পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভয়াবহ বন্যায় দেশের ৩১ জেলার ১ লাখ ৭৫ হাজার হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। ৮০ হাজার ৬৬৫ হেক্টরের বেশি ফসলি জমি পানিতে ডুবে গেছে। চলতি মৌসুমে এক লাখ মেট্রিক টন আউশ ধান কম উৎপাদন হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অনেকের মতে, ১৯৮৮ সালের চেয়েও এবার ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় কুড়িগ্রাম থেকে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত দ্বিতীয় দফা বন্যা শুরু হওয়ায় রাজধানীর আশপাশের জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল আবারও প্লাবিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন নদী বিশেষজ্ঞরা।
উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। আগ্রাসী ভাসিয়ে দিচ্ছে একের পর এক গ্রাম। উত্তরেও ব্রহ্মপুত্র আর তিস্তা নদীর পানি উপচে তলিয়ে আছে চর-দ্বীপচর ও ফসলী জমি। আমন বীজতলা, পাট, সবজি ক্ষেত সবই ভেসে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে লালশাক, পুইশাক, চিচিঙ্গা, পোটল, কাঁচা মরিচ, বেগুন, ঢেঁড়স, ধনিয়া পাতাসহ আরও বিভিন্ন জাতের সবজি। বন্যায় পুকুরের মাছ হারিয়ে চাষিদের মাথায় হাত। প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছাচ্ছে না ত্রাণ। পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ মানবেতর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। অনেক জেলায় শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ। স্মরণকালের এই ভয়াবহ বন্যায় এবার ক্ষতির মুখে পড়েছে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। এ পর্যন্ত সরকারি হিসাবে ২৫ জেলা বন্যাক্রান্ত হয়েছে। তবে এখনো কোনো জেলার ক্ষয়ক্ষতির হিসাব গতকাল পর্যন্ত সরকারি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কোঅর্ডিনেশন সেন্টার (এনডিআরসিসি) স‚ত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। বেসরকারি হিসাবে সারা দেশের ৩০ জেলা বন্যা কবলিত হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, চলতি বন্যায় ৩১ জেলার ১ লাখ ৭৫ হাজার হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ হাজার ৬৬৫ হেক্টরের বেশি ফসলি জমি পানিতে ডুবে গেছে। এক লাখ মে.টন আউশ ধান উৎপাদন কম হওয়ার আশস্কা করছি। তবে কৃষকদের জন্য ৪০০ মে.টন বীজের চারা রোপন করা হবে। তা কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
নদী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেন, বন্যার পানি নামতে বেশ সময় লাগতে পারে। কারণ, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় একদফা বন্যার পর এক সপ্তাহের বিরতি দিয়ে আবারও পানি বাড়ছে। আগামী তিন-চার দিন পানি বাড়তে পারে। আর এই পানি পুরোপুরি নামতে আগস্ট মাসের পুরো সময় লেগে যেতে পারে। কারণ, আগস্টেও থেমে থেমে বৃষ্টি হতে পারে। ফলে এসব এলাকার দীর্ঘস্থায়ী বন্যা মোকাবিলায় সরকারকে প্রস্তুতি নিতে হবে।
জানা গেছে, চলতি বন্যায় দেশের ৩১টি জেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বেশি ক্ষতি হয়েছে ধান ক্ষেতের। এছাড়া অন্যান্য ফসলও বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যায় এখন পর্যন্ত দেশের কৃষি জমির এক তৃতীয়াংশ ফসল ইতিমধ্যেই নষ্ট হয়ে গেছে। দ্রæত বন্যার পানি না কমলে বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়বে ওই এলাকার কৃষকসহ সাধারণ মানুষ। ঋণ নিয়ে জমিতে আমন ধান আবাদ করেছিলো দেশের উত্তরাঞ্চলের হাজারো কৃষক। কিন্তু সর্বনাশা বন্যা নষ্ট করে দিয়েছে সেই আমনের ক্ষেত। তাই একদিকে ঋণের টাকা পরিশোধের চিন্তা আর অন্যদিকে জীবন চালানোর হিসাব মেলাতেই কাটছে কৃষকদের দিন-রাত।
এনডিআরসিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের বন্যাকবলিত জেলাগুলোর মধ্যে ২৫ জেলার ৫০টি উপজেলায় প্রায় ৫০ লাখ মানুষ পানিবন্দি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর মধ্যে আছে জামালপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, শেরপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিরাজগঞ্জ ও লালমনিরহাট। বন্যার পানিতে এসব জেলার ৭৯ হাজার ৬৬৫ হেক্টরের বেশি ফসলি জমি পানিতে ডুবে গেছে। সবচেয়ে বেশি ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে কুড়িগ্রাম (১৫,১৫৯ হেক্টর) ও জামালপুর (১৪,৬৪৫) জেলায়। এছাড়া গাইবান্ধায় ১০ হাজার ৮৩৩ হেক্টর, বগুড়ায় ৮ হাজার ৯৭৮ হেক্টর, সিরাজগঞ্জে ৭ হাজার ৫৪১ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
ফসলের ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ে জানতে চাইলে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চুকাইবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক হালিম বলেন, তার আবাদযোগ্য সব জমিতেই পানি উঠেছে। নষ্ট হয়েছে পাট, আমন ধানের বীজতলাসহ বিভিন্ন সবজি। এ ক্ষতি প‚রণ হওয়ার নয় বলেও জানান তিনি। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের এমদাদুল হক, পুকুর ডুবে মাছগুলো ভাসিয়ে গেছে। এছাড়, গরু, হাঁস, মুরগি। প্রায় ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে গড়ে তোলা খামারটি বন্যায় সম্প‚র্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৯৮৮ সালের চেয়েও এবার ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। এতে তিনি সর্বস্বান্ত হয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন এই মৎস্য ব্যবসায়ী।
জানা গেছে, নীলফামারীতে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় ১শ’ ১৮ হেক্টর জমির ফসল। এরমধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আউশ ধান। কৃষকরা বলছেন, বন্যায় তাদের সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হিসেব করে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেয়ার কথা বললেন কৃষি কর্মকর্তা। লালমনিরহাটের দু’দফা বন্যায় ডুবে গেছে আমন বীজতলা, ভূট্টা, পাটক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসলী জমি। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী এ পযন্ত ৩শ’ ২৫ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গাইবান্ধায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৬শ’ ৪৭ হেক্টর জমির ফসল। এর মধ্যে ৪ উপজেলার ২শ’ ৩০ হেক্টরের আউশ ধানের ক্ষেত, ৬৭ হেক্টরের পাট প্রায় ২শ’ হেক্টরের বীজ তলা এবং ১৫০ হেক্টর বিভিন্ন প্রজাতির সবজি ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। আদৌ এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা। বন্যা পরবর্তী সময়ে আমনের চাষ নিশ্চিত করতে কৃষকদের ধানের চারা প্রদানসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
কুড়িগ্রাম কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় ৯ উপজেলার প্রায় ১৪ শ’ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আউশ ধানের ক্ষেত ও আমন বীজতলা। ফসলের এই ক্ষতিতে দিশেহারা হয়েছে পড়েছে চাষিরা। অন্যদিকে, বগুড়ায় তিন উপজেলায় ৮ হাজার ৬শ’ ৩ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যা কবলিত এলাকার কৃষকরা মাঠের ফসল ও বীজতলা হারিয়ে এখন দিশেহারা। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তারা।
ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে চাষে অনাগ্রহ কৃষকদের
পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাব এবং ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কারণে এবার আউশ ধানের আবাদে কৃষকের তেমন আগ্রহ নেই। একদিকে বন্যার ক্ষতি তার উপর কষ্ট করে আউশের আবাদ চাষ করার পেছনে কোনো যুক্তি খুঁজে পাচ্ছে না অনেকেই। এ কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় এবার আউশের আবাদ কমে গেছে। একই সাথে ধান চাষে এবারের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কৃষকরা জানান, গেল মৌসুমে ধানের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণে সরকারি পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হয় নি। এতে বেশিরভাগ কৃষককে লোকসানে ধান বিক্রি করতে হয়েছে। যারা শুরুতেই ঋণ পরিশোধের জন্য ধান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন তারা ক্ষতির মুখে পড়েছেন সবচেয়ে বেশি। বন্যায় এরই মধ্যে ডুবে গেছে ক্ষেতখামার। এখন আউশের আবাদের সময়। সামনে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার আশঙ্কায় অনেকের তাই আর ঝুঁকি নিতে রাজি নন। বিশেষজ্ঞরা জানান, ধানের দাম নির্ধারণ করা সরকারের উচ্চ মহলের কাজ। কৃষকরা তাদের ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় তারা অন্যান্য লাভজনক আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। এতে করে আগামী মৌসুমেও ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।