পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বন্যার ওপর বন্যা। দেশে আরও বড় ধরনের বন্যার ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদীর উজানের অববাহিকায় আবারও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। অতিবৃষ্টি চলতে পারে এই সপ্তাহজুড়ে। উজানভাগে উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, অরুণাচল, মেঘালয়, মিজোরাম, ত্রিপুরা, মনিপুর, সিকিম এবং হিমালয় পাদদেশের পশ্চিমবঙ্গে আবারো অতিবৃষ্টির সতর্কতা দিয়েছে গতকাল (সোমবার) ভারতের আবহাওয়া বিভাগ। ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে চীন-তিব্বত, উত্তর-পশ্চিম ভারত, সংলগ্ন বিহার এবং নেপালে। বর্ষার মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় সেসব অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের জোর বেড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া এ সপ্তাহের শেষে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিশেষ করে ভারতের সংলগ্ন নদ-নদী এলাকাগুলোতে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
উজানে প্রধান নদ-নদীর অববাহিকার এলাকা আসাম, অরুণাচল, মেঘালয়সহ উত্তর-পূর্ব ভারতে নদী উপনদীগুলো একযোগে ফুলে ফুঁসে উঠছে অতি বর্ষণে। এতে করে ফের ধেয়ে আসছে উজানের ঢল-বান। তাছাড়া এ মাসের শেষে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে পারে বর্ষার মেঘমালা জোরদারকারী একটি মৌসুমী লঘুচাপ-নিম্নচাপ। এ অবস্থায় দেশের উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বানের পানি না কমতেই বন্যা আরো ব্যাপক ও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গতকালের ভারী বর্ষণে হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, আসামের বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যায়। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে জলপাইগুড়িতে ১৭৩ মিলিমিটার, আসামের চেরাপুঞ্জিতে ১১৯ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভারতে উজানের পাহাড়ি অঞ্চলগুলো থেকে তীব্রবেগে গড়িয়ে আসছে বানের পানি ভাটিতে বাংলাদেশের দিকে। এতে করে উত্তর জনপদে তিস্তা নদী দ্বিতীয় দফায় গতকাল বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি হ্রাস পায় রোববার পর্যন্ত। তবে ভারতের পাহাড়ি ঢলে নতুন করে গতকাল উভয় নদীর পানি বেড়ে যাচ্ছিল ৬টি পয়েন্টে বিপদসীমার আরো ঊর্ধ্বে। সারি, খোয়াই, মনু নদীর পানিও ফের বাড়ছে। গত ১০ জুলাই থেকে ভারতের উজান থেকে হু হু করে আসা ঢলের কারণে বাংলাদেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল বন্যার কবলে পড়ে।
পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ সূত্র মতে, উত্তর-পূর্ব ভারতে নতুন করে ভারী বর্ষণ ও নদ-নদীর উজানের দিকে পানিবৃদ্ধির বিষয়টি উদ্বেগের। কারণ চীন-তিব্বত থেকে সাংপো নামে বয়ে চলে আসা ব্রহ্মপুত্র নদ উৎসভাগে প্রায় ৮০ শতাংশ হচ্ছে উত্তর-পূর্ব ভারতে। যা অরুণাচল প্রদেশে সিয়ং, আসামে দিহাঙ-দিবং-লোহিত মিলিত হয়ে বিশাল নদী অববাহিকা ব্রহ্মপুত্র নামধারণ করেছে। ব্রহ্মপুত্র উত্তর জনপদে কুড়িগ্রাম দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এ নদের উজানে ভারতের বিশেষত আসাম ও অরুণাচলে অতিবৃষ্টির প্রভাবে বাংলাদেশের ব্যাপক অংশই বন্যাকবলিত হয়। উজানে বন্যা পরিস্থিতিতে নিজেদের স্বার্থেই ভারত ব্রহ্মপুত্রসহ অধিকাংশ নদ-নদীর বাঁধ, ব্যারাজ, সেচ প্রকল্পের গেট ও স্পিলওয়েগুলো খুলে দেয়। আর শুকনো মৌসুমজুড়ে আটকে রাখে পানির স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক গতিপথ, প্রবাহ।
‘এল-নিনো’র প্রভাবে চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়া
গত এপ্রিল মাস থেকে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আবহাওয়ায় ‘এল-নিনো’ অর্থাৎ স্বাভাবিক পর্যায়ের মেঘমালা সঞ্চালন ও বৃষ্টিপাত প্রতিরোধী অবস্থা বিরাজমান রয়েছে। এরফলে আবহাওয়া এলোমেলো ও খেয়ালী আচরণ করছে। প্রচন্ড তাপপ্রবাহ, শীতের তীব্রতা এবং যখন-তখন বৃষ্টিপাত, তাও তীব্র ধরনের হচ্ছে। সীমিত এলাকায় ক্ষণস্থায়ী অথচ ভারী থেকে অধিক ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়া-জলবায়ুর এটি এক চরম বা ‘তীব্র’ ভাবাপন্ন অবস্থা। এ অবস্থায় চলতি বছরের বিগত অর্ধেক সময়ে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, চীন, নেপাল, মিয়ানমার প্রচন্ড তাপপ্রবাহ ও উচ্চ তাপমাত্রা, খরা-অনাবৃষ্টি, হঠাৎ অতিবৃষ্টি, টর্নেডো, বজ্রপাত, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মুখোমুখি হয়েছে। এহেন বৈরী আবহাওয়া আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞগণ।
নদ-নদীর পরিস্থিতি
পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রধান নদ-নদীসমূহের প্রবাহের সর্বশেষ তথ্যে জানায়, গতকাল উত্তরাঞ্চলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা বরাবর প্রবাহিত হয়। তবে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, ঘাগট, ধরলা, করতোয়া, ধলেশ্বরী, আত্রাই, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীগুলোর পানি হ্রাস অব্যাহত থাকে। বানের পানির চাপে ঢাকার চারপাশের নদ-নদী বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ, টঙ্গী খাল, শীতলক্ষ্যা, কালিগঙ্গার পানি বৃদ্ধির দিকে রয়েছে। তবে বিপদসীমার নিচে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি জামালপুরে কিছুটা কমেছে, ময়মনসিংহে বেড়েছে। সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি ফের বেড়ে গিয়ে ছয়টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর বইছে। গঙ্গা-পদ্মায় পানি সকল পয়েন্টে কমতির দিকে।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের নদ-নদীসমূহের ৯৩টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৩৪টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৫৬টিতে হ্রাস পায়। অপরিবর্তিত রয়েছে ৩টি স্থানে। বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় ২০টি পয়েন্টে। গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানভেদে ৫০ থেকে ১১৯ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত সিলেটে ৬৯ মি.মি.। গতকাল দেশের অধিকাংশ জেলায় বৃষ্টিপাত হয়নি। বরং অনেক এলাকায় তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে ৩৭.২ ডিগ্রি সে.।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল এবং এর সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সুরমা-কুশিয়ারা এবং ঢাকার চারপাশের নদ-নদীসমূহ ছাড়া অন্যান্য নদ-নদীর পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীসমূহের পানির সমতল হ্রাস অব্যাহত থাকতে পারে। অন্যদিকে সুরমা কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি স্থিতিশীল হয়ে আসতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও মুন্সীগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রাম জেলার সাড়ে ৯ লাখ বানভাসী মানুষ চরম দুর্ভোগে। নেই বিশুদ্ধ পানি। অপ্রতুল ত্রাণ। বিধ্বস্ত রাস্তাঘাট, বাঁধ, ঘরবাড়ি। নেই শৌচকর্ম সম্পন্ন করার মত নিরাপদ ব্যবস্থা। দেখা দিয়েছে পানিবাহিত নানা রোগ বালাই। সব মিলিলে এ জনপদের কয়েক লাখ মানুষ দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছেন। ৮দিন ধরে বিচ্ছিন্ন রয়েছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী রেল যোগাযোগ।
জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, বন্যার ফলে ৩টি পৌরসভাসহ ৬০টি ইউনিয়নে ৮৯৪টি গ্রামের ২লাখ ৩৮হাজার ৬৭২টি পরিবার পানিবন্দি। ফসলী জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৩ হাজার হেক্টর। বন্যায় এক হাজার ২৪৫কিলোমিটার রাস্তা, ৪০ কি.মি বাঁধ ও ৪১টি ব্রীজ/কার্লভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নলক‚প ক্ষতিগস্ত হয়েছে ৯ হাজার ৭৩৪টি। প্রায় ২লক্ষাধিক গবাদিপশু পানিবন্দি। বন্যার কারনে ২৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ।
এদিকে, গতকাল সোমবার সকালে কুড়িগ্রামে বন্যা দুর্গতদের সহায়তা করতে গিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সমালোচনায় মুখর কোন রাজনৈতিক দল এখন পর্যন্ত বানভাসী মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি।
ফরিদপুর : ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চল ও উপজেলা সদর সহ প্রায় তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি। ১৪টি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এতে গবাদি পশু, বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে দুর্বিষহ মানবেতর জীবনযাপন করে চলেছে উপজেলার পানিবন্দি হাজার হাজার পরিবারগুলো। ১৪টি বিদ্যালয়ে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় এসব বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি ও রাস্তা-ঘাট।
রাজবাড়ী : টানা এক সপ্তাহ পানিবন্দি থাকার পর কমতে শুরু করেছে রাজবাড়ীর পদ্মা নদীর পানি। এখনও পানিবন্দি রয়েছে গোয়ালন্দ উপজেলার তিনটি, রাজবাড়ী সদর উপজেলার দুটি, কালুখালী উপজেলার দুটি ও পাংশা উপজেলার দুটি মোট ৯ টি ইউনিয়নে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ।
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় তিস্তা ও ঘাঘট নদীর পানি কমলেও দুর্ভোগ বেড়েছে বানভাসীদের। জনগণের জীবন-যাত্রা মারাত্বকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ঘরের ভিতরে-বাইরে পানি থাকায় ঠিকমত রান্না করতে না পেরে অনেকই না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। গো-খাদ্যের চরম সংকটে দিশেহারা বানভাসীরা। পশু-পাখিগুলো খাদ্য না পেয়ে কঙ্কাল হয়ে পরেছে। বিভিন্ন রোগব্যাধি দেখা দিয়েছে বানভাসীদের মাঝে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।