Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নদী খনন-ভাঙ্গন রোধে মহাপরিকল্পনা

বন্যা দুর্গতদের পাশে আছে সরকার

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০১৯, ১১:৫৯ পিএম

দেশের প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার বেড়ি বাঁধের মধ্যে ৭ হাজার ২শ’ কিলোমিটার বাঁধকে এর উচ্চতাসহ নানান কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সরকার। এর বাইরেও দেশে ৮ হাজার ৪২৯ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ৪ হাজার ৭৫০ কিলোমিটার উপক‚লীয় বাঁধ, দুই হাজার ৪৩৬ কিলোমিটার ডুবন্ত বাঁধ এবং ৩ হাজার ৬১২ কিলোমিটার সেচ খালের ডাইক বাঁধ রয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে বর্তমানে প্রায় ১৩ হাজার কিলোমিটার ঝুকিপূর্ণ বাঁধ, যা এবারের বন্যায় ডুবে গেছে। এসব বাঁধ এবারের বন্যার পানির উচ্চতার চেয়েও অন্তত দুই ফুট উঁচু করা হবে। এসব বাঁধের মধ্যে মোট ৬০০টি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা রয়েছে। যার মধ্যে ৬৬৬টি এলাকা অত্যন্ত ঝুঁকিপুর্ণ এলাকা। এসব এলাকা রক্ষার পাশাপাশি সারাদেশের বন্যাপ্রবণ এলাকার মানুষের নিরাপত্তা ও ঝুঁকি হ্রাসে এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম।

গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদ ভবনে নিজ কার্যালয়ে এ প্রতিবেদককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। উপমন্ত্রী বলেন, সরকার এই মহুর্তে বন্যা মোকাবেলা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। বন্যা দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সব রকম প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। সরকারি ভাবে এবং দলীয় ভাবে ৬টি টিম ত্রাণ বিতরণে কাজ করছে। বন্যার শেষে দেশের নদী গুলোকে পানি সংরক্ষণাগারে গড়ে তুলতে ডেল্টা প্লান্ট বাস্তবায়ন করা হবে।

তিনি বলেন, দেশের নদ-নদীগুলোর বর্তমান ধারণ ক্ষমতা একেবারেই কম। যা খনন করে পানির ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো ছাড়া সরকারের আর কোন বিকল্প নেই। এজন্য সরকার একটি দীর্ঘমেয়াদী ডেল্টা-প্ল্যান তৈরি করেছে। আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য এ প্ল্যানের আওতায় নদীগুলোকে খনন করে ‘পানি সংরক্ষণাগার বা ওয়াটার রিজার্ভার’ হিসেবে গড়ে তোলা যাবে। এতে বন্যার সময় অতিরিক্ত পানি আসলেও তা তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি করতে পারবে না। একইসঙ্গে শুষ্ক মৌসুমে এ মজুদের পানি কৃষকের কাজে লাগবে। লাগবে নদীর নাব্যতা রক্ষার কাজেও।

চলমান বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে সাবেক এই ছাত্রনেতা আরো বলেন, বর্তমানে চলমান বন্যা শুরুর পর থেকে তিনি দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১৫টি জেলার ৩২টি উপজেলা পরিদর্শন করেছেন এবং আরো পাঁচটি জেলা পরিদর্শন শুরু করেছেন। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষ এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। তাদের মতামতগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে ভবিষ্যতে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হবে। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকার বন্যা মোকাবেলা ও এর কবল থেকে মানুষকে রক্ষায় বিশেষ প্রাধিকার দিচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকার নদীর ভাঙ্গন রোধ, নদী খনন এবং অবৈধ দখলদারদের থেকে নদী উদ্ধারে নতুন নতুন পরিকল্পনা নিচ্ছে সরকার। নদী দখলমুক্ত করা সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, কোন না কোনভাবে এসব দখলদার সব সময়ই ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন। তবে বর্তমান সরকার এক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এককভাবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এ কাজ করার সম্ভব নয়। তাই অবৈধ দখলে থাকা নদী উদ্ধারে ট্যাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। টাস্কফোর্সের মাধ্যমেই এ কাজটি করা হবে।

নদী ভাঙ্গন রোধে সরকারের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নদী ভাঙ্গনের গল্প শুনেই আমরা বড় হয়েছি। বিদ্যমান পদ্ধতিতে নদীগুলোর ভাঙ্গন ঠেকানো কঠিন কাজ। তাই এজন্য বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে ভাবতে হবে। নদীগুলোর স্বাভাবিক গতিপথ ঠিক রেখে ভাঙ্গন রোধের পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা ভাঙ্গন রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
নদীর পাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সম্পত্তি রক্ষা প্রসঙ্গ তিনি বলেন, শুধু নদী রক্ষা নয়, আমরা এখন নদীর পাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সম্পত্তি রক্ষাতেও কাজ করছি। কারণ এসব আমাদের দেশের সম্পদ। যেখানে কোন কিছু ক্ষতির মুখে পড়বে, আমরা জানতে পারলেই তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছি, যেনো সেসব রক্ষা করা যায়। বর্তমানে বাজেটের কোন সমস্যা নেই। যখন যেখানে যা লাগছে, সরকার তাই বরাদ্দ দিচ্ছে। ফলে এসব রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে কোন সমস্যা হচ্ছে না।

দেশে বিদ্যমান বেড়ি বাঁধ এবং সেগুলোর অবস্থা সম্পর্কে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, ষাটের দশকে নির্মিত এসব বাঁধ এখন নামেই টিকে আছে। অনেক এলাকায় বাঁধের কোনো অস্তিত্বও নেই। আবার অনেক স্থানে অফিসসহ এলাকার বেড়িবাঁধ দখল হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সারাদেশে ১৯ হাজার ২২৮ দশমিক ৪৫৪ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৭ হাজার ২শ’ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ।৭০টি জোনের মধ্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ৮ হাজার ৪২৯ কিলোমিটার, উপক‚লীয় বাঁধ ৪ হাজার ৭৫০ কিলোমিটার বাঁধ, ডুবন্ত বাঁধ দুই হাজার ৪৩৬ কিলোমিটার এবং সেচ খালের ডাইক ৩ হাজার ৬১২ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে সারাদেশে ১৩ হাজার কিলোমিটার বাঁধ অতিদ্রুত সংস্কার করা হবে এবং বর্তমান যে অবস্থায় রয়েছে তার চেয়ে দুই ফুট উচ্চতা বৃদ্ধি করা হবে।

পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রী বলেন, চলতি বন্যায় সারাদেশে ৩১ জেলার দেশের ২৫ কিলোমিটার বাঁধ ভেঙ্গে গেছে ২৮০ কিলোমিটার বাঁধ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো ৬৬৬টি প্রকট ভাঙ্গন রয়েছে। ভাঙ্গনের ঝুকিতে রয়েছে ৩২৫টি পয়েন্ট। সে গুলোতে বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। তার পর অনেক অনেক এলাকায় পানির স্রোতে ভেঙ্গে গেছে। এবার বন্যা দেখা দেয়ার আগ থেকে আমি এবং আমার মন্ত্রণালয়ের সকল কর্মকর্তারা মাঠে রয়েছে। মন্ত্রণালয় এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যার তথ্য কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ভাঙ্গন করলিত জেলা গুলোরমধ্যে সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, রংপুর, শেরপুর, জামালপুর, টাংগাইল, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর।

এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, আপনারা জানেন ইতোমধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় নদী উদ্ধারে অনেক সফল হেেছ। ঠিক সেই ভাবে আমরা নতুন ট্যাস্কর্ফোস গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ট্যাস্কফোর্স গঠন হলে আমরা নদী প্রবাহ এবং নদীর গতিপথ ঠিক করতে পারবো। তবে ভাঙ্গন রোধ করা কঠিন হবে। সে জন্য নতুন প্রকল্প চালু করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ