পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক প্রেসিডেন্ট মরহুম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দাফন হবে আজ। বাদ জোহর বনানীর সেনা কবরস্থানে তার লাশ দাফনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে তার লাশ হেলিকপ্টারে রংপুরে নেয়া হবে। রংপুর ঈদগাহ মাঠে তার শেষ (চতুর্থ) জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এ নিয়ে রংপুরে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
তবে রংপুর বিভাগের জাতীয় পার্টির নেতারা এরশাদের দাফন চাচ্ছেন রংপুরের মাটিতে। তাদের দাবি রংপুরের ‘পল্লী নিবাসে’ই এরশাদকে দাফন করতে হবে। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ‘এরশাদ অনেক আগেই রংপুরের পল্লী নিবাসে তাকে দাফন করার অছিয়ত করে গেছেন’ জানিয়ে রংপুর সিটি মেয়র ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেছেন, রংপুর থেকে এরশাদের লাশ ঢাকায় নেয়ার চেষ্টা হলে লাখো জনতা বুকের রক্ত দিয়ে তা প্রতিহত করবে। এরশাদের লাশ রংপুর থেকে কোথাও যাবে না। এটা আমাদের স্পষ্ট হুঁশিয়ারি। এ দিকে জাতীয় পার্টির কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃর্ণমূল পর্যায়ের নেতারা সেনা কবরস্থানের বদলে বাইরে কোথাও এরশাদের লাশ কবরস্থ করার দাবি জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরশাদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে রংপুর বিভাগের ৮ জেলার উপজেলা, ইউনিয়ন এবং গ্রাম পর্যায়ে ব্যাপক মাইকিং করা হচ্ছে। রংপুর ঈদগাহ মাঠে এরশাদের নামাজে জানাজায় যাতে লাখ লাখ লোকের সমাগম ঘটে সে লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ মুখিয়ে আছেন তাদের প্রিয় ছাওয়াল এরশাদকে এক নজর দেখে বিদায় জানানোর জন্য। গতকালও রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের নেতাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মোস্তাফিজার রহমানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন মহানগর সম্পাদক এস এম ইয়াসির, পঞ্চগড় জেলা জাপা সভাপতি সালেক, রাজশাহী বিভাগের পক্ষে বগুড়া জেলা জাপা সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুখ হোসেন, গাইবান্ধা জেলা সভাপতি আব্দুর রশীদ সরকার, ঠাকুরগাঁও জেলার সদস্য সচিব আলী রাজু স্বপন, দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী, দিনাজপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক আহাম্মেদ আলী, সাবেক এমপি শাহানারা বেগম, পীরগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবার রহমানসহ অর্ধশতাধিক নেতা। সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এরশাদকে রংপুরে কবরস্থ করার। তারা তাদের সিদ্ধান্ত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ এবং মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাকে জানিয়ে দিয়েছেন।
সংসদ ভবনে দ্বিতীয় জানাজা
জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দ্বিতীয় জানাজা গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজায় প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, সংসদের ডিপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী ছাড়াও জাতীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতারা জানাজায় অংশ নেন। জানাজায় ইমামতি করেন সংসদ সচিবালয় মসজিদের ইমাম আবু রায়হান। জানাজার পর বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এরশাদের লাশে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান। প্রথমে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ মরহুমের লাশে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ ছাড়া স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষে সংসদের সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় লাশ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় নেয়া হয়। এ সময় এরশাদের ছোট ভাই ও জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের, দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাসহ দলের এমপিরা উপস্থিত ছিলেন। রওশন এরশাদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে স্বামীর পক্ষে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
কাকরাইলের দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান
সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় নামাজে জানাজার পর এইচ এম এরশাদের লাশ রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে আনা হয়। সেখানে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান দলের নেতাকর্মীরা। সোমবার বেলা ১১টার পর কাকরাইলের দলীয় কার্যালয়ের সামনে লাশবাহী ফ্রিজার ভ্যানে লাশ নিয়ে আসা হয়। সেখানে নেতাকর্মীদের দেখার জন্য দীর্ঘ ৩ ঘণ্টা রাখা হয়। দলের নেতাকর্মীরা একে একে নেতার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। দলের বাইরেও এরশাদকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।
এর আগে কেন্দ্রীয় কার্যালয়েল সামনে সকাল থেকে তৃণমূলের নেতকর্মীরা এসে ভিড় করেন। পুরো কাকরাইল-বিজয়নগর এলাকায় যেন শোকের ছায়া নেমে আসে। বিভিন্ন জেলা থেকেও নেতারা এরশাদকে শেষ দেখা দেখতে আসেন। কুমিল্লার মুরাদনগর আন্দিকোট ইউনিয়নের জাপা সভাপতি আবুল কালাম শেষবারের মতো প্রিয় নেতাকে দেখতে এসে বলেন, ৪০ বছর ধরে জাপার রাজনীতি করি, স্যারকে কখনো কাছ থেকে দেখিনি। এখন এমনিভাবে দেখা হবে, কে জানত? জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে গণদল নামে নতুন দল গঠন করেছেন মুক্তিযোদ্ধা এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ছিলেন। ঐক্যফ্রন্টের এই নেতা বলেন, এরশাদ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করা এবং উপজেলা পরিষদ গঠন করার জন্যই ইতিহাসের পাতায় বেঁচে থাকবেন। পিরোজপুরের নজরুল ইসলাম বলেন, তিন মাস আগে দেখা হয়েছিল। তিনি সব সময় বলতেন, তোমরা শান্ত থাকো। দল ঠিক রাখতে হলে সবাইকে ধৈর্যশীল হতে হবে। দিনাজপুরের চিরিরবন্দর থানার স্থানীয় ওয়ার্ডের জাপা সেক্রেটারি মাকসুদুর রহমান বলেন, স্যার তো আমাদের উত্তরবঙ্গের সন্তান। অসুস্থ অবস্থাতে স্যার রংপুর গিয়েছিলেন, সেখানেই তাকে শেষবার দেখেছিলাম। স্যার চলে যাবেন, জানতাম। কিন্তু মন তো মানছে না।
এরশাদকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলা থেকে এসেছেন নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের স্যার আমাদের অভিভাবক ছিলেন। তিনি ছিলেন আমাদের পিতার মতো। তাকে হারিয়ে আমরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছি। আমি বিশ্বাস করি, জাতীয় পার্টির প্রতিটি নেতাকর্মী স্যারের শেষ নির্দেশগুলো মেনে চলে ঐক্যবদ্ধ থাকবে। আর আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে পরপারে স্যারের রূহ শান্তি পাবে। নোয়াখালীর জাতীয় পার্টির কর্মী শামসুদ্দিন আহমদ বলেন, আমাদের স্যার সব সময় জাতীয় পার্টিকে সন্তানের মতো লালন করেছেন। জাতীয় পার্টি ও এর প্রতিটি কর্মী ছিল তার সন্তান। স্যার, আমাদের সব সময় ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন। আমরা আশা করি, আগামী দিনেও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা এরশাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকবে।
জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন জি এম কাদের, মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মীর আবদুস সবুর আসুদ, সাঈদুর রহমান টেপা, আলমগীর শিকদার লোটন, লিয়াকত হোসেন খোকা প্রমুখ।
বায়তুল মোকাররমে তৃতীয় জানাজা
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের তৃতীয় নামাজে জানাজা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বাদ আসর তার এই জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজা পড়ান বায়তুল মোকাররমের খতিব মিজানুর রহমান। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহসহ দেশের আলেম ওলামা, মুসুল্লি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন নেতাকর্মী, বিভিন্ন পেশাজীবী এবং জাতীয় পার্টির নেতারা জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। এ সময় জাপার মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা এরশাদের ব্যক্তিগত ও কর্মজীবনের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো তুলে ধরেন। এরশাদ জীবনে কারও সঙ্গে কোনো ধরনের খারাপ আচরণ করে কষ্ট দিয়ে থাকলে, তা ক্ষমা করার অনুরোধ জানান। জি এম কাদের বলেন, দেশ, জাতি, ইসলাম ধর্ম ও সাধারণ মানুষের কল্যাণে এরশাদের অনেক অবদান আছে। জানাজার পর মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
জানাজা শেষে লাশ পুনরায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) হিমঘরে রাখার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।