পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বন্যা ভয়াল বিস্তারের দিকে। উত্তরাঞ্চল তলিয়ে সাথে সাথে মধ্যাঞ্চলেও গড়াচ্ছে বন্যা। অতিবৃষ্টি ও বাঁধগুলো খুলে দেয়ার কারণে অব্যাহত আছে ভারতের উজানের ঢল। গতকাল মঙ্গলবার সর্বশেষ নদ-নদীসমূহ প্রবাহের তথ্য অনুসারে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদে বিপদসীমার ওপরে পানিবৃদ্ধির গতি ভয়াবহ। ব্রহ্মপুত্র দুটি পয়েন্টে এবং যমুনা ৫টিতে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে। এরমধ্যে যমুনা নদ পানিবৃদ্ধির রেকর্ড অতিক্রম করেছে। বাহাদুরাবাদে (জামালপুর) যমুনা বিপদসীমার ১ মিটার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেখানে পানির বিপদসীমা ১৯ দশমিক ৫০ মিটার। অতীতে সর্বোচ্চ প্রবাহের রেকর্ড ছিল ২০.৮৪ মিটার। এবার উঠে গেছে ২০.৯৫ মিটারে। অর্থাৎ ১১ সেমি ঊর্ধ্বে। ঢলের তোড়ে একে একে তলিয়ে যাচ্ছে শত শত বসতঘর, ফসলি জমি, ক্ষেত-খামার, মৎস্য-পোলল্ট্রি ও গবাদিপশুর খামার, রাস্তাঘাট, দোকানপাট, শিক্ষা ও সরকারি প্রতিষ্ঠান। আশ্রয় ও খাবারের জন্য সর্বত্র বন্যার্তরা দিশেহারা। ছুটছে ত্রাণ সাহায্যের আশায়।
গত ১০ জুলাই থেকে উজানের ঢলে বাংলাদেশ বন্যার কবলে পড়তে শুরু করে। উজানভাগে প্রধানত ভারতের ঢল-বানের তোড়ে একযোগে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রধান দুই অববাহিকা ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মায়। ভাটিতে গোয়ালন্দে পদ্মা নদী বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে। গতরাত নাগাদ বিপদসীমায় পৌঁছাতে পারে। পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, দেশের নদ-নদীসমূহের পানির সমতল পর্যবেক্ষণে ৯৩টি স্টেশনের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৩টি পয়েন্টে। বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ১৪টি নদী ২৩টি স্থানে। আর পানি হ্রাস পাচ্ছে ২৯ পয়েন্টে।
আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীসমূহে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় আত্রাই নদী বাঘাবাড়ি এবং পদ্মা নদী গোয়ালন্দে পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবন্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। তবে লালমনিরহাট, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
উত্তরের জনপদ থেকে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত বন্যা ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে। এ কারণে উত্তর থেকে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত ২০ থেকে ২২টি জেলা কমবেশি বন্যার কবলে রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ বন্যা মধ্যমেয়াদি। যা ২১ বা ২৪ জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। তবে শেষের দিকে কমতে পারে তীব্রতা। দুই অববাহিকায় বন্যার পানির চাপ পড়েছে মধ্যাঞ্চলে। ভাটির দিকে বানের পানির চাপও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মুন্সিগঞ্জ, বাঘাবাড়ী, আরিচা, মানিকগঞ্জ, গোয়ালন্দ, ভাগ্যকুল, মাওয়া, সুরেশ্বর থেকে শুরু করে চাঁদপুরের কাছাকাছি পর্যন্ত বানের পানির প্রবাহ ক্রমেই বাড়ছে। এসব স্থানে নদ-নদীতে ঘূর্ণি স্রোত সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ফেরিসহ নৌযান চলাচল ব্যাহত ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশ ও ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস মতে, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও এর সংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয় প্রদেশসমূহের অনেক স্থানে আগামী ২৪ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
নদ-নদীর বিপদসীমা পরিস্থিতি
গতকাল সর্বশেষ নদ-নদী প্রবাহ তথ্য অনুযায়ী, উত্তর জনপদের প্রধান অববাহিকা ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৫ সে.মি. ও চিলমারী পয়েন্টে ১২৫ সে.মি. ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা বাহাদুরাবাদে বিপদসীমার ১৪৫ সে.মি., ফুলছড়ি পয়েন্টে ১৩৮ সে.মি., সারিয়াকান্দিতে ১০৩ সে.মি., কাজিপুরে ৯২ সে.মি., সিরাজগঞ্জে ৫১ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আরিচায় পানি বেড়ে বিপদসীমার ৩৭ সে.মি. নিচে এসে গেছে।
উত্তর জনপদের কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১১৭ সে.মি. উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে পানি আবারও বেড়ে গিয়ে ঠিক বিপদসীমা বরাবর রয়েছে এবং কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা ছুইছুই করছে। গাইবান্ধায় ঘাগট নদী বিপদসীমার ৯১ সে.মি. ওপরে বয়ে যাচ্ছে।
মধ্যাঞ্চলেও বিস্তৃত বন্যার ফলে টাঙ্গাইলের এলাসিনে ধলেশ্বরী নদী বিপদসীমার ২৭ সে.মি. ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঘাবাড়িতে আত্রাই নদীর পানি ক্রমাগত বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার ৫ সে.মি. ওপরে বইছে।
ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের অববাহিকার পাশাপাশি পানি প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায়। এরমধ্যে পদ্মা নদী ভাটির গোয়ালন্দে গতকাল বিকেল পর্যন্ত আরও ৮ সে.মি. পানি বেড়ে গিয়ে মাত্র ৯ সে.মি. নিচে এসে গেছে। যা গত রাতের মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা রয়েছে। পদ্মার ভাটিতে পানি বেড়ে গিয়ে ভাগ্যকূলে বিপদসীমার ৪৪ সে.মি. ও সুরেশ্বরে ৭৪ সে.মি. নিচে প্রবাহিত হচ্ছে।
সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। তবে সুরমা ও কুশিয়ারা তিনটি পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছিল। মনু নদী দুটি পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে রয়েছে। খোয়াই নদী বাল্লা পয়েন্টে, পুরাতন সুরমা নদী দিরাইয়ে, সোমেশ্বরী নদী কলমাকান্দায়, কংস নদী জারিয়াজঞ্জাইলে বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে।
বগুড়া : যমুনা তীরবর্তী ৩ উপজেলায় পানি বন্দী মানুষের সংখ্যা লক্ষাধিক । এলাকার ২২২টি পুকুর ও মাছের খামার ভেসে যাওয়ায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে মাছ চাষীরা তাদের কোমর একেবারে ভেঙে গেছে।
দুর্গম চরাঞ্চলে ওষুধ, মোমবাতি, কেরোসিন, গো খাদ্যের তীব্র সংকট বিরাজ করছে । ডাকাত ও বিষাক্ত সাপের আতংকে ভুগছে মানুষ। মানুষ সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় আছে গৃহপালিত পশু নিয়ে। তাদের গবাদী পশু কোথায় রাখবে তা’ নিয়ে রয়েছে উদ্বেগে। অনেকে বাধ্য হয়ে সস্তায় গবাদী পশু বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে কোরবানীর বাজারকে ঘিরে পশু পালনকারীরা যে স্বপ্ন দেখছিল সেই স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় তার এখন ভিষন কাতর ।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে ৪ লাখ মানুষ বন্যা ও ভাঙনের সম্মুক্ষীণ হয়েছে। রৌমারীতে বাঁধ ভেঙে নতুন করে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রৌমারীর কর্ত্তিমারীতে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে পানিতে পরে সাইফুল ইসলাম (২৫) নামে এক যুবক নিখোঁজ হয়ে যায়। অপরদিকে উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নে রুনা বেগম (২৮), রুপা মনি (৮) ও হাসিবুল ইসলাম (৭) নৌকায় করে বন্যা দেখতে গিয়ে নৌকা ডুবিতে মারা যায়। এতে সুমন (৮) ও রুকুমনি (৮) নামে আরও দুই শিশু নিখোঁজ রয়েছে। কুড়িগ্রাম ও রংপুর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল যৌথভাবে উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে। এনিয়ে দু’দিনে জেলায় এক প্রতিবন্ধীসহ ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও আশ্রয়ের সঙ্কটে ভুগছেন তারা। চরাঞ্চলে গো-খাদ্যের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সারাদিন পানিতে চলাফেরা করায় বানভাসীরা পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এছাড়াও দিন মজুর শ্রেণির লোকেরা কর্মসংকটের কারণে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
গাইবান্ধা : গাইবান্ধা শহরের মুন্সিপাড়া, বানিয়ারজান, ডেভিট কোম্পানিপাড়া এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ফলে এসব এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। সদর উপজেলার ফারাজিপাড়া এলাকায় গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ সড়কের আধা কিলোমিটার অংশ ডুবে গেছে। ফলে এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। চারটি উপজেলার এক হাজার ২৪৬ হেক্টর জমির পাট শাকসবজি বীজতলা ও আউশ ধান, ২৮ হাজার ২৩০টি ঘরবাড়ি, ৯২ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা, চার কিলোমিটার বাঁধ ও ছয়টি কালভাট ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।
ইসলামপুর (জামালপুর) : জামালপুরে ইসলামপুরে উপজেলার ১২ ইউনিয়ন ও একটি পৌর সভার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় লাখো মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় দেড়লক্ষাধিক মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নতুন করে পৌর এলাকা আক্রান্ত হয়েছে। ৯০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
কাপাসিয়া (গাজীপুর) : গাজীপুরের কাপাসিয়ায় শীতলক্ষ্যা নদীর উপর নির্মিত ‘ফকির মজনু শাহ্ সেতু’র পূর্বপাশের বেড়িবাধের তরগাঁও অংশ ভেঙে যাচ্ছে। অব্যাহত ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে সেতুটি। এতে ব্রীজের আশপাশের বসবাসকারি লোকজনের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।
পীরগাছা (রংপুর) : বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও দুর্গত এলাকায় সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে। খাদ্য সংকটের পাশাপাশি বন্যার পানিতে উজান থেকে বিভিন্ন প্রজাতির বিষাক্ত সাপ ভেসে আসায় বানভাসি লোকজন ভয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।