গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
দেশে হঠাৎ করে গণপিটুনির ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। বিভিন্ন স্থানে ‘ছেলেধরা’ গুজব ছড়িয়ে এসব গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে। গত চার দিনেই বিভিন্ন স্থানে সাতজনকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আশঙ্কাজনক এই পরিস্থিতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নেটিজেনরা। গণপিটুনির এসব ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়ে এর বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছেন তারা। আবার বিরূপ প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন অনেকে।
গত শনিবার রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে হত্যার শিকার হোন তসলিমা বেগম রেনু (৪০) নামের এক নারী। সন্তানকে স্কুলে ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে নির্মম গণপিটুনির শিকার হন দুই সন্তানের এই মা। এই ঘটনার পর থেকেই সারাদেশে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। ফেসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে স্যাটাস দিচ্ছেন সচেতন নাগরিকরা।
ফেসবুকে সোলাইমান মজুমদার লিখেছেন, ‘‘প্রকৃত সত্য না জেনে যারা গুজবে কান দিয়ে এই হত্যায় অংশ নিয়েছে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হোক । আর যারা যারা গণপিটুনিতে আহত বা নিহত হয়েছে,তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো সকলের নৈতিক কর্তব্য বলে আমি মনে করি ।এবং তাদের জন্য ক্ষতিপুরণের ব্যবস্থা করতে হবে ।তাদের ছেলে মেয়েদের জন্য আজীবন আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থাও করতে হবে। যদি মৃত ব্যক্তিটি নির্দোশ হয়।’’
মো. শাহিন গাজীর মন্তব্য, ‘‘বিচার ব্যবস্থা এবং পুলিশের উপর অনাস্থার স্বীকার হচ্ছে নিরাপরাধ মানুষ গুলো।’’
গণপিটুনির ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে আশিক আলফাজ লিখেছেন, ‘‘তড়িৎ বিচার করার অধিকার কে দিয়েছে? আর বিচারব্যবস্থা আর সরকারও এসবের জন্য দায়ী। আইন, জেল শুধু বিরোধীদল আর মুসলমান সাধারন মানুষের জন্য। বাকি সবাই আইনের উর্ধে চলে গেছে। জনগন তো আইন নিজের হাতে তুলে নিবেই বিচার না পাওয়ায়।’’
‘‘গণপিটুনির সাথে জড়িতদেরকে অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করা দরকার। তা না হলে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হবে। নিরিহ মানুষ গণপিটুনির শিকার হয়ে মৃত্যু বরন করবে’’ লিখেছেন কামাল হোসেন।
রিয়াদ আহসান রানা লিখেছেন, ‘‘সন্দেহ হলে তাকে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সোপর্দ করতে পারে।কয়েকজন মিলে এই উদ্যেগ গ্রহন করতে পারে।কিন্তু অযাচিতভাবে শুধু সন্দেহের বশবর্তী হয়ে কাউকে হত্যা করতে উদ্যত হওয়া কখনো স্বাভাবিক মানুষের পরিচয় হতে পারে না।যার যার এলাকায় গণসচেতনতা তৈরি করা এখন অবশ্য করনীয় হয়ে পড়েছে।কারন এইসব গণপিটুনির শিকার আপনার আমার আত্মীয়স্বজন ও হতে পারে।’’
গণপিটুনিতে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়ে নুরুল আলম লিখেছেন, ‘‘যারা সামজিক মাধ্যমে ছেলে ধরার গুজব ছড়াচ্ছে তাদেরকে গণপিটুনির মানুষ হত্যার প্রধান আসামী করে গ্রেপ্তার করা হোক। এই পর্যন্ত যত জন গণপিটুনিতে মারা গিয়েছে তাদের মামলাগুলো এইসব গুজব ছড়ানো মানুষের ওপর হত্যার মামলা করা হোক।’’
‘‘প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রের থেকে দেখে শিখছে,সেখানে ধর্মীয় কারণে মারছে এখানে ছেলেধরা গুজবে মারছে,মারার ধরন একই গণপিটুনী,যদিও এই গণরা মানুষরুপি জানোয়ার’’ মন্তব্য শরিফ হোসাইনির।
ফেসবুক ব্যবহারকারী আল ইমরান ফরাজি লিখেছেন, ‘‘এটা ক্রাইম। এটাকে গণপিটুনি না বলে সন্ত্রাসী বলা শ্রেয়। যারা গণপিটুনি দেয় তারা নিশ্চিত ভাবেই সন্ত্রাসী। এ সকল ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া উচিত।’’
মানুষজনকে সচেতন করে নাজিম উদ্দিন লিখেছেন, ‘‘গুজবে কান দিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। কোথাও কোন গণপিটুনির ঘটনা দেখলে বা শুনলে সরাসরি ৯৯৯ এ কল করুন।’’
মাহমুদুল হেলাল শিরাজি হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন, ‘‘আবু হুরায়রা (রঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সঃ বলেছেন - "যদি আসমানের বাসিন্দারা বা জামিনের বাসিন্দারা সকলে একত্রিত হয়েও একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে, তাহলে তারা সকলেই জাহান্নামে যাবে। " (সুনানে তিরমিজি - ১৩৯৮ নং হাদিস)।’’
‘‘বাংলাদেশ সরকার ও পুলিশের এ বিষয়টা কঠিন হতে দমন করা প্রয়োজন । কারণ বিষয়টা বৃহত্তর রুপ নেওয়ার আগে কঠিনভাবে দমন করা প্রয়োজন । ছোট বিষয় গুলোই আসতে আসতে বৃহত্তর রুপ নেয়’’ লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল বাকি।
হারিসুল আলম লিখেছেন, ‘‘দু চারজন লোক একটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সারা দেশে গুজব ছড়িয়ে দিয়ে নিরীহ মানুষের করুন মৃত্যু ঘটাতে সফল। আর সরকার সমস্ত মিডিয়া, প্রশাসন হাতে থাকার পরও সেটা প্রতিরোধ ব্যর্থ। আজব দেশ।’’
ফারাবী লিখেছেন, ‘‘দেশটাকে এমন অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে,আগামীতে রাস্তা-ঘাটে কারো বাচ্চা দেখে আদর করে "কেমন আছো বাবু?" বলাও এখন বিপদের কারন হয়ে যাচ্ছে।’’
হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে ফাহেমুর রহমান পলাশ লিখেছেন, ‘‘এমন এক সময় আসবে, যখন হত্যাকারী জানবে না কেন সে হত্যা করছে, আর নিহত ব্যাক্তিও জানবে না কেন সে নিহত হল।" - সহীহ্ মুসলিম ৬৯৪৯’’
‘‘ওরা নিরিহ মানুষকে পেটাতে পারে কিন্তু যারা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মানুষকে কুপিয়ে কুপিয়ে মারে তাদের কিছু করতে পারেনা,,, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখে। ভীতু কাপুরুষ হয়ে নিজেকে আড়াল করে। নিরিহ মানুষের কাছে বীরপুরুষ সাজে আসলে ওরা কাপুরুষ’’ আক্ষেপের সাথে লিখেছেন জামিল রহমান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।