samia Lessi ৩ আগস্ট, ২০১৯, ২:০১ এএম says : 0
    সম্মান হারিয়ে রাজনীতি নয়। আমি তো দোষ করিনি। আপোষহীন নেত্রী
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Saddam ৩ আগস্ট, ২০১৯, ২:০২ এএম says : 0
    বিএনপি ছোট কোন দল না যে শেষ হয়ে যাবে।বিএনপি দল ছিল এবং থাকবে
    Total Reply(0) Reply
  • Md Fardin Ahamed ৩ আগস্ট, ২০১৯, ২:০২ এএম says : 0
    গনেশ একবার উলটে গেলে আর আগামি 50 বছর খূজে পাওয়া যাবে না
    Total Reply(0) Reply
  • Nazmul Hasan ৩ আগস্ট, ২০১৯, ২:০২ এএম says : 0
    এখন সরকারের দয়ার উপর নির্ভর শীল বি এন পির ভবিষ্যত । বাস্তবতা এটাই
    Total Reply(0) Reply
  • মাহমুদুল হক ৩ আগস্ট, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 0
    জীবন বিএনপি বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে আন্দোলনের দিন ধার্য করছে। ঈদ যায় ঈদ আসে কিন্তু বিএনপির আন্দোলন আর মাঠে গড়ায় না। নেতা-কর্মীরাও বুঝতে পেরেছেন যে, মাঠ ধরে রাখার ব্যর্থ প্রচেষ্টায় আন্দোলনের কথা বলতে হয় তাই নেতারা আন্দোলনের কথা বলেন। তবে এই হাস্যকর হুশিয়ারি বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনীতির পটভূমি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করছে তা দলটির নেতারা অনুধাবন করতে পারছেন না।
    Total Reply(0) Reply
  • নোমান ৩ আগস্ট, ২০১৯, ১১:২৫ এএম says : 0
    খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য রাজপথে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • বাবুল ৩ আগস্ট, ২০১৯, ১১:২৯ এএম says : 0
    খালেদা জিয়ার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি
    Total Reply(0) Reply
  • তানবীর ৩ আগস্ট, ২০১৯, ১১:৩০ এএম says : 0
    দেখা যাক তারা কি সিদ্ধান্ত নেন
    Total Reply(0) Reply
  • nurulalam ৩ আগস্ট, ২০১৯, ৯:২৩ পিএম says : 0
    দেখতে থাকুন,দোয়া করতে থাকুন।দেশ বড না খালেদা?দেশের জন্য কর্মসূচি দিন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ