Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডেঙ্গুর মহামারী রুখতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৯, ১২:১৭ এএম

ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ ক্রমে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। কেউ কেউ ডেঙ্গুর মহামারীর আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। রোগের বিস্তার, প্রকোপ এবং জটিল ও প্রাণঘাতি অবস্থার পাশাপাশি এ বছরের ডেঙ্গ জ্বরকে অন্য বছরে চেয়ে ব্যতীক্রমী বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ডেঙ্গু আক্রান্তের মন্তিস্কে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করছে যা মারাত্মক বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে ২৪ ঘণ্টায় ২১৭ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তির তথ্য জানা গেছে। তবে ঢাকা বা সরকারি হাসপাতালে ভর্তির খন্ডিত তথ্য দিয়ে ডেঙ্গু মহামারীর প্রকৃত তথ্য নিরূপণ করা সম্ভব নয়। কারণ সব রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয় না, কেউ কেউ ডাক্তারের চেম্বার ও ডায়গনোস্টিক সেন্টারে গিয়ে প্রেসক্রিপশন নিয়ে বাসায় ওষুধ সেবন করেই জ্বর নিরাময়ের চেষ্টা করছেন। আবার অনেক দরিদ্র রোগী ফার্মাসি থেকে জ্বরের টেবলেট কিনে খেয়ে অথবা টোটকা চিকিৎসা নিয়েও ডেঙ্গু নিরাময়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন। ঢাকার অভিজাত এলাকা, বস্তি এলাকা থেকে শুরু করে সমগ্র দেশেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। মন্ত্রী-আমলা থেকে শুরু করে ডাক্তারসহ সব শ্রেণী পেশার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। হাজার হাজার ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে কর্মরত এক ডাক্তার সম্প্রতি ডেঙ্গু জ্বরের জটিলতায় মৃত্যুবরণ করেছেন।

এবারের জাতীয় বাজেট ঘোষণার সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিলেন। এজন্য চিকিৎসার প্রয়োজনে তাঁকে বিদেশেও যেতে হয়েছে। ডেঙ্গু জ্বরে তার কী অবস্থা হয়েছিল তিনি তা গণমাধ্যমে প্রকাশও করেছেন। সেই সাথে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রশমনে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর ব্যর্থতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। ডেঙ্গুর উৎপত্তিস্থল থাইল্যান্ডে হলেও পরবর্তিতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট সফল হলেও বাংলাদেশ কেন ব্যর্থ তার কারণ খুঁজে বের করে প্রতিকার নিশ্চিত করার জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে। ঢাকার মশা নিধন বা নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশনের ব্যর্থতায় নাগরিক সমাজের পাশাপাশি উচ্চ আদালতও বিভিন্ন সময়ে উদ্বেগ প্রকাশসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করেছেন। এবার ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারণ করার পেছনেও ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধনে ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন আদালত। সেই সাথে মশা নিধনের ওষুধ ও সরঞ্জাম ক্রয়ে দুর্নীতি ও গাফিলতির অভিযোগও উঠেছে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। গত বুধবার বিচারপতি এফআর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের ডিভিশন বেঞ্চ থেকে জারি করা এক রুলে এডিস মশা নিধনে ওষুধ কেন কাজ করছে না, আমদানিকৃত ওষুধে ভেজাল আছে কিনা, থাকলে এর সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্তের পাশাপাশি অতি দ্রæত মশক নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

মশা নিধন, যানজটনিরসনসহ জনদুর্ভোগ লাঘবে নাগরিক সমাজের উদ্বেগ, আদালতের নির্দেশনাসহ কোনো কিছুই তেমন কাজে আসছে না। মশা নিধনে সিটি কর্পোরেশন কোটি কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ রেখেও এ ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার জন্য দায়ী দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা। যেখানে ডেঙ্গুর উৎপত্তিস্থল থাইল্যান্ড মশা নিধনের মাধ্যমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হচ্ছে, একইভাবে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ আরো অনেক দেশের সিটি কর্পোরেশন মশকনিধনসহ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হচ্ছে সেখানে আমাদের ব্যর্থতার কারণগুলো এড়িয়ে যাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সফল দেশ ও নগর কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ, কর্মপন্থা ও অভিজ্ঞতা আমাদের নগর কর্তৃপক্ষের অনুসরণে অসুবিধা কোথায়? বছরের পর বছর ধরে চলা এ বাস্তবতার এখন আমূল পরিবর্তন ঘটাতে হবে। দেশের কোটি কোটি মানুষ এখন ডেঙ্গু মহামারীর আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে। হাজার হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে। সম্প্রতি একজন ডেঙ্গুরোগীর পক্ষ থেকে ঢাকা দক্ষি সিটি কর্পোরেশন সিটি মেয়রকে উকিল নোটিশ দেয়ার পর মেয়র সেই রোগীকে দেখতে তার বাসায় চলে গিয়েছিলেন। এটা অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতার জন্য উপযুক্ত মনিটরিং ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার স্থায়ী ব্যবস্থা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মশক নিধনে সিটি কর্পোরেশনের পদক্ষেপগুলো তেমন কাজে আসছে না। পাশপাশি এটাও সত্য যে, মশা নিয়ন্ত্রণে নগরবাসিকেও সচেতন থাকতে হবে এবং প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালন করতে হবে। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রর্বাট মিলার ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের সাথে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সিটি কর্পোরেশন ও সরকার এ আহŸানে সাড়া দিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে এটাই সকলের প্রত্যাশা। সেই সাথে এই মুহূর্তে ঢাকাসহ সারাদেশে সকল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের উপযুক্ত চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। কোটি কোটি মানুষকে প্রাণঘাতি রোগের মহামারীর হুমকির মধ্যে রেখে কোনো জাতি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে না।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডেঙ্গু

২৭ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন