পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সউদী সরকারের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর ৫ দিনের সউদী আরব সফরকে নানা দিক থেকেই একটি গুরুত্বপূর্ণ সফর হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে এই সফরের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা ছিল সউদী আরবে বাংলাদেশী জনশক্তি নিয়োগ প্রক্রিয়াকে পুনরায় অর্গলমুক্ত করা এবং সেখানে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশী শ্রমিকদের নিয়মিতকরণ করার পাশাপাশি আইনগত জটিলতা দূর করতে একটি উচ্চ পর্যায়ের সমঝোতায় উপনীত হওয়া। যদিও কোনো পক্ষই এসব বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা তুলে ধরেছে বলে শোনা যায়নি। তথাপি সঙ্গতভাবেই অবশেষে সউদী আরবে নতুন করে ৫ লাখ বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগে সউদী সরকারের আগ্রহের কথা জানা গেল। গত রোববার জেদ্দার রয়েল কনফারেন্স হলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও সউদী আরবের শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ড. মোফারিস সাদ আল হোকাবাইন-এর মধ্যে যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, তারই বিভিন্ন দিক সোমবার জেদ্দার হিলটন হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী তথ্যসচিব ইহসানুল করিম। সংবাদ সম্মেলনে সউদী সরকার বাংলাদেশ থেকে ৫ লাখ শ্রমিক নিয়োগ দিতে সউদী সরকারের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যসচিব। একটি অনলাইন পোর্টালের বরাত দিয়ে গতকাল ইনকিলাবে এই সংবাদ প্রকাশিত হয়। সউদী আরব বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার এবং বাংলাদেশী জনশক্তি রফতানির প্রধান বাজার হিসেবে বাংলাদেশের বৈদেশিক রেমিটেন্সেরও প্রধান উৎস। এ হিসেবে সউদী আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সুসম্পর্ক নানা কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব মুসলিমের ক্বিবলাহ এবং মহানবীর স্মৃতিধন্য পবিত্রতম নগরী মক্কা-মদিনার কারণে আবহমান কাল ধরে এ দেশের মুসলমানদের কাছে সউদী আরব এক বিশেষ মর্যাদায় অভিষিক্ত। সম্ভবত এ কারণেই বাংলাদেশের বিদেশ গমনেচ্ছু শ্রমিকরা তাদের পছন্দের দেশ হিসেবে সউদী আরবকে বেছে নেয়। এই মুহূর্তে ২৫ লক্ষাধিক বাংলাদেশী শ্রমিক সউদী আরবে কর্মরত আছে। একদিকে সাম্প্রতিক সময়ে সউদী আরবে বাংলাদেশী শ্রমিকরা নানাবিধ সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে, অন্যদিকে ২০০৮ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সউদী আরবে জনশক্তি রফতানি কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। সউদী আরবে জনশক্তি রফতানির প্রতিবন্ধকতা দূর করতে গত ৭-৮ বছরে সরকারের পক্ষ থেকে নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও এসব উদ্যোগ তেমন কোনো কাজে আসেনি বললেই চলে। অবশেষে গত বছরের শুরুতে উভয় পক্ষের সমঝোতা চুক্তির মধ্য দিয়ে সউদী আরবে নতুন করে জনশক্তি রফতানির উদ্যোগ নেয়া হলেও বছর পেরিয়ে সে উদ্যোগও ভিন্ন জটিলতার সম্মুখীন। প্রতি মাসে ১০ হাজার নারী শ্রমিক সউদী আরবে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও প্রথমত এদেশের নারী শ্রমিকদের অনেকেই এখন সউদী আরব বা মধ্যপ্রাচ্য গমনে অনাগ্রহী হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে সউদীসহ মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রায় ৫০ হাজার নারী শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছে বলেও সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়।
শুধু সউদী আরবেই নয়, মালয়েশিয়াসহ বাংলাদেশী জনশক্তি রফতানির ট্রাডিশনাল বাজারগুলোতে দীর্ঘ প্রায় এক দশক ধরে বিদ্যমান মন্দা কিছুতেই কাটছে না। সউদী আরবের পর বাংলাদেশী শ্রমিকদের অন্যতম গন্তব্য মালয়েশিয়াও নানাবিধ কারণে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ রেখেছিল। অনেক দেন-দরবারের পর অবশেষে সেখানেও জনশক্তি রফতানির বন্ধ্যাত্ব ঘোচানোর একটি সুযোগ সৃষ্টি হলেও তার বাস্তব ফলাফল এখনো অধরাই রয়ে গেছে। জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে নীতিগত সিদ্ধান্ত বা দ্বিপাক্ষিক চুক্তিই যথেষ্ট নয়। মালয়েশিয়ায় কৃষি শ্রমিক নিয়োগ এবং সউদী আরবে নারী শ্রমিক ও গৃহকর্মী নিয়োগের দ্বিপাক্ষিক চুক্তির পরও এসব চুক্তি বাস্তবে তেমন কোনো ইতিবাচক ফল দিতে ব্যর্থ হওয়ার মধ্য দিয়ে তা’ প্রমাণিত হয়েছে। অতীতের ব্যর্থতা যা-ই থাক, প্রধানমন্ত্রীর সউদী আরব সফরের মধ্য দিয়ে সেখানে ৫ লাখ শ্রমিক নিয়োগের সুযোগ দেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অর্থনীতির জন্য অনেক বড় সম্ভাবনাময় খাত। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলেই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে বলে আমরা আশাবাদী। তবে আমাদের সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি অতীতের ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার নতুনভাবে কর্মপ্রক্রিয়া শুরু করবেন? সউদী আরব, মালয়েশিয়াসহ জনশক্তি রফতানির প্রধান বাজারগুলোতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের সমস্যা চিহ্নিত করে তা দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। জনশক্তি রফতানির আগে শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং ভাষা ও পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে দক্ষ প্রশিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। সেই সঙ্গে জনশক্তি রফতানির দায়িত্বে নিয়োজিত অধিদফতর ও বেসরকারি এজেন্সিগুলোর কর্মকা-ে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।