Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আর্জেন্টিনার প্রতিশোধ ছাপিয়ে মেসির লাল কার্ড

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম


কোপা আমেরিকার গত দুই আসরের ফাইনালের মঞ্চায়ন এবার হয়েছে তৃতীয় স্থান নির্ধারনী ম্যাচে। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে আর্জেন্টিনা নিয়েছে মধুর প্রতিশোধ। তবে ম্যাচে জয় পরাজয়কে ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে লিওনেল মেসির লাল কার্ড।

সাও পাওলোর কারিস্থিয়ান্স স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় পরশু রাতে চিলিকে ২-১ গোলে হারায় লিওনেল স্কালোনির দল। সার্জিও আগুয়েরো ও পালো দিবালার গোলে প্রথমার্ধে এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে আর্তুরো ভিদালের সফল পেনাল্টি কিকে ব্যবধান কমায় চিলি।
দুই দলেরই শিরোপার আশা শেষ হয়েছিল আগেই। তবে অনেক হিসাব মেটানোর বাকি ছিল আর্জেন্টিনার। টানা দুইবার এই চিলির কাছেই ফাইনালে টাইব্রেকারে হেরে হৃদয় ভাঙে মেসিদের। চিলিও ছিল চুল পরিমান ছাড় না দেয়ার প্রতিজ্ঞায়। দু’দলের খেলোয়াড়দের যুদ্ধংদেহী মনোভাব ও মেসির এই লাল কার্ড ম্যাচকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়।

চিলির শারীরিক ফুটবলের কাছে এদিন আর্জেন্টিনা ছিল অসহায়। বিশেষ করে প্রথমার্ধে। তবে বলের দখল কম থাকলেও গোলের সুযোগ তৈরিতে এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনাই। সেমিফাইনালে ব্রাজিলের কাছে হারা ম্যাচে রেফারিং নিয়ে অফিসিয়ালি অভিযোগ করা আর্জেন্টিনা এদিনও বেশ কয়েরকবার রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বলি হয়।

বিশেষ করে ম্যাচের ৩৭তম মিনিটে রেফারি মারিও দিয়াজ দে রিভার যা করলেন তা ছিল অবিশ্বাস্য! চিলির বিপদসীমায় বল দখলের লড়াইয়ে গ্যারি মেডেলকে পিছন থেকে ধাক্কা মারেন মেসি। কিন্তু তা ইচ্ছাকৃত নাকি অনিচ্ছাকৃত তা পরিষ্কার বোঝা যায়নি। এর প্রতিক্রিয়ায় ঘুরে দাঁড়িয়ে মেসিকে শরীর দিয়ে গুতোতে থাকেন মেডেল। মেসি প্রতিক্রিয়া জানানোর বিপরীতে দুই হাত উঁচু করে এক দুই পা করে পিছিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু রেফারি এসে ভিএআরের সহায়তা না নিয়েই সরাসরি লাল কার্ড দেখান দুজনকেই। এসময় দুই দলের খেলোয়াড় ও রেফারির মধ্যে বেশ কিছু সময় বাকবিতÐা চলে।

ম্যাচ শেষে বিষ্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আর্জেন্টিনা কোচ স্কালোনি, ‘মেসি যে লাল কার্ড পেলো, আমি বুঝতে পারছি না তার অপরাধটা কী?’ আর ক্ষুব্ধ মেসি তো পদক নিতে পুরস্কার বিতরনী মঞ্চেই আসেননি। সেমি-ফাইনালে ব্রাজিল ম্যাচের মত এদিনও সংবাদ সম্মেলনে রেফারির প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন পাঁচবারের বর্ষসেরা, ‘ম্যাচে অনেক ঘটনা ঘটেছে। আমি মনে করি রেফারি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। আমাদের দুজনকে হলুদকার্ড দিলে সবকিছু নিষ্পত্তি হয়ে যেত।’ একই মন্তব্য প্রতিপক্ষের গোলদাতা ভিদালেরও, ‘এটা গুরুতর কিছু ছিল না।’ ‘এই ঘটনায় কোণো ভাবেই লাল কার্ড প্রত্যাশিত নয়।’

রেফারি তো বটেই পুরো আয়োজনই দুর্নীতিগ্রস্থ বলে মত প্রকাশ করেন মেসি, ‘আমি প্রচÐ ক্ষুব্ধ। ... আমি যেটা স¤প্রতি বলেছি-দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখানে অনেক দুর্নীতি হয়েছে, আমরা এই অনুভূতি নিয়ে চলে যাচ্ছি যে রেফারিরা আমাদেরকে ফাইনালে যেতে দেয়নি। আমরা আরও ভালো কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিলাম।’ সেমি-ফাইনালে ব্রাজিল ম্যাচের পর রেফারিকে কড়া সমালোচনা করার পর ও দক্ষিন আমেরিকার সর্বোচ্চ ফুটবল সংস্থা কনমেবলে আনুষ্ঠানিক অভিযোগও করে আর্জেন্টিনা। এই লাল কার্ড তারই প্রতিক্রিয়ার ফল কিনা সরাসরি জিজ্ঞেস করা হলে আর্জেন্টিনা অধিনায়ক বলেন, ‘হ্যাঁ, দুর্ভাগ্যজনকভাবে হ্যাঁ।’ ব্রাজিলকে শিরোপা জেতাতেই দুর্নীতি হচ্ছে বলে মনে করেন মেসি, ‘আমার মনে হয় কোনো সন্দেহ নেই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমি মনে করি এটা (শিরোপা) ব্রাজিলের জন্য প্রস্তুত করা আছে।’

এদিন আর্জেন্টিনার খেলায় উন্নতির ছাপ ছিল স্পষ্ট। মেসি-আগুয়েরোর সঙ্গে একাদশে সুযোগ পান পাওলো বিদালা। এই ত্রয়ী প্রথমার্ধেই দলকে এগিয়ে নেন দুই গোলে। ম্যাচের ১২তম মিনিটে মেসির বুদ্ধিদীপ্ত পাসে গোলরক্ষককে কাটিয়ে দলকে এগিয়ে নেন আগুয়েরো। দশ মিনিট বাদেই লো সেলসোর বাড়ানো বল দারুণভাবে দখলে নিয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন দিবালা। ৩২তম মিনিটে ব্যবধান ৩-০ করার সুবর্ণ সুযোগ ছিল দিবালার সামনে। মেসির চিপ শটে বাড়ানো বল ঠিকমত ভলি করতে পারেননি জুভেন্টাস ফরোয়ার্ড।

আর্জেন্টিনা দুই গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরই আসে দুই দলের দশ জনের দলে পরিণত হওয়ার সেই মুহূর্ত। আর্জেন্টিনার জার্সিতে মেসির এটি দ্বিতীয় লাল কার্ড। ২০০৫ সালে হাঙ্গেরির বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে দেখেছিলেন প্রথম লাল কার্ড, যা ছিল তার অভিষেক ম্যাচও।
ম্যাচের ৫৭তম মিনিটে আবারও রেফারির বাজে সিদ্ধান্তের বলি হয় আর্জেন্টিনা। রিপ্লে দেখে মনে হয়েছে ফাউল ডি বক্সের সামান্য বাইরে হয়েছে। রেফারি ভিএআরের সহায়তা নিয়েও পেনাল্টির বাঁশি বাজান। রেফারির সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা। শেষ দিকে আগুয়েরো-ডি মারিয়া জুটি বেশ কয়েকবার ত্রাস সৃষ্টি করলেও জালের দেখা পাননি।

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ