পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজনৈতিক ময়দানে কোন পথে হাঁটছে বিএনপি? দলের সাম্প্রতিক কর্মকান্ডে এ প্রশ্ন যেমন দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের তেমনি তাদের শুভানুধ্যায়ী সমর্থকদের মনেও ঘোরপাক খাচ্ছে। জাতীয়তাবাদী ইসলামী মূল্যবোধকে ধারণ করে বিএনপির জন্ম। অথচ বিএনপির বর্তমান কর্যক্রমে জাতীয়তাবাদ এবং ইসলামী মূল্যবোধ এ দুটোই অনুপোস্থিত। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন গত কয়েক বছর ধরে বিএনপি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যহীন রাজনীতির পথেই হাঁটছে। নিজস্ব আদর্শ থেকে বিচ্যূত হয়ে রাজনৈতিকভাবে আত্মঘাতি পথে ছুটছে দলটি। আর এ কারণেই তারা কোন রাজনৈতিক ইস্যুতেই জনগণের সাড়া পাচ্ছে না। বিপুল জনসমর্থন থাকার পরও দাবি আদায়ের কোন আন্দোলন-সংগ্রামে দলটি সাফল্য পাচ্ছে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, বিএনপি বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে অনেকটাই আদর্শচ্যূত। জাতীয়তাবাদী ইসলামী মূল্যবোধের চেতনাকে ধারণ করে বিএনপির জন্ম। সারাদেশের নেতাকর্মী এবং বিপুল পরিমাণ জনসমর্থন বিএনপিকে ইসলামী মূল্যবোধের ধারক হিসেবে দেখতে চায়। তবে দু:খজনক হলেও সত্য যে এ দলটির বর্তমান নেতৃত্বের মধ্যে এর বহি:প্রকাশ তেমন একটা নেই বললেই চলে। শতকরা বিরানব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে জনগণ কি চায় তা ধারণ করতে না পারলে রাজনৈতিক ময়দানে সফল হওয়া সম্ভব নয়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনের লক্ষে বিএনপি তার আদর্শের বিপরীত আদর্শের কয়েকটি দলের সাথে জোটবদ্ধ হয়। বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেনকে সামনে রেখে গঠিত হয় ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’। দীর্ঘ এক বছর চেষ্টার পর গত বছর ১৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের। ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর বিএনপির রাজনৈতিক আদর্শিক জোট ২০ দলীয় জোটের কার্যক্রম অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে তখন থেকেই বিএনপির চূড়ান্ত আদর্শিক বিচ্যূতি ঘটে।
ঐক্যফ্রন্টকে সামনে রেখে নির্বাচনে অংশ নিয়ে চরমভাবে ব্যর্থ হওয়ার পর বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েন। কারাবন্দি চেয়ারপার্সনকে মুক্ত করতে না পারাটা দিনে দিনে দলের সবার কাছে বেদনার বিষয় হয়ে দাড়াচ্ছে। এ অবস্থায় চেয়ারপার্সনের মুক্তির লক্ষে আন্দোলন গড়ে তুলতে হতাশাগ্রস্ত নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে দেশের বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ কর্মসূচির ঘোষনা দেয় বিএনপি। ইতোমধ্যে দুটি বিভাগীয় শহরে দলটি সমাবেশ সম্পন্ন করেছে। এর মধ্যে গত ৮ জুলাই বরিশালে এবং ২০জুলাই বন্দর নগরী চট্টগ্রামে বিএনপির সমাবেশ হয়েছে। বরিশালের কেন্দ্রীয় হেমায়েত উদ্দিন ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে কাংখিত উপস্থিতি না হলেও চট্টগ্রামের সমাবেশ ছিল জনসমুদ্র। তবে দুটি সমাবেশেই নেতাদের বক্তব্য উপস্থিত নেতাকর্মী ও জনগণকে হতাশ করেছে। সমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার গদবাধা গতানুগতিক বক্তব্যের বাইরে জনগণকে নতুন কিছু শোনাতে পারেননি। জনগণ কি শুনতে চায়, তাদের কাছ থেকে দেশের মানুষ কি প্রত্যাশা করে তা থেকে বিএনপির নেতারা সচেতনভাবেই নিজেদের দূরে রেখেছেন এমনটা অনেকের ধারণা। তা না হলে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত যে কয়টি ইস্যু রয়েছে সেসব ইস্যুতে বিএনপির মুখপাত্র বা অন্যকোন নেতা কেন একটি কথাও বলেন নি।
বিএনপি যে দিন বরিশালে সমাবেশ করে সেদিন চট্টগ্রামের কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের ইসকনের প্রসাদ খাওয়ানোর ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। আলেম ওলামাসহ অনেকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাত জানান। অথচ বিএনপি ওই সমাবেশে এ বিষয়ে একটি কথাও বলে নি। এমনকি এ বিষয়ে আজ পর্যন্ত কোন নিন্দা পর্যন্ত জানায়নি। মুসলমানদের ঈমান-আকিদার পক্ষে কথা বলার জন্যই বিএনপিকে এদেশের মানুষ এত ভালোবাসে। অথচ এই সব বিষয়ে বিএনপি এখন কথা বলাই ভুলে গেছে। এই অদর্শচ্যূতি বিএনপিকে জনগণের ভালোবাসা থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরিয়ে দেবে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। বর্তমানে ভয়াবহ বন্যার কবলে দেশ। বরিশালের সমাবেশে বন্য নিয়ে গতানুগতিক কথা বললেও এর জন্য দায়ী করা বা কেন এদেশ হঠাৎ বন্যায় এবং শুষ্ক মৌসুমে নদীগুলো শুকিয়ে যায় সে বিষয়ে কোন নেতাই কোন কথা বলেননি। অথচ মরণ বাঁধ ফারাক্কার বিরুদ্ধে প্রথম সোচ্চার হন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তার এসব দেশপ্রেমমূলক কর্মাকা-ই দেশের মানুষের কাছে তাকে তুমুল জনপ্রিয় করে তুলে। অথচ জিয়ার দেখানো সে সব পথ থেকে সরে গিয়ে বিএনপি আজ অন্য পথে হাঁটছে। ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবেকর কথা একবারও বলছেনা, ভারত অখুশি হয় এমন কথা তারা বলতে নারাজ। ভারত তোষণের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের এই যে নীতি তা বিএনপির জন্য শুধু ক্ষতিকারকই নয় এটা তাদের জন্য আত্মঘাতি বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
বরিশালের পর ২০ জুলাই চট্টগ্রামে বিশাল জনসভা করে বিএনপি। ওই সভাতেও দলের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্যান্য বক্তরা গতানুগতিক বক্তব্য প্রদান করেছেন। জনগণকে সাথে নিয়ে গণআন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলেছেন। অথচ জনগণকে সাথে পাওয়ার জন্য যে কথা বলা প্রয়োজন তার একটিও তারা বলেননি। চট্টগ্রামের সমাবেশের দিন সারাদেশে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের এক হিন্দু মহিলা প্রিয়া সাহার নালিশ নিয়ে তোলপাড় চলছে। ইসলামী মৌলবাদীরা এদেশের হিন্দুদের উপর নির্যাতন করছে, তাদেরকে দেশ ছাড়া করছে এ ধরনের অভিযোগ এনে প্রিয়া সহা আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাছে সাহায্য চেয়েছেন। প্রিয়া সাহার এই নালিশ নিয়ে সারা দেশের সাধারণ মানুষ যখন ক্ষোভে প্রতিবাদে ফেটে পড়ছে, ফেইসবুকসহ সোশাল মিডিয়াতে ক্ষোভ আর নিন্দার ঝড় বইছে তখনও এ বিষয়ে বিএনপির নেতাদের মুখে কোন কথা নেই। অথচ এই প্রিয়া সাহা আজকে যে তথ্য আমেরিকার প্রেসিডেন্টর কাছে উত্থাপন করেছে এটি বিএনপি সরকারকে ঘায়েল করার জন্যই তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগ ২০০১ সালের পর আবুল বারাকাতকে দিয়ে একটি বই লিখিয়েছে। বইটি ২০০৪ সালে প্রকাশের পর সারা বিশ্বে তা বিতরণ করে বিএনপিকে জঙ্গি মৌলবাদী দল হিসেবে পরিচিত করার চেষ্টা করেছে। সেই বইয়ের তথ্যই প্রিয়া সহা তুলে ধরেছে। এ ইস্যুতেও বিএনপি আজ নিরব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নীতিনির্ধারক বলেন, আমরা এখন আমাদের দলের প্রকৃত আদর্শ থেকে অনেকটা দূরে সরে গেছি। এ জন্য দেশের মানুষ আমাদের ডাকে আর সারা দিচ্ছে না। কেননা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক চরিত্র আর আমাদের রাজনৈতিক চরিত্রের মধ্যে দেশের মানুষ কোন পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছেনা। আওয়ামী লীগ ভারতের পরীক্ষিত বন্ধু। তারা সব সময় ভারত তোষণ রাজনীতি করে আসছে। আর বিএনপির জন্মই হয়েছে ভারতের বিরুদ্ধে এদেশের স্বার্থের পক্ষে কথা বলার জন্য। অথচ সেই দল যখন ভারত তোষণ নীতি অনুসরণ করে, দেশের আপামর মুসলিম জনগণের পক্ষে কথা না বলে তখন কর্মী-সমর্থকরা শুধু হতাশই হয় না, তাদের মধ্যে নেতৃত্বে প্রতি এক ধরনের ঘৃণা এবং ক্ষোভেরও জন্ম নেয়। তার সেই ক্ষোভ ও ঘৃণা বুকে নিয়ে তারা ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এতে দলও দুর্বল হতে থাকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।