Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এনআরসিতে রাষ্ট্রহীন হবে লাখ লাখ মানুষ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০২ এএম

ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যে শিগগিরই প্রায় ৪ মিলিয়নের মতো মানুষের ভারতীয় নাগরিকত্ব বাতিল করা হবে। বিষয়টা নিয়ে একটু চিন্তা করুন: ৩১ আগস্ট কুয়েত বা নিউ জিল্যান্ডের মতো একটা দেশের জনসংখ্যার সমপরিমাণ মানুষকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হবে। একটা অমানবিক, নিষ্ঠুর এবং নির্দয় আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এটা করা হচ্ছে। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, এই প্রক্রিয়াটা এক পর্যায়ে পুরো দেশেই কার্যকর করা হতে পারে।
এই পুরো প্রক্রিয়ার শুরুটা হয়েছে ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স (এনআরসি) তৈরির মধ্য দিয়ে, যে তালিকায় আসামের সমস্ত ভারতীয় নাগরিকদের নাম থাকবে। ১৯৫১ সালের আদমশুমারির ভিত্তিতে এই তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে চিহ্নিত করা হচ্ছে কারা ভারতের নাগরিক আর কারা প্রতিবেশী পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে এখানে এসেছে। সরকার এখন এটাকে আপডেট করার চেষ্টা করছে। জানানো হয়েছে যে, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে ভারতে অবস্থানের দলিল দেখাতে পারলে তাদের নাগরিকত্ব বহাল রাখা হবে। যারা সেটা পারবে না, তাদেরকে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হবে, তাদেরকে আটক করা হবে এবং ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যর্থ হলে তাদের ফেরত পাঠানো হবে।
তালিকায় অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়াটি কঠিন, ধোঁয়াটে এবং ত্রæটিপূর্ণ। নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য যে ধরনের দলিল প্রয়োজন, যেখানে নাম লিখতে দাপ্তরিক ভুলের কারণে বহু মানুষকে বিপদে পড়তে হয়েছে। বহু আবেদনকারী অশিক্ষিত, তাদের পর্যাপ্ত দলিলাদি নেই এবং বহু দূরে গিয়ে নিজেদের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার মতো আর্থিক সামর্থও তাদের নেই। যাদের নাম তালিকায় যুক্ত হয়েছে, তাদের ব্যাপারেও তৃতীয় পক্ষের অভিযোগের পথ খোলা রাখা হয়েছে। যারা বাদ পড়েছেন, তাদের আপিলের জন্য মাত্র ৬০ দিন সময় দেয়া হয়েছে, এবং চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর আবেদনের জন্য তারা মাত্র এক মাস সময় পাবেন। এই পুরো প্রক্রিয়ায় প্রমাণ করার বোঝা চাপানো হয়েছে ব্যক্তির ঘাড়ে, রাষ্ট্রের উপরে নয়। সে কারণে এটা চরম নিষ্ঠুর এবং সহিংসভাবে বিচ্ছিন্নতামূলক একটা প্রক্রিয়া হয়ে উঠেছে।
এই প্রক্রিয়ায় যারা আটকা পড়েছেন, তাদের ভয়াবহ গল্প এরই মধ্যে শোনা যাচ্ছে। তালিকা থেকে বাদ পড়ায় বহু আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে। বহু পুরুষ, নারী ও শিশুদের এরই মধ্যে বন্দিশিবিরে পাঠানো হয়েছে এবং এই আইনি প্যাঁচ থেকে তাদের বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা খুবই সামান্য। তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য সেখানে আটক থাকতে পারে এবং এমনকি রাষ্ট্রহীনও হয়ে যেতে পারে, কারণ তাদেরকে ফেরত পাঠানোর কোন জায়গা নেই। বাংলাদেশ এরই মধ্যে তাদের অবস্থান পরিস্কার করে দিয়ে বলেছে যে, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। যে প্রতিষ্ঠানটি সরকারকে চরম পর্যায়ে যাওয়া থেকে ঠেকাবে, সেই সুপ্রিম কোর্ট পুরো প্রক্রিয়ায় সরকারকে সমর্থন দিয়ে গেছে। নাগরিকত্ব যাচাইয়ের জন্য যে সন্দেহজনক প্রক্রিয়ায় কাজ করা হচ্ছে, সেটার অনুমোদন দিয়েছে আদালত। আটকদের ভয়াবহ বন্দিদশা সম্পর্কে সা¤প্রতিক এক শুনানিতে আদালত সরকারকে বলেছে যাতে তাদের দ্রæত স্থানান্তরিত করা না হয়। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের জন্য সময়ও বেধে দিয়েছে আদালত, যেটা এখন ৩১ আগস্ট করা হয়েছে।
সমাজের ‘বিচ্ছিন্নদের’ বিরুদ্ধে জিঘাংসা আর ঘৃণার মাত্রা যেখানে বাড়তে শুরু করেছে, সেখানে এই দুর্বলদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া এবং আমলাতন্ত্রকেও সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে অমানবিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ভারতে, যেভাবে সা¤প্রদায়িকতা এবং উগ্র-জাতীয়তাবাদ যুক্ত হয়ে এত বড় ধরনের বিচ্ছিন্নতার ঘটনা ঘটাচ্ছে, সেটা সত্যিই বিস্ময়কর। এমনকি তারা এ ক্ষেত্রে বিশ্বের মনোযোগ এড়িয়ে যাচ্ছে বলেও মনে হচ্ছে। এই নিষ্ঠুর সিদ্ধান্ত শেষ পর্যায়ে পৌঁছানোর এক মাসেরও কম সময় বাকি আছে। এখনই এটা পরিবর্তন করা দরকার। সূত্র : এসএএম।



 

Show all comments
  • Rahman ৩ আগস্ট, ২০১৯, ৪:৫৫ এএম says : 0
    They will push them to Bangladesh no doubt Bangladesh should prepare
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এনআরসি

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০
১৪ জানুয়ারি, ২০২০
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ