Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গণপিটুনি প্রাণ হারালো মা: নেটিজেনদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

শাহেদ নূর | প্রকাশের সময় : ২১ জুলাই, ২০১৯, ১০:১৯ পিএম

রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে তসলিমা বেগম রেনু (৪০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে কাঁচাবাজারের সড়কে এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। বাড্ডা থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, রেনু তার মেয়েকে ভর্তি করার জন্য স্কুলে যান। কিন্তু মানসিক অসুস্থতার কারণে তার আচরণ অস্বাভাবিক ছিল। এজন্য স্কুলের অনেকেই তাকে ছেলেধরা হিসেবে সন্দেহ করছিল। প্রধান শিক্ষক তার সঙ্গে কথা বলার জন্য রুমে নিয়ে যান। কিন্তু স্কুল প্রাঙ্গণে তার অস্বাভাবিকতা দেখে অনেকেই বের করে মারধর করতে চাইছিলেন। প্রধান শিক্ষক রেনুকে বাইরে বের না করলে, স্কুলের কিছু অভিভাবক ও বাইরে থেকে আসা উৎসুক জনতা রুমের গেট ভেঙে তাকে 'ছেলেধরা' বলে মারধর করে। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢামেকে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রেনুকে মৃত ঘোষণা করেন।

শুধু রেনু নন, বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই সপ্তাহে সারাদেশে বিশের অধিক গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন। গুরুতর আহতের সংখ্যাটাও বিশের অধিক। বিষয়টি নিয়ে ফেইসবুক, টুইটার, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে নেটিজেনরা।

রেনুর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মোস্তফা মল্লিক তার ফেইসবুকে লিখেন, ‘এভাবে একজন নারী ঢাকা শহরে গণপিটুনির শিকার হলো। বাংলাদেশের আইনে কি বলে গণপিটুনি মানে সব কিছু মাফ? গণপিটুনি মানে কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না? গণপিটুনি কি ফৌজদারি অপরাধ নয়? আমার জানা মতে, পৃথিবীর কোন সভ্য দেশেই গণপিটুনি শব্দটি নেই। আমি চাই সহজ-সরল রেনুকে রক্ষা করতে রাষ্ট্র যখন ব্যর্থ হয়েছে, তখন রেনুর নিষ্পাপ দুই সন্তানের দায়িত্ব নিক সরকার এবং রাষ্ট্র।’

‘একজন মায়ের করুণ আর্তনাদ আমাকে/আপনাকে, কাউকে ক্ষমা করবে না।ঢাকার উত্তর বাড্ডায় সন্তানকে স্কুলে-ভর্তি করানোর তথ্যর জন্য স্কুলে যান তাসলিমা, ছেলেধরা সন্দেহে মুহূর্তেই গণপিটুনি দিয়ে তাকে মেরে ফেলল শতশত মানুষ। বোরখা হিজাব পরিধান করে ছেলে-মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া এখন প্রতিটি মায়ের আতঙ্ক।’ - লিখেছেন এমডি ইকবাল মাতুব্বর।

এস.এম রানা লিখেছেন, ‘দোষের নির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া গণপিটুনি দিয়ে মানুষ হত্যায় শাস্তির বিধান করা উচিত। গতকাল এক মা মেয়েকে ভর্তি করানোর জন্য বিদ্যালয়ে এসে ছেলে ধরা হয়ে গণপিটুনিতে জীবন দিলো। নির্দিষ্ট ভিডিও ফুটেজ আছে। ওদের আইনের আওতায় আনা উচিত। কোন প্রমাণ ছাড়া কুলাঙ্গারগুলা একটা মহিলাকে কোন সাহসে এতো মারধর করার সুযোগ পায়। এক কুলাঙ্গারেরর দল গুজব ছড়ায় আর অন্য এক কুলাঙ্গারের দল গুজবকে ভিত্তি করে নিরীহ মানুষের প্রাণ নিচ্ছে। ওদের কঠোর বিচার হওয়া উচিত।’

‘গণপিটুনিতে মারার হিরিক। চুপচাপ বাংলাদেশ।’ - গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার নিউজটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেন সাংবাদিক ওয়াসিম ফারুক।

আবু তাহের রশিদ লিখেন, ‘এখন থেকে বাবা মা সন্তানের স্কুলে গেলে বা সন্তানকে সাথে নিয়ে ঘুরলে একটা পরিচয় পত্র আর সাথে লিখবেন আপনি ছেলেধরা নন। সেইটা গলায় ঝুলিয়ে বের হন। আমাদের দেশের এই মূর্খগুলা যেকোন সময় আপনাদের জীবনের ক্ষতি করে ফেলতে পারে।’

‘ছেলে ধরা সন্দেহে নিজের বাচ্চার ভর্তির জন্য স্কুলে খোঁজ নিতে গিয়ে গণপিটুনি দিয়ে মাকে হত্যা। আমরা হুজুগে বাঙালি আসলে দিন দিন ...... মার্কা জাতিতে পরিণত হচ্ছি।’ - টুইটারে সজিব কুমার নাথের মন্তব্য।

ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিওর মাধ্যমে এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে গণপিটুনিতে অংশগ্রহণকারীদের কঠোর নিন্দা জানানোর পাশাপাশি এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেজন্য সচেতন মানুষদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। কিছু ভিডিওতে গণপিটুনির মত নির্মম ঘটনার জন্য ‘দেশের আইনের শাসনের অভাব’কে দায়ি করা হয়েছে।



 

Show all comments
  • Mohammad Mukith ২২ জুলাই, ২০১৯, ৬:১৯ এএম says : 0
    মুসলমানদের বাংলাদেশে হচ্ছেটা কি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা। আমরা কি সেই আদিম যুগে ফিরে যাচ্ছি? যে যুগের সাধারণ জনগণ তাদের নেতাকে বলেছিলো- ‘ও মুসা নবী! আপনি, আপনার ভাই হারুন ও আপনাদের আল্লাহ গিয়ে যুদ্ধ করুন ফেরাউনের সাথে, আমরা এখানে বসে রইলাম।’ অথচ হযরত মুসা আলাইহিস সালাম ফেরআউনের সাথে যুদ্ধ করছিলেন, ঐসকল জনগণকে উদ্ধার করার জন্যে, যারা ছিলো ফেরাউনের কাছে লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, নিষ্পেষিত গোলামস্বরূপ। দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর পর পাকিস্তানিদের গোলামী থেকে মুক্তি পেয়ে যে জাতি অন্তত প্রায় অর্ধশতাব্দিকাল পর্যন্ত স্বাধীনতা পেয়েও মানুষ হতে পারেনি, তাকে তো সেই যুগের নিমকহারাম ইয়হূদীদের সাথেই তুলনা করতে হয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাচ্ছেন দেশ ও জাতিকে উন্নত করার জন্যে। স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বনির্ভর জাতিতে রূপান্তর করতে। কিন্তু আমরা কি-না গণপিঠুনিকে তামাশা হিসেবে উপভোগ করছি রাস্তায় দাঁড়িয়ে? আমার মতে তাসলিমা আক্তার রেনুকে হত্যা করার সময় উপস্থিত ঐসকল দর্শকদের গ্রেফতার করা উচিত। যারা অন্যায়-অপকর্ম দেখে প্রতিরোধ কিংবা প্রতিবাদের পরিবর্তে তামাশা উপভোগ করে। এমনকি ভিডিও ধারণকারীসহ সবাইকে গ্রেফতার করে প্রকাশ্য জনসম্মুকে শাস্তি দেয়া উচিত।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সোশাল মিডিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ